Published : 17 Jun 2025, 08:58 PM
হানযালা হান
হে মৃত্যু, আমারই মৃত্যু, চোখের সামনে, ঘুম নাই, ক্লান্তি নাই, চিত্র যেন দৃশ্য, শববাহকেরা গাইছে গান সমস্বরে, সবার কণ্ঠ মেলে করুণ রাগে সুরে, পশ্চিমে ঢলেছে সূর্য, সন্ধ্যা তারা দিচ্ছে উঁকি, শঙ্খ ঘণ্টা শুনি আজান, কে যেন দূরে গায় জারি গান, ঝাঁক বেঁধে নীল আকাশে ওড়ে পাখি, ফেরে নীড়ে, নদীতে
বয় স্রোত, ধায় বায়ু, ওড়ে বাদুরেরা
আরো আছে প্রিয় গাছেরা, গায়ক কীট
বাদক পতঙ্গ দল, লক্ষ্মীপেঁচা মায়া
চোখে দেখে শেষ যাত্রা, চাঁদ এসে কাঁদে
রুদালি মেঘ ভেজায়, ঝরনা গতি পায়
সবুজ ঘাস গালিচায় শেষ শয়ান
কী ভাষায় কথা বল, কী গান গাও, হে শব বাহকেরা? আত্মার আত্মীয়, এসো, মানুষের ভাষা আজ- অচল- প্রাণির ভাষাও, বন্দিশ গাইতে পঁচিশ বছর, নতুন ধুন বাঁশি- তুলছে- মন্দিরা বোল, পূবের বাতাস যেন শঙ্খ, সর্ষে মাঠ সাজে কিশোরী, পাখি গাইছে শোকগান, দূরে ডাকে সারমেয়, পূর্ণিমায় বৃষ্টি- কুয়াশা
ঢাকছে আলো, নদীতে এল বান- তুফান,
জীবনে একটাও মিথ্যা বলেনি পাপীর
দল, তবু যেন অপূর্ণ থেকে যায়, হে
শব বন্ধুদল- মাটির ভাষায় কথা
বল- যে ভাষায় মৃত প্রাণিকে বরণ
করে প্রকৃতি- যেন বাসরে বর-বধূ
চোখ টলমল কেন? মনে রাখিনি কোনো আঘাত, বরং হাসো চটুল কথায়, সাবধানে হাঁট, হোচট না খাও, প্রদীপ কি আর জ্বলে, সলতে পুড়ে শেষ হলে? না- বলেছিল ঋতিকা চৌধুরী, থেমেছিল জীবন ঘড়ি সেই দুপুরেই, কুয়ার জলে নোলোক হারিয়ে গেলে বালিকার মন যেমন, ও কি পা থামল কেন? শস্য
ভারি হলে কৃষক কি বোঝা ফেলে রেখে
যায়? ভুল হলে ক্ষমা করো, পাতা ঝড়ে
গেলে কিছু আসে-যায়? শূন্যে শুরু- শূন্যে
শেষ- দৃশ্যের রূপান্তর কেবল, চক্র
থামে না, এ খেলায় হেরেছি বহুবার
না খেলে জিতে গেলাম শেষ হারা হেরে
কে তুমি? আত্মীয় তো নও, আমার মৃত্যু ব্যথিত করেছে তোমায়? না এসে পারলে না? ও বুঝেছি- তুমি আমার কবিতার পাঠক, আমার বন্ধু? দেশের বাড়ির কেউ? ওকি বাঁশি হাতে- ভৈরবী বাজাতে পার? -কবি না হলে কিছুই হতাম না, ওই দেখ ভার্জিলের পিছু পিছু হাঁটে দান্তে, বিয়াত্রিসকে পেল কিনা জানা নেই
- তোমাকে চিনিনা আমি, নাম শুনি নাই
কবিতা তো দুঃখের পসরা- ও কি কেউ
কিনতে যায়? আমি একটা ঘাসফড়িং, পাশে
বাগানে ছিলাম, নাম ধাম জানা নেই
পাখির তাড়ায় ভুল করে শোকযাত্রায়
তোমার শরীরে সুন্দর ঘ্রাণ ছুটছে গো
পুরনো কবরের হাড় ক’খানা জড়ো করে রেখেছে কেউ, ভয় পাচ্ছ কেন? এ চিরকাল হয়ে আসছে, কবর পুরানো হয়ে গেলে খোঁজ রাখে কি কেউ? নতুন কবরে দুই একদিন আত্মীয়রা আসে, ওই দেখ একটা কবরে ফুল ফুটেছে- কেউ এসে নিয়মিত পরিচর্যা করে, আরেকটা দেখ- রাতে এসে থাকে শেয়াল,
কাল সূর্য ওঠার আগে আমার মৃত্যু
হবে- বলেছিলেন নস্ত্রাদামুস, তাকে
জিজ্ঞেস করা যেত- মৃত্যুর পর কোথা
যায় অস্তিত্ব? এখনো কি থামেনি কান্না?
বেনে বউ ডাকছে বুঝি? কেন এত তাড়া?
আকাশে ডাকছে বজ্র মেঘ? ঝড় এল কি?
কবরে বসে আমি বাঁধছি নতুন পংক্তি, মন যেন ভিখারী, দ্রুতগামী সওয়ারী না, পথ পাশে পড়ে থাকা ঝরা গোলাপ, বকুল ফোটার আগে কত কুঁড়ি ঝরে যায়, ঝড় আসার আগে কত বাতাস বয়ে যায়, কবিতা হওয়ার আগে কত কবিতা উড়ে যায়, কোথা যাওয়ার তাড়া নেই, নতুন সুর সাধনার অখণ্ড
অবসর, বন্ধু নেই- শত্রু নেই, শুধু
মহাকাল পুলসিরাত, কোনো ছাড় নেই,
কবিতা কবিতা হলে সত্যিকার- পাবে
পার, হাশরের ময়দানে বলবেন নবি-
ইনি হলেন কবি, আপনার প্রতিনিধি
মাবুদ, ক্ষমা করুণ, এ হল নেহাই