Published : 20 May 2025, 05:40 PM
নারী নির্যাতনের অভিযোগে গ্রেপ্তার গায়ক মাঈনুল আহসান নোবেল মামলার বাদীকে স্ত্রী দাবি করে আদালতে বলেছেন, তিনি সংসার করতে চান।
বাদীকে স্ত্রী দাবি করলেও আদালতে বিয়ের কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি তার আইনজীবী।
‘অপহরণ, ধর্ষণ ও মারধরের’ মামলায় সোমবার রাত ২টার দিকে ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার এলাকা থেকে নোবেলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরের দিন তাকে আদালতে তোলা হয়।
নোবেলের আইনজীবী জসিম উদ্দিন জামিন চেয়ে আবেদন করেন। শুনানিতে তিনি বলেন, “মামলার ঘটনা দেখানো হয়েছে গত বছরের ১২ নভেম্বর। আর বাদী আসামিরা স্ত্রী। গতকাল রাত পর্যন্ত তারা একই বাসায় ছিলেন।
“ভুল বুঝাবুঝিতে মামলা হয়েছে; ধর্ষণের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নাই। লিগ্যালি তার ওয়াইফ। চার মাসের প্রেগন্যান্ট। নোবেল তার সঙ্গে সংসার করতে চান। আমরা আপস করে নেব।”
এসময় বিচারক কাবিননামা আছে কি না জানতে চান। তখন আসামিপক্ষের আইনজীবী বলেন,“তাড়াহুড়ার কারণে কাবিননামাটা আনা হয়নি।”
রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী জামিনের বিরোধিতা করেন।
তিনি বলেন, “বাদী দাবি করেছেন, তিনি ইডেন কলেজে পড়েন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের পরিচয়। পরে ফোনে কথাবার্তা হয়।
“গত বছরের ১২ নভেম্বর তাদের দেখা হয়। আসামি বাদীকে তার ডেমরার স্টুডিওতে নিয়ে যান। সেখানে তাকে আটকে রাখেন। ২-৩ জনের সহায়তায় তাকে ধর্ষণ করেন; মারধর করেন।”
বিচারক তখন জানতে চান, “ঘটনার ৫ মাস পর মামলা কেন?”
জবাবে ওমর ফারুক বলেন, “বাদী একজন ছাত্রী। মূল বক্তব্য হলো, বাদীকে আটকে রেখে ২ থেকে ৩ জনের সহায়তায় তাকে ধর্ষণ করা হয়।”
আদালতে ডেমরা থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা এসআই ইলামনি বলেন, “বাদীকে আটকে রাখে। কারো সঙ্গে যোগাযোগ করতে দিত না। তাকে মারধর করত। একটা ভিডিও দেখে তার পরিবার। পরে এসে তাকে উদ্ধার করে।”
শুনানি শেষে আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে নোবেলকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এর আগে ডেমরা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মুরাদ হোসেন বলেন, "নোবেল দাবি করেছেন, ওই তরুণী তার স্ত্রী, মৌখিকভাবে কলমা পড়ে তাকে বিয়ে করেছেন। কিন্তু বিয়ে সংক্রান্ত কোনো কাগজপত্র তিনি দেখাতে পারেননি।"
পুলিশ বলছে, ফেইসবুকে ভুক্তভোগীকে মারধরের একটি ভিডিও ভাইরাল হলে পরিবার মেয়েটিকে চিনতে পেরে জাতীয় জরুরি সেবার নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করে। এরপর সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ডেমরা থানা পুলিশ ভিকটিমকে উদ্ধার করে। পরে ওই তরুণী মামলা করলে নোবেলকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়া ওই সিসিটিভি ভিডিওতে এক তরুণীকে মারধর করে হাত ধরে টেনেহিঁচড়ে সিঁড়ি দিয়ে নামিয়ে নিতে দেখা যায়। এ সময় কয়েকজন বাধা দিতে দেখা গেলেও নোবেলকে থামানো যায়নি।
মামলা বা গ্রেপ্তার অবশ্য নোবেলের জন্য নতুন নয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিতর্কিত পোস্ট, মাদকাসক্তি আর স্ত্রীকে নির্যাতনের মত অভিযোগে বহুবারই এই তরুণ গায়ক সংবাদের শিরোনাম হয়েছেন।
অগ্রিম টাকা নিয়ে গান গাইতে না যাওয়ার অভিযোগে ২০২৩ সালের ১৯ মে ঢাকার মতিঝিল থানায় নোবেলের বিরুদ্ধে মামলা করেন সাফায়েত ইসলাম নামে এক ব্যক্তি।
পরদিন গোয়েন্দা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতের মাধ্যমে এক দিনের হেফাজতে নেয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতে নেওয়ার পর জামিন পান নোবেল।
২০১৯ সালে ভারতের জি-বাংলা টিভির রিয়েলিটি শো ‘সা রে গা মা পা’তে অংশ নিয়ে তৃতীয় হয়ে আলোচনায় আসেন নোবেল। তবে নানা কর্মকাণ্ডে তাকে নিয়ে বিতর্কও বাড়তে থাকে।
২০২৩ সালেরই ২৬ এপ্রিল কুড়িগ্রামে গান পরিবেশনের সময় মঞ্চে নোবেলের ‘অসংলগ্ন আচরণে’ ক্ষুব্ধ হয়ে জুতা ও পানির বোতল ছোড়ে দর্শক। আর তাতে পণ্ড হয় ফুলবাড়ী ডিগ্রি কলেজের ৫০ বছর পূর্তি ও সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
তবে সম্প্রতি বিভিন্ন কনসার্ট ও গণমাধ্যমের অনুষ্ঠানে প্রায়ই উপস্থিত হয়ে নিজের ‘স্বাভাবিক’ জীবনে ফিরে আসার জানান দিচ্ছিলেন নোবেল। এরমধ্যেই নতুন অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়ে তাকে জেলে যেতে হল।
আরও পড়ুন