Published : 10 May 2025, 03:19 PM
এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ, শতভাগ উৎসব ভাতার নিশ্চয়তা চেয়ে সরকারকে এক সপ্তাহের সময় বেঁধে দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষকরা।
এই সময়ের মধ্যে দাবি মানা না হলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন তারা। এছাড়া প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ‘যমুনা’ এবং সচিবালয় অভিমুখে শিক্ষকরা লংমার্চ করবেন বলেও জানিয়েছেন আন্দোলনরতরা।
শনিবার প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত ‘শিক্ষক-কর্মচারী মহাসমাবেশ’ থেকে এই ঘোষণা দেন শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (বিটিএ) সভাপতি অধ্যক্ষ শেখ কাওছার আহমেদ।
‘শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে আসন্ন ঈদ-উল আযহার পূর্বেই পূর্ণাঙ্গ উৎসবভাতা, বাড়িভাড়া ও চিকিৎসাভাতা প্রদানসহ শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণের দাবিতে’ দেশের এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারীদের বিভিন্ন সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ‘শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ’ এই সমাবেশের আয়োজন করে।
সমাবেশে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সেসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক নেতারা অংশ নেন, তারা নিজেদের নানা ‘বৈষম্যের’ কথা তুলে ধরেন।
শেখ কাওছার আহমেদ বলেন, “আমি ২৫ পার্সেন্ট উৎসব ভাতা চাই না, আমরা কোন পার্সেন্টিজ চাই না। আগামী ঈদুল আযহার আগেই ২৫ পার্সেন্ট ভাতার পরির্তন করে অনতিবিলম্বে ১৭ মের আগে শতভাগ উৎবভাতার ঘোষণা দিতে হবে। সরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের ন্যয় বাড়িভাড়া এবং পূর্নাঙ্গ চিকিৎসাভাতা প্রদান করতে হবে।”
তাদের ‘মূল দাবি’ শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণ জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ও শিক্ষা উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্য করে এই শিক্ষক বলেন, “অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রথমে মাধ্যমিক শিক্ষাকে জাতীয়করণ করতে হবে। দয়া করে সকল বৈষম্য ঘুচানোর লক্ষ্যে শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণের ঘোষণা দিন। আর্থিক প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সকল বৈষম্য ঘুচিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করুন।
“অন্যথায় ১৭ মে থেকে বাংলাদেশের সকল শিক্ষক-কর্মচারী এই রাজপথে অবস্থান করে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে। যতোদিন পর্যন্ত শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ ও ১০০ পার্সেন্ট উসৎবভাতার ঘোষণা না আসবে, পূর্ণাঙ্গ বাড়িভাড়া ও চিকিৎসাভাতার ঘোষণা না আসবে ততোক্ষণ পর্যন্ত এই রাজপথ থেকে কেউ ফিরে যাবো না।”
আগামী কর্মসূচি ঘিরে এখন থেকেই প্রতিটি উপজেলায়, জেলায় ও অঞ্চলে ‘প্রস্তুতি গ্রহণ’ করার আহ্বান জানিয়েছেন বিটিএ) সভাপতি অধ্যক্ষ শেখ কাওছার আহমেদ।
তিনি বলেন, “১৭ মে এর পূর্বে যদি অভিষ্ঠ লক্ষ্যে পৌঁছাতে না পারি, যদি প্রত্যাশিত ঘোষণা না আসে লাগাতার অবস্থান, ধর্মঘটসহ লংমার্চ টু যমুনা, লংমার্চ টু সেক্রিটারিয়েট কর্মসূচি পালন করা হবে।”
২০২৩ সালেও জাতীয়করণের দাবিতে টানা ২২ দিন প্রেসক্লাবের সামনে ‘লাগাতার অবস্থান’ কর্মসূচির কথা মনে করিয়ে দিয়ে কাওছার আহমেদ বলেন, “কাফনের কাপড় যেহেতু গায়ে জড়িয়েছি হয় কারাবরণ, না হয় জাতীয়করণ অথবা মৃত্যুবরণ। তাছাড়া আমরা এই রাজপথ ছেড়ে যাবো না।”
দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার ৫৭ ভাগই এই বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারিদের মাধ্যমে পরিচালিত হয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, “যদি আমি একই কারিকুলামে পড়াই, একই বইয়ে পাঠদান, একই প্রশ্নপত্রে উত্তরপত্র মূল্যায়ন করি, ৫৭ ভাগ শিক্ষা ব্যবস্থায় আমরা দায়িত্ব পালন করি। তাহলে কেন সরকারি ও বেসরকারিতে এতো বৈষম্য?”
শিক্ষকদের এই সমাবেশে ‘সংহতি’ জানিয়ে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, “যারা মানুষ গড়ার কারিগর, সেই শিক্ষকদের এ ধরণের অবমননা খুবই লজ্জার। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সব সংস্কার করছেন, শিক্ষা সংস্কারে কোন উদ্যোগ দেখলাম না। অথচ জাতির মেরুদন্ড শিক্ষা, আর সেটার উপরে কোন কাজ হচ্ছে না।”
শিক্ষাখাতে জিডিপির মাত্র এক ভাগ বরাদ্দ মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্য করে মান্না বলেন, “তাহলে শিক্ষকদের জীবনের মান বাড়বে কীভাবে? সেটি না হলে শিক্ষার মান বাড়বে কীভাবে? ১৭ তারিখ আসার আগে সবাইকে নিয়ে কথা বলে এটা নিস্পত্তির ব্যবস্থা করুন। রাজনৈতিক দলের নেতাদের নিয়ে চারদিন ধরে বসতে পারলে শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে চারঘণ্টা বসতে পারবেন না?”
এর আগে এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ, উৎসব ভাতা, চিকিৎসা ভাতা ও বাড়ি ভাড়াসহ বিভিন্ন দাবিতে গত ২২ দিন ধরে আন্দোলনরত শিক্ষকরা তাদের কর্মসূচি স্থগিত করেন গত মার্চ মাসের শুরুতে।।