Published : 05 May 2025, 06:42 PM
মধুপুরের ৪৪ হাজার একরের শালবন উদ্ধারের পাশাপাশি সেখানে ইউক্যালিপটাস গাছ সরিয়ে শাল গাছ লাগানোর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছেন বন ও পরিবেশ উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান।
টাঙ্গাইলের এ শালবনের এখন শুধু ৩ হাজার একর অবশিষ্ট থাকার তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, ২২ মে মধুপুরে ১৫০ একর জায়গা থেকে ইউক্যালিপটাস গাছ সরিয়ে শাল গাছ লাগানোর প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।
সেদিন ওই বন পরিদর্শনে যাওয়ার কথা রয়েছে তার।
সোমবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে দৈনিক পত্রিকা বণিক বার্তা আয়োজিত ‘কৃষি, খাদ্যনিরাপত্তা ও প্রাণ-প্রকৃতি’ সম্মেলনে উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
শালবন পুনরুদ্ধারের অংশ হিসেবে তিনি আগামী এক বছরে যেটুকু জায়গায় ইউক্যালিপটাস গাছ আছে সেখানে শাল গাছ লাগানোর পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, “আপনারা হয়ত জুন মাসের মধ্যেই শালবন পুনরুদ্ধারের পুরো পরিকল্পনাটা পেয়ে যাবেন। এই কাজটা এক বছরে বা দেড় বছরে সম্ভব না। আমরা ৩ বছরের একটা টার্গেট করে নামব।”
শালবনের সর্বোচ্চটুকু ফিরে পেতে বন বিভাগকে পরিকল্পনা করার নির্দেশ দিলে তারা ১০ বছরের কর্মপরিকল্পনা জমা দেয়। তবে উপদেষ্টা বলেছেন এজন্য এতটা সময় দেওয়া যাবে না।
তিনি বলেন, পরিবেশের সংরক্ষণটা ‘যদি কিন্তুর’ আওতায় পড়ে যাচ্ছে। ফলে এটিকে মূলধারায় নিয়ে আসার প্রয়োজন দেখছেন তিনি।
মধুপুরের বনে তিনি হারানো ময়ূরের প্রজাতি ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়ার কথাও তুলে ধরেন। বলেন, “আমরা ৫টি প্রজাতির ময়ূর চিহ্নিত করেছি, যেগুলোকে ক্রমান্বয়ে প্রকৃতিতে ছাড়ব। যেমন ময়ুরকে মধুপুরের বনে ছেড়ে দিয়ে এই কাজটা শুরু করব৷ আশা করি প্রটোকল ফলো করে ডিসেম্বর মাসের মধ্যে বাংলাদেশের বন থেকে হারিয়ে গেছে কিন্তু জু বা সাফারিতে আছে এমন ৫টি প্রজাতি আমি আবার ফিরিয়ে দিতে সক্ষম হব।”
সম্মেলনে উপদেষ্টা কৃষি জমি সুরক্ষা আইন আগামী তিন মাসের মধ্যে অনুমোদনের প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার কথাও তুলে ধরেন। বলেন, কৃষি জমি সুরক্ষা আইন নিয়ে আন্তঃমন্ত্রনালয় সভা হয়েছে। আরেকটা সভা করে সবার মতামত নেওয়ার পর মাস তিনেকের মধ্যে এটি চূড়ান্ত করার কাজ শেষ হবে।
শুধু খাবারের পরিমাণ নয়, মান নিয়েও চিন্তা করার কথা বলেন তিনি।
“ধরেন একটা শিল্পপ্রতিষ্ঠান প্রচুর দূষণ করছে, সেখানে এক হাজার শ্রমিক কাজ করছে। ওই শিল্প প্রতিষ্ঠানকে বারবার নোটিস দেওয়া হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে মামলা-মোকদ্দমা করা হচ্ছে, আদালতের নির্দেশ আছে।
“তাকে যখন আমরা বন্ধ করতে যাব তখন কিন্তু একটা প্রচন্ড বিতর্ক সামনে নিয়ে আসা হবে, এক হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হুমকির মুখে পড়ছে। আবারও আমি সেই বাট ও ইফের গিয়ে পড়লাম,” যোগ করেন তিনি।
পরিবেশ সংরক্ষণে পরিবেশ অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ের না বলতে পারার অধিকারও চাচ্ছেন তিনি।
“এই উন্নয়নকে আমরা হ্যাঁ বলতে পারছি না, এই প্রকল্পকে আমরা হ্যাঁ বলতে পারছি না। এই না শুনবার মানসিকতাও কিন্তু আমাদের সকলের মধ্যে আসতে হবে৷ ১০০টা শর্ত দিয়ে অনুমোদন দিয়ে দিলাম, এটা কিন্তু সমস্যার সমাধান করছে না।”
সম্মেলনে প্যানেল আলোচক অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ বলেন, বাংলাদেশের কৃষি, কৃষক নিয়ে কখনোই দেশের পরিস্থিতি, প্রাণ প্রকৃতি, শক্তি ও সীমাবদ্ধতাকে চিন্তা করে পরিকল্পনা তৈরি করা হয়নি।
“আমাদের উৎপাদন অনেক বেড়েছে। কিন্তু সেটার জন্য কী কী মূল্য দিতে হয়েছে- মাটি, পানি, মানুষ সেগুলির একটা হিসাব আমাদের করা দরকার।”
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই শিক্ষক বলেন, কৃষিকে কেন্দ্র করে দেশে বাণিজ্যের একটা ব্যপক সম্প্রসারণ হয়েছে। যেখানে বিভিন্ন কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ রয়েছে, সেটি কৃষকের জন্য একটা নাজুক পরিস্থিতি তৈরি করেছে।
“এগুলি থেকে বের করবে কে? করার দায়িত্ব প্রধাণত সরকারের। কারণ সরকারের ক্রয় ব্যবস্থা, পরিকল্পনা, সরকারের তাকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য যে ব্যবস্থা সেটার দুর্বলতার কারণেই একদিকে প্রকৃতি, আরেকদিকে কোম্পানি, আরেকদিকে দূষণ কৃষকে এবং কৃষকের মাধ্যমে সারাদেশের মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।”
আরেক প্যানেল আলোচক অধিকার কর্মী খুশি কবীর বলেন, কৃষির সঙ্গে সবচেয়ে বেশি জড়িত ভূমি। ভূমি বন্দোবস্ত নীতিমালা, ব্যবহার নীতিমালা, নিবন্ধন প্রক্রিয়া সবগুলো এখনও অনেক ত্রুটিপূর্ণ রয়েছে।
“চেষ্টা করা হচ্ছে ডিজিটাইজ করার জন্য, সেখানেও সমস্যা হচ্ছে। আমরা সবাই জানি অধিকাংশ মামলা যেগুলো কোর্টে আছে, তার দেখা গেছে যে ৭০ ভাগ ভূমির সঙ্গে সম্পর্কিত। আর এই ভূমির উপরেই কৃষিটা সবচেয়ে নির্ভরশীল।”
সম্মেলনে এর আগের অধিবেশনে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, কীটনাশক ব্যবহারের ফলে হাওরের মাছ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মাছকে রক্ষা করতে হলে সেখানে কিটনাশকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
“এছাড়া কোনো উপায় নাই। খাদ্য সংখ্যাগতভাবে, পরিমাণগতভাবে হলে হবে না। আমাকে আসলে নিরাপদ খাদ্যটাই উৎপাদন করতে হবে। মুনাফাকে প্রাধান্য না দিয়ে দেশের মানুষকে খাদ্যের যোগানের প্রাধান্য আপনাদেরকে দিতে হবে।”