Published : 03 Jun 2025, 04:57 PM
জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্যে রাজধানীর চাঁনখারপুলে ছয়জনকে হত্যার ঘটনার মামলায় সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ পলাতক চারজনকে হাজির হতে সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি দিতে বলেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
পাশাপাশি আগামী ২২ জুন মামলার পরবর্তী শুনানির দিন রেখেছে ট্রাইব্যুনাল।
প্রসিকিউশনের আবেদনের প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার বিচারপতি মো. গোলাম মূর্তজা মজুমদারের নের্তৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন।
বুধবার একটি ইংরেজি ও একটি বাংলা পত্রিকায় এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রারকে বলা হয়েছে।
এর আগে ২৫ মে হাবিবুর রহমানসহ ৮ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের দাখিল করা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। একইসঙ্গে পলাতক চার আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
হাবিবুর রহমান ছাড়াও ডিএমপির সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী, রমনা জোনের সাবেক এডিসি শাহ আলম মো. আকতারুল ইসলাম ও এসি মো. ইমরুল, শাহবাগ থানার সাবেক পুলিশ পরিদর্শক আরশাদ হোসেন, কনস্টেবল সুজন, ইমাজ হোসেন ও নাসিরুল ইসলাম এ মামলার আসামি।
তাদের মধ্যে আরশাদ, সুজন, ইমাজ ও নাসিরুল কারাগারে আছেন। বাকিরা পলাতক।
পরোয়ানা সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আসামিরা গ্রেপ্তার হয়নি। যেহেতু তারা পলাতক সেজন্য দুইটি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি জারি করা দরকার বলে জানিয়েছে প্রসিকিউটর সহিদুল ইসলাম সরদার।
চাঁনখারপুলে ৬ জনকে হত্যার ঘটনায় করা মামলায় গত ২১ এপ্রিল তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় তদন্ত সংস্থা।
তদন্তে কী পাওয়া গেছে, সেই তথ্য তুলে ধরে ২৫ মে চিফ প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেছিলেন, “ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানের নির্দেশে মাঠ পর্যায়ে থেকে ওই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করে ৬ জনকে হত্যা করেন আসামিরা।”
জুলাই অভ্যুত্থান: ট্রাইব্যুনালে প্রথম আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল
চাঁনখারপুলে ছয়জনকে হত্যার ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালেরও ‘সম্পৃক্ততা’ রয়েছে মন্তব্য করে তাজুল বলেছিলেন, “যেহেতু তাদের বিরুদ্ধে সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবিলিটির তদন্ত চলছে, সেজন্য তাদেরকে এই মামলায় আসামি করা হয়নি। তবে নির্দেশদাতা ও পরিকল্পনার যে ভূমিকা রয়েছে তাদের, সেটার বর্ণনা এই চার্জশিটে রয়েছে। কারণ শেখ হাসিনার সরাসরি নির্দেশে তার অধীনস্তরা মাঠ পর্যায়ে থেকে ওই নির্দেশনা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের নেতাকর্মীরা বাস্তবায়ন করেছেন।”
প্রধান প্রসিকিউটর বলেন, “চাঁনখারপুল এলাকায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আরো মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। সেসব ঘটনায় আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা জড়িত রয়েছেন। সেসব অপরাধের তদন্ত চলছে। তদন্ত সম্পন্ন হলেই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে তদন্ত সংস্থা।
“যেহেতু ৬ জনকে হত্যার ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন প্রথমেই সম্পন্ন হয়েছে, সেজন্য এটাই প্রথমে দাখিল করা হয়েছে।”
৯০ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন ছাড়াও দালিলিক তথ্য-প্রমাণ জমা দিয়েছিল তদন্ত সংস্থা। ৭৯ জন সাক্ষীর জবানবন্দি, ১৯টি ভিডিও ক্লিপ, ১১টি পত্রিকার রিপোর্ট, ২টি অডিও কল রয়েছে সেখানে।
তাজুল ইসলাম বলেন, “এর মধ্যে একটি অডিও কল রয়েছে হাবিবুর রহমানের, যিনি পুলিশ কমান্ড সেন্টার থেকে ওয়ারল্যাসের মাধ্যমে ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে দমাতে চায়নিজ রাইফেল দিয়ে সরাসরি গুলি চালানোর নির্দেশ দেন পুলিশ সদস্যদের। উনার এই নির্দেশের পরই প্রাণঘাতি আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেছেন পুলিশ সদস্যরা।”