Published : 24 Jun 2020, 07:31 PM
পৃথিবীটাকে ঘোড়া বানিয়ে ছুটে চলেছেন ঈশ্বর, আকাশগঙ্গা পার হওয়ার সময় দেখলেন আরো অসংখ্য অপূর্ব গ্রহ-নক্ষত্র, তিনি অবাক হলেন, এই সব কে বানালো? পরখ করে দেখলেন সেগুলোও আসলে একেকটা ঘোড়া। বসে আছে একেকজন সওয়ারী। ঈশ্বর রেগে সিংহের মতো গর্জন করলেন, কিন্তু, শূন্যে তার ধ্বনি বেশি দূর গেল না। এবার ঈশ^র ভারসাম্য হারিয়ে ফেললেন, পাগলা বুড়োর মতো রেগেমেগে মাথার চুল ছেঁড়া শুরু করলেন। এক পর্যায়ে ঘোড়া থেকে নেমে পাছায় কষে একটা লাথি মারলেন। ঘোড়াটা ছুটে চলল দ্বিগুণ বেগে মালিককে পথে ফেলে রেখে।
স্লিপিং ওয়াকার
সারাদিন আমি ঘুমাই, ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে হাঁটি, বাজারে যাই, অফিস করি, ঘুম আমার ছাড়ে না। আমার কি দোষ বলুন? বাজারে গিয়ে দেখি, লোকজন নেই, পসরা সাজানো, দোকানি নেই, ব্যাগ ভরে জিনিস নিয়ে ফিরি কেউ কিছু বলেনা, রাস্তায় যাই, দেখি কোনো জনমানুষ নেই, বিরান, মনে হয়, পৃথিবীতে দ্বিতীয় কোনো মানুষ নেই, মাঝেমধ্যে দুএকজন পাগলের দেখা মেলে, ওরা আমাকে দেখে হাসে, আমি ভয়ে দৌড়ে ওদের থেকে দূরে থাকি, পাছে আমাকে কামড়ে দেয়! পাগলদের তো কামড়ানোর অভ্যাস, দৌড়টা দীর্ঘ হলে আমি ফুল বাগানের মধ্যে চলে আসি, আসলে এটা একটা কবরস্থান, সারি সারি ফুল দেখে দূর থেকে মনে হয়েছিল বাগান, অফিসে গিয়ে দেখি, পৃথিবীতে কোনো সমস্যা নেই, কোথাও কোনো দুঃসংবাদ নেই, দুর্ঘটনাও ঘটেনি, খবরের কাগজে ভরে থাকে পাতার পর পাতায় সুসংবাদ, ঘুনপোকারা কাঠকাটা ভুলে গেছে, মাছরাঙা হয়ে গেছে তৃণভোজী, শ্বাপদ-বেজিতে সখ্যতা, বজ্রমেঘেরা ভুলে গেছে সংঘর্ষ, ঈশ^র অনেক আগেই মারা গেছেন,
শূকর ছানা
এতোদিন নিজেকে একটা কুকুর ছানা ভাবতাম। এ নিয়ে আমার কোনো খেদ ছিল না। আদতে মানুষ একটা প্রাণিই তো, এর বেশি কিছু সে হতে পারেনি। ক্ষুধাই মূলত তাকে পশুতে আটকে রেখেছে। আমি যে চাকরি করি তা যে কোনো প্রাণিকে দিয়ে করানো সম্ভব। মূলত বাড়ি পাহাড়া দিয়ে আমার পেট চলে। প্রাচীন কাল থেকে এই কাজটা কুকুরেরা সবচেয়ে ভালো করতে পারে। এখন মানুষ কুকুর পোষে না, মানুষ পোষে, আমিও পোষ মানি।
হঠাৎ আমাকে শূকর ছানা বলে গালি দিয়েছে। এর পর থেকে মনটা ভীষণ খারাপ। আমি কি এতোদিন ভুল চিন্তা নিয়ে বেঁচে আছি? আদতে আমি একটা শূকর ছানা ছাড়া আর কিছুই না।
শয়তানের বশ্যতা
কাল রাতটা দুঃস্বপ্নের মতো মনে হয়। শেষ রাতে শুতে যাবো, হঠাৎ দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ। চমকে গেলাম, এতো রাতে কে? নিশ্চয় কোনো বিপদগ্রস্ত ব্যক্তি। দরজা খুলে দেখি, বিকটাকার চেহারার এক ব্যক্তি। জোর করে ঘরে ঢুকে গেল। মুহূর্তে আমার হাত-পা বেঁধে ফেলল। হাতে ছিল একটা ধারালো ছুরি। আমার গলায় ধরে বলল, 'একটি শর্তে তুই বাঁচতে পারিস। নয়তো আজ তোকে মেরেই ফেলব।' আমি বললাম, 'কী শর্ত?' খনখনে গলায় সে বলল, 'আজ থেকে তোর সব কর্মের ফল আমায় দিতে হবে। কর্ম তোর, ফলাফল ভোগ করবো আমি।' আমি বললাম, 'আমি তো কবি। জগৎ সংসার সম্পর্কে উদাসীন। এতে আপনার খুব বেশি লাভ হবে না।' সে বলল, 'আর কোনো কথা নয়। হয় হ্যা, অথবা না।' আমি বেঁচে থাকার লোভে বিনাশর্তে রাজি হয়ে গেলাম।
সেই রাতটাকে দুঃস্বপ্নের মতো মনে হয়। তবে ওটা স্বপ্ন ছিল না। পর দিন থেকে আমি যা-ই করি, ফল পাই না। সেই কৃষকের মতো, সারা বছর চাষবাষ করে পাকা ফসল মহাজন এসে লোক দিয়ে কেটে নিয়ে যায়। যে ঘরে কোনো ফসলই তুলতে পারে না। তবে কৃষক ফসল ফলিয়ে নিত্য যে আনন্দ পান, তা থেকে কেউ তাকে বঞ্চিত করতে পারেনা।
গিলগামেশ
আজ এই এতো এতো মানুষ অপঘাতে মরে যায়, গিলগামেশ, গিলগামেশ, ফিরে এসো- ফিরে এসো, ভাই আমার, বন্ধু আমার, চলো আরেকবার আমরা বেরিয়ে পড়ি অমৃতের খোঁজে; কোথায় গিলগামেশ? কোথায় অমৃত?
যুদ্ধ জাহাজ ভাসে সমুদ্রে, যুদ্ধ বিমান ওড়ে আসমানে, ধোঁয়ায় ছেয়ে যায় চোখের সীমানা, মৃত্যুর কান্না আজ মিলিয়ে যায় নতুন মৃত্যুতে, রাইফেলের গুলি বের হয়, ঝাঁঝরা হয় মানুষের বুক, সাউন্ড গ্রেনেড কোনো কান্না শুনতে দেয়না, আমি শুনতে চাইÑ ছোটো মেয়ে হারা বাবার চিৎকার, দুধ না পেয়ে মা হারা শিশুর কান্না, কিন্তু, এসব আজ শোনা যায়না, গিলগামেশ, ভাই আমার, আয় একবার, আবার বেরিয়ে পড়ি, কোথায় অমৃত?