Published : 19 Jun 2025, 10:01 PM
সন্ত কবি সুরদাস ছিলেন ১৫শ শতাব্দীর এক অন্ধ সাধক, কবি ও সংগীতজ্ঞ। তিনি ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে উৎসর্গ করে অসংখ্য ভক্তিমূলক গান রচনা করেন। এক উচ্চবর্ণ ব্রাহ্মণ পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।
সূরদাসের জন্ম ও মৃত্যুর সময় নিয়ে মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেন, তিনি ১৪৭৯ (কিংবা ১৫২৯) সালে দিল্লির কাছাকাছি সিরি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এবং জন্ম থেকেই অন্ধ ছিলেন। অনেকের মতে, তাঁর জন্মস্থল ছিল ব্রজ, অর্থাৎ উত্তর ভারতের মথুরা জেলার সেই পবিত্র স্থান যেখানে শ্রীকৃষ্ণের লীলাখেলা ঘটেছিল।
পরিবারে দারিদ্র্যের কারণে তাঁকে উপযুক্ত পরিচর্যা দেওয়া সম্ভব হয়নি। ফলে মাত্র ছয় বছর বয়সে (অন্য মতে আঠার বছর বয়সে) সুরদাস বাড়ি ছেড়ে একটি ঘুরে বেড়ানো ভক্ত-সঙ্গীতজ্ঞ দলের সঙ্গে যোগ দেন। একটি জনশ্রুতি অনুযায়ী, এক রাতে তিনি স্বপ্নে কৃষ্ণকে দেখেন, যিনি তাঁকে বৃন্দাবনে গিয়ে তাঁর প্রশংসায় জীবন উৎসর্গ করতে বলেন।
সুরদাস জন্মান্ধ ছিলেন কি না তা নিয়েও মতভেদ রয়েছে। বহু হিন্দি লেখক ও সমালোচক মনে করেন তিনি জন্মান্ধ ছিলেন না, বরং স্বেচ্ছায় অন্ধত্ব বরণ করেছিলেন। চৌরাশি বৈষ্ণবন কি বারতা গ্রন্থে গোসাইন গোকুলনাথ লিখেছেন সুরদাস নিজেই তাঁর চোখ নষ্ট করেন।
এক কিংবদন্তি অনুসারে, চিন্তামণি নামক এক নর্তকীর প্রেমে পড়ে সুরদাস এমনভাবে অন্ধ প্রেমে আবদ্ধ হন যে তাঁর চেতনা হারিয়ে ফেলেন। এক রাতে, পিতার শ্রাদ্ধ ছেড়ে তিনি ঝড়-বৃষ্টির মধ্যেও নদী পার হয়ে চিন্তামণির বাড়ি পৌঁছান—একটি মৃতদেহকে কাঠ ভেবে সাঁতরে গিয়ে এবং এক বিশাল সাপকে দড়ি ভেবে দেয়াল টপকে যান। চিন্তামণি তাঁর এই আত্মবিস্মৃত অবস্থায় স্তম্ভিত হন এবং বলেন, যদি ঈশ্বরদর্শনের এমন আকুলতা থাকত, তবে সুরদাস বহু আগেই পরমসুখ পেতেন।
এই বাক্য সুরদাসের অন্তরে গভীর রেখাপাত করে। তিনি চিন্তামণিকে গুরু হিসেবে মেনে নেন এবং ঈশ্বর সন্ধানে বেরিয়ে পড়েন। কিছুদিন পর তিনি এক সুন্দরী যুবতীর প্রতি আকৃষ্ট হলে তাঁর কামনার উৎস হিসেবে চোখকে দায়ী করে চোখে কাঁটা বিদ্ধ করেন।
এরপর সুরদাস সন্ন্যাসীজীবন গ্রহণ করে কৃষ্ণের প্রশংসা ও দর্শনের আকুলতায় জীবন অতিবাহিত করতে থাকেন। একটি কিংবদন্তি অনুযায়ী, একদিন বনভ্রমণে কৃষ্ণ রাখাল বালকের ছদ্মবেশে তাঁকে বৃন্দাবনে নিয়ে যান এবং সেখানেই তাঁকে ঈশ্বরদর্শন ও দৃষ্টিশক্তি দেন।
তিনি মথুরার যমুনার তীরে গউঘাটে গিয়ে আশ্রয় নেন এবং সেখানেই কবিতা ও সংগীত রচনার কাজ শুরু করেন। গউঘাটে ভক্তি আন্দোলনের এক মহান দার্শনিক গুরু বল্লভাচার্যের সঙ্গে এক আকস্মিক সাক্ষাৎ তাঁর জীবনকে আমূল বদলে দেয়। বল্লভাচার্য সুরদাসকে হিন্দু দর্শন ও ধ্যানের পাঠ দেন এবং তাঁকে আধ্যাত্মিকতার পথে পরিচালিত করেন। তিনি সুরদাসকে শুদ্ধাদ্বৈত দর্শন ও কৃষ্ণলীলা-ভিত্তিক ভক্তিপথে দীক্ষিত করেন। সুরদাস 'শ্রীমদ্ভাগবতম' মুখস্থ বলতে পারতেন এবং সংগীতে পারদর্শী ছিলেন, তাই তাঁর গুরু তাঁকে পরামর্শ দেন যেন তিনি রাধাকৃষ্ণের লীলার গীতিকাব্য রচনা করেন। সুরদাস বৃন্দাবনে গুরুর সঙ্গে বসবাস শুরু করেন, বল্লভাচার্য তাঁকে নিজ ধর্মীয় সম্প্রদায়ে দীক্ষা দেন এবং পরে গোবর্ধনের শ্রীনাথ মন্দিরে তাঁকে প্রধান ভক্তসঙ্গীত শিল্পী হিসেবে নিযুক্ত করেন। তাঁর পুত্র বিত্তলনাথ সূরদাসকে অষ্টছাপে অন্তর্ভুক্ত করেন।
সুরদাসের গ্রন্থসংখ্যা পঁচিশটি বলে জানা যায়। তার প্রধান পাঁচটি রচনা হলো:
১. সুরসাগর
২. সুর সারাবলী
৩. সাহিত্য লহরী
৪. নল-দময়ন্তী
৫. ব্যাহালা
এইসবের মধ্যে সুরসাগর তাঁর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হিসেবে বিবেচিত, যাতে ১১০৭টি পদ রয়েছে এবং এটি ১২টি অধ্যায়ে বিভক্ত। ত্রৈলোক্যবিদিত কবি তুলসীদাস যেমন অবধি/আওয়াধি ভাষার মর্যাদা বৃদ্ধি করেন, সুরদাস ব্রজভাষায় কীর্তন ও পদগান রচনা করে সেটিকে উচ্চস্তরে উন্নীত করেন।
তাঁর কবিতায় বিশেষভাবে স্থান পায় শিশুকৃষ্ণের দুরন্তপনা ও যশোদার মাতৃস্নেহ। এই মাতৃত্ব ও ঈশ্বরত্বের মিলন পাঠকের মনে নিবিড় ভক্তির সঞ্চার করে। সুরসাগর-এর একটি পদে আছে: যশোদা যখন কৃষ্ণকে মাখনের দাগ দেখে বকেন, তখন তিনি নিষ্পাপ সুরে অস্বীকার করেন, যদিও মুখে মাখন লেগে থাকে!
সবচেয়ে আবেগময় অংশ হলো ভ্রমরগীত, যেখানে জ্ঞানী উদ্ভব নির্গুণ তত্ত্ব বোঝাতে চেষ্টা করেন, আর গোপীরা তাদের প্রেম ও ভক্তির মাধ্যমে যুক্তিকে অগ্রাহ্য করেন। সুরদাস এখানে ভক্তি ও জ্ঞানের দ্বৈতপথের তফাৎ স্পষ্ট করেন।
শেষ জীবনে সুরদাস ‘রাগ বিহাগরো’-তে মাত্র সাড়ে তিন লাইনের একটি পদ রচনা করেন—
“খঞ্জন নৈন রূপ রস মাত।” এর ভাবার্থ হলো, চঞ্চল খঞ্জনদৃষ্টির আকর্ষণীয় রূপ ও রস এমনই মোহময় যে, তা দেখে ও উপলব্ধি করে হৃদয় মত্ত হয়ে পড়ে প্রেম-ভক্তিতে।
এই পদ গাওয়ার পর তিনি সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন এবং মোক্ষলাভ করেন বলে বিশ্বাস করা হয়।
সুরদাস যুক্তিবাদকে পরিত্যাগ করে প্রেমপথে ভক্তিকে উৎসর্গ করেন—যা সুফিদের প্রেমের পথের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। তাঁর শ্রেষ্ঠ পদাবলি গীতিকাব্যের শ্রেষ্ঠ উচ্চতাকে ছুঁতে পেরেছে।
শিখদের ধর্মগ্রন্থ গুরু গ্রন্থ সাহিবে সুরদাসের একটি মাত্র বাণী অন্তর্ভুক্ত হয়েছে :
“ছাড় মন হর বিমুখন কো সঙ্গ।”
– অর্থাৎ: "হে মন! যাঁরা ঈশ্বর থেকে মুখ ফিরিয়েছে, তাঁদের সঙ্গ ত্যাগ কর।"
সুরদাসের দর্শন তখনকার যুগের প্রতিফলন। তিনি উত্তর ভারতে বিস্তৃত ভক্তি আন্দোলনের একজন প্রাণপুরুষ ছিলেন। এই আন্দোলন সাধারণ মানুষের আধ্যাত্মিক ক্ষমতায়নের একটি রূপ। দক্ষিণ ভারতে এই ধরনের গণ-আধ্যাত্মিক আন্দোলন শুরু হয়েছিল খ্রিস্টীয় প্রথম সহস্রাব্দে। উত্তর ভারতে এই আন্দোলন সপ্তদশ শতকে শক্তি অর্জন করে।
সুরদাস ব্রজভাষায় লিখতেন। এটি হিন্দির একটি উপভাষা। তখন অবধি এটি অশিক্ষিতদের ভাষা বলে গণ্য হত। তাঁর রচনাই প্রথম ব্রজভাষাকে উচ্চ মর্যাদার সাহিত্যিক ভাষায় পরিণত করে।
গুরু বল্লভাচার্যের প্রশিক্ষণের ফলে সুরদাস ছিলেন শুদ্ধাদ্বৈত দর্শনের (বা পুষ্টি মার্গ) প্রবক্তা।
সুরদাস কথিত ভক্তিমার্গটি হল "পুষ্টিমার্গীয় ভক্তি"। সুরদাসের মতে, ভগবানের নাম করাই পোষণ। এই ভক্তির দুই রূপ - সাধন ও সাধ্য। সাধ্য রূপে ভক্ত সবকিছু বিসর্জন দিয়ে ভগবানের শরণ নেয় এবং ভগবান স্বয়ং ভক্তের ভার গ্রহণ করেন।
ভক্তির দার্শনিক দিকটিও সুরদাসের কাব্যে প্রস্ফুটিত হয়েছে। এই দর্শন রাধাকৃষ্ণের রাসলীলা—দিব্য প্রেমনৃত্যকে আধ্যাত্মিক রূপকে রূপান্তরিত করে। এখানে আত্মার পরমেশ্বরের সঙ্গে মিলে যাওয়ার পরিবর্তে তাঁর কৃপায় জীবন পরিচালনার কথা বলা হয়। এই ভাবধারা কবীরের মতো পূর্বতন সাধকদের বিশ্বাসেরই সম্প্রসারণ।
সুরদাসের সুরেলা সংগীত ও চমৎকার কবিতা তাঁকে অসামান্য খ্যাতি এনে দেয়। তাঁর খ্যাতি সমগ্র ভারতে ছড়িয়ে পড়ে এবং মুঘল সম্রাট আকবরও তাঁক পৃষ্ঠপোষকতা দান করেন। জীবনের শেষ বছরগুলো সুরদাস কাটিয়েছেন ব্রজে, যেখানে তিনি ভক্তিগীতি ও ধর্মীয় আলোচনার বিনিময়ে প্রাপ্ত দানেই জীবনযাপন করতেন। তাঁর মৃত্যু হয় আনুমানিক ১৫৮৬ সালে।
বারাণসীতে তার সমাধি মন্দির রয়েছে।
সু র দা সে র ক য়ে ক টি গী তি ক বি তা
জাগো, কৃষ্ণ, জাগো
_________________
জাগো, কৃষ্ণ, জাগো —
খুলেছে পদ্মের পাপড়ি,
নুয়ে পড়েছে শাপলা ফুল,
লতাগুল্ম ছেড়ে গেছে ভ্রমরদল।
মোরগ ডাকছে,
গাছে গাছে পাখিরা কিচিরমিচির।
গাভীরা হাম্বা ডাকছে গোয়ালে,
দৌড়ে যাচ্ছে বাছুরদের পিছু পিছু।
সূর্য ওঠার আগেই মিলিয়ে যাচ্ছে চাঁদ।
মানুষ উঠেছে ঘুম ভেঙে,
নারী-পুরুষ গেয়ে উঠেছে আনন্দের গান।
হে পদ্মহস্ত কৃষ্ণ, জাগো —
দিন তো প্রায় এসেই গেল!
হে হরি, সকাল হয়েছে
____________________
হে হরি, সকাল হয়েছে — জাগো,
ঘটিতে রাখা আছে জল — মুখ ধোয়ার জন্য।
একদম তাড়াহুড়োর দরকার নেই —
সময়ের কোনো অভাব নেই এখন।
তোমার প্রাতরাশে যা ইচ্ছে তাই এনে দেব —
শুকনো ফল, মাখন, মধু আর রুটি।
সুরদাস বলেন —
যশোদার হৃদয় আনন্দে উপচে পড়ে,
যখন তাঁর নয়ন পড়ে প্রিয় পুত্র কৃষ্ণের মুখে।
কৃষ্ণ এলেন রাধার কাছে
_____________________
কৃষ্ণ বললেন,
"ও শুভ্রসুন্দরী, তুমি কে?
কোথায় থাকো? কার কন্যা তুমি?
ব্রজের পথে তো কখনও তোমায় দেখিনি।"
রাধা বললেন,
"এই পথে আমার আসার দরকার কী?
আমি আমার দোরগোড়াতেই খেলি।
তবে শুনেছি নন্দের পুত্রটি
দই-মাখন চুরি করে বেড়ায়!"
কৃষ্ণ বললেন,
"শোনো, আমি কেনই বা তোমার কিছু চুরি করব?
এসো, আমরা একসঙ্গে খেলি।"
সুরদাস বলেন:
মধুময় কথার জাদুতে
চতুর প্রেমরাজ কৃষ্ণ
রাধাকে বিমোহিত করলেন
আর তাকে শান্ত করলেন।
কৃষ্ণের কর্ম
___________
কৃষ্ণের লীলার শেষ নেই —
তিনি তাঁর প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে গোকুলে গো রাখলেন;
দেবতাদের অধীশ্বর এবং ভক্তদের প্রতি দয়ালু,
তিনি নৃসিংহরূপে এসে হিরণ্যকশিপুকে বধ করেন।
বলির তিনটি জগত জয় করে বসার সময়,
তিনি ভিক্ষা চেয়ে মাত্র তিন পা জমি নিলেন,
আর সেই তিন পায়েই তার সব জয়কৃত অঞ্চল দখল করলেন।
এইরূপ অসংখ্য লীলার বিবরণ বেদ ও পুরাণে রয়েছে,
যার কথা শুনে সুরদাস সেই প্রভুর চরণে বিনীতভাবে নত হন।
প্রভু, আমার দোষ তুমি দেখো না
____________________________
প্রভু, আমার অপরাধ তুমি মনে রেখো না,
তোমার নামই তো সমদর্শী – তুমি চাইলে পার করে দিতে পারো।
একই লোহা কোথাও পূজায় ব্যবহৃত হয়, কোথাও জল্লাদের হাতে,
পরশপাথর যেমন কোন গুণ বা দোষ দেখে না –
সবকিছুকেই সে সোনা বানায়।
একটি নদী, একটি নালার মতো—জল হয়তো ময়লা,
কিন্তু একসঙ্গে মিললে তারা এক নামে পরিচিত হয়, 'সুরসরী' – দেবনদী।
এক প্রাণ, এক ব্রহ্ম – সূর ও শ্যামের মধ্যে লড়াই নেই,
এইবার আমায় পার করো – না হলে রক্ষার শপথ ত্যাগ করো।
চোখ চায় হরির দর্শন
__________________
আমার চোখ তৃষ্ণার্ত হরির দর্শনের জন্য,
দিনরাত সে চায় পদ্মনয়ন প্রভুকে দেখতে – বিষণ্ন হয়ে থাকে।
তিনি কেশর তিলক পরেন, মুক্তার মালা পরেন,
বৃন্দাবনের অধিবাসী,
ভালোবেসে ফেলেও আমাদের ত্যাগ করেন,
ঘাসের মতো ফেলে দেন, গলায় ফাঁস ঝুলিয়ে দেন।
কে আর জানে অন্যের মনের কথা?
লোকে হাসে আমাদের দেখে।
কিন্তু হে সুরদাসের প্রভু –
তোমার দর্শন ছাড়া আমি কাশী গিয়ে জীবন ত্যাগ করব।
সে তাঁকে পেয়েছে, তবু রাধার অবিশ্বাস
________________________________
সে তাঁকে পেয়েছে, ঠিকই, কিন্তু রাধা বিশ্বাস করতে পারে না
যে সে যা দেখছে তা সত্যি—
তার প্রভুর চন্দ্রসম মুখ।
তার দৃষ্টি স্থির, কিন্তু মন অচল,
চোখ দুটি বন্ধ হতে চায় না;
তার বুদ্ধি যুক্তির ঝড়ে আক্রান্ত—
এ কি স্বপ্ন? নাকি সত্যিই তার প্রভু?
তার চোখ ভরে যায় সৌন্দর্যের আনন্দে,
তারপর সেই সৌন্দর্য লুকিয়ে রাখে হৃদয়ে:
যেমন মৌমাছিরা মধু থেকে দূরে থাকতে পারে না
তারা বারবার উৎস থেকে ভাণ্ডারে ছুটে চলে।
মাঝে মাঝে সে চিন্তা জড়ো করে, ভাবে:
“তিনি কাকে ভালোবাসেন? কে এই হরি?”
কারণ প্রেম, সুর বলেন, অদ্ভুত এক জিনিস।
এটি মনে ঢেউ তোলে—সমস্ত স্থিরতা ভেঙে দেয়।
কৃষ্ণ জাগো
___________
কৃষ্ণ জাগো, দিন এসেছে:
তোমার চোখ দুটি পদ্মের মতো গভীর ও বিস্তৃত,
যেমন প্রেম-আকৃতির হ্রদে দুটি রাজহংস,
তোমার মুখের মোহনীয় সৌন্দর্যকে লক্ষ লক্ষ কামদেবও হার মানে।
পূর্বদিকে সূর্য উঠেছে,
রক্তিম গোলকের মতো,
রাত্রি বিদায় নিচ্ছে,
চাঁদের আলো মলিন হয়ে এসেছে,
দীপগুলি নিভে যাচ্ছে,
তারকারা মিলিয়ে যাচ্ছে,
যেমন প্রজ্ঞার উজ্জ্বল আলো
ইন্দ্রিয়-ভোগের ক্লান্তি দূর করে,
আশার আলো বিতাড়িত করে
হতাশা ও সংশয়ের অন্ধকার।
শোনো, পাখিরা উল্লাসে গান গাইছে –
হে প্রিয় শিশু,
আমার প্রাণের প্রাণ,
আমার একমাত্র ধন,
হে আদরের বালক,
গীতিকারেরা তোমার প্রশংসায় গাইছে,
বলছে, ‘জয়! জয়!’
পদ্মগুচ্ছ ফুটে উঠেছে,
ভ্রমরেরা মধুর গুঞ্জনে পদ্ম ছেড়ে যাচ্ছে,
যেন ভক্তরা জাগতিক বন্ধন ত্যাগ করে
তোমার প্রেমে নিমগ্ন হয়ে
তোমার নাম উচ্চারণ করে চলেছে।
মায়ের ভালোবাসা-ভরা আহ্বান শুনে
করুণার প্রভু কৃষ্ণ উঠে দাঁড়ালেন বিছানা ছেড়ে;
সারা বিশ্বের দুঃখ লোপ পেল,
মায়ার জাল ছিন্ন হলো।
সুরদাস বলেন –
“তাঁর পদ্মমুখ দর্শনে মোহ পালাল,
সব দ্বৈততা ও সন্দেহ নষ্ট হলো,
আর আমি গোবিন্দে খুঁজে পেলাম চিরন্তন আনন্দ।”
[প্রথম ও শেষ কবিতা দুটি মূল একই কবিতার দুটি ইংরেজি অনুবাদ অবলম্বনে অনূদিত।]