Published : 08 May 2025, 10:10 PM
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতি পক্ষপাতিত্ব, তার প্রতি বিরোধিতা কিংবা রাজনৈতিকভাবে ব্যবহারও ‘গুরুত্বপূর্ণ’ বলে মন্তব্য করেছেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম।
রবীন্দ্রনাথকে বহু বিচিত্র দৃষ্টিকোণ থেকে আবিষ্কারের সুযোগ গ্রহণ করার কথাও তিনি বলেছেন।
অন্যদিকে গবেষক ও সাহিত্য সমালোচক অধ্যাপক সৈয়দ আজিজুল হক বলেছেন, "রবীন্দ্রনাথের বক্তব্যের মর্মার্থকে যদি দেশের মানুষ যথার্থভাবে উপলব্ধি করতে সক্ষম হত, তাহলে অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত বিভেদ থেকে আমরা মুক্ত থাকতে পারতাম।"
বৃহস্পতিবার বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৪তম জন্মবার্ষিকী উদযাপনে একক বক্তৃতা, রবীন্দ্র পুরস্কার ২০২৫ প্রদান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলা একাডেমি।
একাডেমির সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ সভাগৃহে মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজম বলেন, "রবীন্দ্রনাথ দশকের পর দশক ধরে যেমন বিপুলভাবে পঠিত, তেমনি তিনি বহু জরুরি পাঠের বাইরে রয়ে গেছেন এখনও। রবীন্দ্রনাথ তার জীবদ্দশায় ও মৃত্যুর পরও যেমন তুমুলভাবে সংবর্ধিত, তেমনি তাকে নিয়ে সমালোচনাও কম নয়। সমাজের এই দুই প্রবণতায় রবীন্দ্রনাথের শক্তি ও প্রাসঙ্গিকতা পরিচায়ক।"
রবীন্দ্রনাথকে একজন ‘বিশুদ্ধ উদারনৈতিক মানবতাবাদী’ হিসেবে বর্ণনা করেন অধ্যাপক আজম।
অনুষ্ঠানে 'রবীন্দ্রনাথ ও বঙ্গভঙ্গের রাজনীতি' বিষয়ে বক্তব্য দেন সৈয়দ আজিজুল হক। তিনি বলেন, "বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত হয়ে এবং কিছুদিনের মধ্যে আন্দোলন থেকে নিজেকে বিযুক্ত করে, রবীন্দ্রনাথ স্বদেশের সংকটের মূলসহ দেশের আত্মাকে চিহ্নিত করেছিলেন।
"ব্রিটিশ সরকারের চণ্ডনীতির চেয়ে তার কাছে এদেশের দুই প্রধান সম্প্রদায় হিন্দু ও মুসলমানের মধ্যেকার বিভেদ ও অনৈক্যই সংকটের মূল বলে প্রতিভাত হয়েছিল। অতঃপর তিনি তার মননশীল ও সৃষ্টিশীল বিভিন্ন রচনায় ও কার্যক্রমে নিরবচ্ছিন্নভাবে বিভেদ দূরীকরণের চেষ্টা করেন।"
অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রসাহিত্যের গবেষণায় অসীম দত্ত এবং রবীন্দ্রসংগীতচর্চায় শিল্পী এ এম এম মহীউজজামান চৌধুরী ময়নাকে ‘রবীন্দ্র পুরস্কার ২০২৫’ দেওয়া হয়।
পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখকের হাতে পুষ্পস্তবক, সনদ, সম্মাননা স্মারক ও পুরস্কারের অর্থমূল্য হিসেবে এক লাখ টাকার চেক তুলে দেন বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক এবং মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম।
পুরস্কার পাওয়ার অনুভূতি জানিয়ে অসীম দত্ত বলেন, “এ ধরনের পুরস্কার পাওয়া কেবল গর্বেরই নয়, বরং দায়েরও বৈকি। এই পুরস্কার আমাকে উৎসাহ যোগাবে নির্মোহভাবে কাজ করে যেতে।”
আর মহীউজজামান চৌধুরী বলেন, “যে কোনো সৃষ্টিশীল কাজের স্বীকৃতি গৌরবের এবং আনন্দের। এই মুহূর্তে আমি গর্বিত এবং আনন্দিত।”
সভাপ্রধানের বক্তব্যে বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, "রবীন্দ্রনাথ সর্বমানুষের জাগরণ ও মুক্তির কথা বলেছেন। কবির বিশ্বাস ছিল, সাধারণ মানুষ তার আত্মশক্তিতে বলীয়ান হয়ে বলশালী অন্যায়—অবিচারের মূলোৎপাটন করতে পারে।
"সারাজীবন রবীন্দ্রনাথ যুক্তিবোধ ও মানবমঙ্গলের ভাবনায় উদ্বুদ্ধ ছিলেন, জাতিগত সংকীর্ণতা অতিক্রম করে আন্তর্জাতিকতাবাদের মর্মকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছেন তিনি; আজকের দিনেও যার প্রাসঙ্গিকতা অনুভব করা যায়।"
অনুষ্ঠানে আবৃত্তি পরিবেশন করেন নূরুল হাসনাত জিলান। সংগীত পরিবেশন করেন অণিমা রায়, মানসী সাধু ও আশরাফ মাহমুদ।সঞ্চালনা করেন বাংলা একাডেমির সহপরিচালক মাহবুবা রহমান।