Published : 19 Jun 2025, 09:19 PM
গত এক বছর দেশের যেসকল নাগরিক সরকারি সেবা গ্রহণ করতে বিভিন্ন দপ্তরে গিয়েছেন, তাদের মধ্যে ৩২ শতাংশ ঘুষ ও দুর্নীতির শিকার হয়েছেন বলে সরকারেরই জরিপে উঠে এসেছে।
ঘুষ ও দুর্নীতি সবচেয়ে বেশি হয় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষ-বিআরটিএতে সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে। জরিপে অংশ নেওয়া ৬৩ দশমিক ২৯ শতাংশ নারী-পুরুষ বলেছেন, তারা এ সংস্থায় গিয়ে ঘুষ ও দুর্নীতির কবলে পড়েন।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ‘সিটিজেন পারসেপশন সার্ভেতে (সিপিএস) এ চিত্র উঠে এসেছে।
বৃহস্পতিবার সংস্থার মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জরিপের প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। সেখানে তথ্য তুলে ধরেন এ প্রকল্পের পরিচালক রাশেদ-ই-মাসতাহাব।
অনুষ্ঠানে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন।
চলতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে ৬৪ জেলার ১ হাজার ৯২০টি প্রাথমিক নমুনা ইউনিট থেকে ৪৫ হাজার ৮৮৮টি খানার ১৮ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সী মোট ৮৪ হাজার ৮০৭ জন নারী-পুরুষের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে এই জরিপ চালানো হয়।
জরিপে নাগরিকদের দৃষ্টিভঙ্গি ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নিরাপত্তা, সুশাসন, সরকারি সেবার মান, দুর্নীতি, ন্যায়বিচারে প্রবেশাধিকার এবং বৈষম্য বিষয়ক এসডিজি ১৬ এর ছয়টি সূচকের অগ্রগতি মূল্যায়ন করা হয়েছে।
জরিপের প্রশ্নপত্র জাতিসংঘ নির্ধারিত আন্তর্জাতিক মান ও পদ্ধতি অনুসরণ করে তৈরি করা হয়েছে বলে অনুষ্ঠানো বলা হয়েছে।
জরিপের প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারি সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে ৩৮ দশমিক ৬২ শতাংশ পুরুষ এবং ২২ দশমিক ৭১ শতাংশ নারী উত্তরদাতা ঘুষ ও দুর্নীতির শিকার হওয়ার তথ্য দিয়েছেন। গড়ে ৩১ দশমিক ৬৭ শতাংশ উত্তরদাতা ঘুষ ও দুর্নীতির শিকার হয়েছেন।
ঘুষ ও দুর্নীতির ক্ষেত্রে বিআরটিএ এর পরেই আছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। ৬১ দশমিক ৯৪ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, তারা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সেবা নিতে গিয়ে ঘুষ ও দুর্নীতির কবলে পড়েছেন।
পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে ৫৭ দশমিক ৪৫ শতাংশ, ভূমি রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে ৫৪ দশমিক ৯২ শতাংশ উত্তরদাতা ঘুষ দিয়ে ও দুর্নীতির মধ্য দিয়ে সেবা গ্রহণের কথা বলেছেন।
জরিপের ফলাফলে বলা হয়, কেবল ২৭ দশমিক ২৪ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন তারা দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় সরকারের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে মতামত প্রকাশ করতে পারেন।
এক্ষেত্রে শহরে ২৭ দশমিক ৮৭ শতাংশ ও গ্রামে ২৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ তাদের মতামত দিতে পারেন।
নারীরা রাজনৈতিক ব্যবস্থায় সরকারের কর্মকাণ্ড নিয়ে খুব কমই নিজের মত তুলে ধরতে পারেন বলে জরিপে উঠে আসে।
বলা হয়, প্রতি ১০০ পুরুষের মধ্যে ৩১ দশমিক ৮৬ জন গড়ে এ ক্ষেত্রে নিজের মতামত তুলে ধরতে পারলেও নারীর ক্ষেত্রে এটি গড়ে প্রতি ১০০ জনে ২৩ দশমিক ২ জন।
রাজনৈতিক ময়দানেও নারীর প্রভাব বিস্তারে কমতি দেখা গেছে জরিপে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২১ দশমিক ৯৯ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন যে, তারা দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করতে পারেন।
এই হার নারীর ক্ষেত্রে ১৭ দশমিক ৮১ শতাংশ ও পুরুষের ক্ষেত্রে ২৫ দশমিক ৫৫ শতাংশ।
নিরাপত্তা বিষয়ে ৮৪ দশমিক ৮১ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন যে সন্ধ্যার পর নিজ এলাকার আশপাশে একা চলাফেরা করতে নিরাপদ বোধ করেন। অর্থাৎ ১৫ দশমিক ১৯ শতাংশ সন্ধ্যার পর নিজ এলাকার আশেপাশেও একা চলাচলে নিরাপদ বোধ করেন না।
এক্ষেত্রে পুরুষদের (৮৯ দশমিক ৫৩ শতাংশ) তুলনায় নারীরা (৮০ দশমিক ৬৭ শতাংশ) কম নিরাপদ বোধ করেন।
জরিপে প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী, গত ১ বছরে দেশের ১৯ দশমিক ৩১ শতাংশ কোনো না কোনো ধরনের বৈষম্য বা হয়রানির শিকার হয়েছেন।
নারীদের মধ্যে এই হার কিছুটা বেশি, ১৯ দশমিক ৬২ শতাংশ, যেখানে পুরুষদের মধ্যে তা ১৮ দশমিক ৯৭ শতাংশ। শহরাঞ্চলে বৈষম্যের হার (২২ দশমিক ০১ শতাংশ) গ্রামাঞ্চলের (১৮ দশমিক ০৭ শতাংশ) তুলনায় বেশি।
নিজের পরিবারের মধ্যে (৪৮ দশমিক ৪৪ শতাংশ), গণপরিবহন/উন্মুক্ত স্থানে (৩১ দশমিক ৩০ শতাংশ) এবং কর্মস্থলে (২৫ দশমিক ৯৭ শতাংশ) বৈষম্য বা হয়রানির ঘটনা সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে বলে জরিপের প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়।