Published : 11 Jun 2025, 01:45 AM
পুলিশ অস্ত্রকে ‘কর্তৃত্বের ভিত্তি’ গণ্য করলেও এই বাহিনীকে আর কোনো মারণাস্ত্র না দেওয়ার সরকারের সিদ্ধান্তে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বিঘ্ন ঘটতে পারে বলে মনে করছেন বাহিনীর মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা।
মারণাস্ত্র বহনের সুযোগ না দিলে নিজেদের নিরাপত্তাও বিপণ্ন হতে পারে, এমন শঙ্কার কথা তুলে ধরে সরকারের সিদ্ধান্তের সঙ্গে তারা দ্বিমত পোষণ করছেন।
হতাশা প্রকাশ করে কেউ কেউ বলছেন, সরকারের এ সিদ্ধান্ত জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে মনোবল ভেঙে যাওয়া পুলিশের ‘কোমর ভেঙে দেওয়ার উদ্যোগ’।
যদিও সরকারের পক্ষ থেকে এই সিদ্ধান্তটি কীভাবে বাস্তবায়িত হবে তা নিয়ে এখনো কিছু বলা হয়নি।
মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, পুলিশ অস্ত্রের অপব্যবহার করবে কি না? এটা পুরোপুরি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। পুলিশকে পুলিশের আইনে চলতে দিলে অস্ত্রের অপব্যবহারের আশঙ্কা থাকে না বলে দাবি করেন তারা।
এ বিষয়ে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজি) মোহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, “অস্ত্র হচ্ছে পুলিশের কর্তৃত্বের প্রতীক। অস্ত্রটা সমস্যা নয়, সমস্যা হচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত প্রয়োগ, যেটার একটা রাজনৈতিক কারণও ছিল।”
সঠিক তত্ত্বাবধান, নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনা থাকলে অস্ত্রের অপপ্রয়োগ এড়ানো সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।
জুলাই অভ্যুত্থানের সময় দমন-পীড়ন ও সহিংসতায় ব্যাপক প্রাণহানি ঘটে। আহত হয় কয়েক হাজার।
বিভিন্ন ‘নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে পাওয়া’ মৃত্যুর তথ্যের ভিত্তিতে জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদনে ধারণা দেওয়া হয়েছে, ১ জুলাই থেকে ১৫ অগাস্টের মধ্যে ১,৪০০ জনের বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে, যাদের বেশিরভাগই বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যবহৃত প্রাণঘাতী অস্ত্র, সামরিক রাইফেল এবং শটগানের গুলিতে নিহত হন।
৫ অগাস্ট সরকার পতনের পর সারা দেশে থানায় হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। পুলিশের হিসাবে, আন্দোলনে বাহিনীর ৪৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন।
আন্দোলনের পর পুলিশকে আবার কাজে ফেরাতে অনেক সময় লেগে যায়; তার জের এখনো চলছে।
অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই অভ্যুত্থানে হত্যার ঘটনায় ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের’ অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুনসহ কয়েকজনকে বিচারের মুখোমুখি করা উদ্যোগ নিয়েছে।
ভাবমূর্তির সংকটে থাকা পুলিশ বাহিনীকে আর কোনো মারণাস্ত্র না দেওয়ার বিষয়টি আলোচনায় আসে ১২ মে।
সে দিন সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির নবম সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে তুলে ধরে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, “পুলিশের হাতে যেন আর কোনো মারণাস্ত্র না থাকে, এগুলো তাদের জমা দিয়ে দিতে হবে।”
পুলিশকে মরণাস্ত্র দেওয়া যাবে না, কিন্তু যখন কোনো অভিযানে যাবে তখন পুলিশ কী করবে জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “আমি একটা কথা বলেছি এপিবিএনের কাছে মারণাস্ত্র থাকবে। সাধারণ অপারেশনের ক্ষেত্রে মারণাস্ত্র দরকার নেই। রাইফেল থাকবে না তা নয়, রাইফেল তো থাকবেই।”
তার পর দিন ১৩ মে মিরপুরে পুলিশ স্টাফ কলেজে আইজিপি বাহারুল আলমকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা।
জবাবে তিনি বলেন, “স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যেটা বুঝাতে চেয়েছে, যে অস্ত্রের গুলির ফলে নিশ্চিত মৃত্যু হয়, যেমন রাইফেল, যেগুলো থেকে বুলেট নির্গত হয়, এগুলা পরিহার করব।
“আমরা নীতিগতভাবে এটা মনে করি, পুলিশকে একটি ‘খুনি’ বাহিনী হতে পারে না। আমার কাছে বড়জোর শটগান থাকবে, এটাই একটা স্বাভাবিক প্রত্যাশা সবার। তাই না?”
আইজিপি বলেন, “আমরা এটা নিয়ে সবার সাথে আলোচনা করে ঠিক করব।”
মাঠ পর্যায়ের প্রতিক্রিয়া
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও আইজিপির বক্তব্য ভালোভাবে নেননি মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, জুলাই আন্দোলনের ধাক্কায় পুলিশের মনোবল ভেঙেছে। এখন যদি অস্ত্র না থাকে তাহলে পুরো বাহিনীর ‘কোমর একেবারেই ভেঙে’ যাবে।
এখন পুলিশের এএসআই থেকে পরিদর্শক পর্যন্ত কর্মকর্তারা নিজ নামে ইস্যু করা পিস্তল বহন করতে পারেন। পুলিশের এএসপি থেকে শুরু করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দেহরক্ষীর (কনস্টেবল বা এএসআই) কাছে ইস্যু করা পিস্তল থাকে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও চাইলে নিজ নামে পিস্তল ইস্যু করাতে পারেন। এছাড়া কনস্টেবলদের কাছে শটগান ও চায়নিজ রাইফেল থাকে।
জুলাই আন্দোলনে মিছিলের দিকে তাক করে এই চায়নিজ রাইফেলে দিয়ে গুলি ছুঁড়তে দেখা যায় পুলিশকে, যে কারণে প্রচুর হতাহতের ঘটনা ঘটে। এই চায়নিজ ‘টাইপ ৫৬’ রাইফেলগুলো যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে বহুল ব্যবহৃত এ কে ৪৭ রাইফেলের সমতুল্য। আধা কিলোমিটার দূর থেকেও এগুলো দিয়ে প্রাণহানি ঘটানো সম্ভব।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগরে ওসির দায়িত্ব পালন করা একজন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, “কনস্টেবলদের কাছে তো সবসময় চায়নিজ রাইফেল দেওয়া হয় না।”
পুলিশ সদস্যদের অস্ত্র দেওয়ার বিষয়ে উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, কোনোর দাঙ্গার সময় একটা দলে যদি ২০ জন কনস্টেবল থাকেন, তাহলে চারজন শটগান, চারজন গ্যাসগান, চারজন ঢাল-লাঠি ও সর্বোচ্চ চারজনের কাছে চায়নিজ রাইফেল থাকে। আর ২০ জনের পার্টির মধ্যে দুজন গ্রেপ্তার করার জন্য থাকেন, তাদের বলে গ্রেপ্তারকারী দল-তাদের কাছে হ্যান্ডকাফ ও লাঠি থাকে। আর দুজনের কাছে থাকে সাউন্ড গ্রেনেড।
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, “সবসময় যে একই নিয়মে অস্ত্র দেওয়া হয় তা নয়। যেমন-একটা সামাজিক অনুষ্ঠান বা গানের অনুষ্ঠানে নিরাপত্তার জন্য যে দল যাবে তাদের কাছে সাধারণত চায়নিজ রাইফেল দেওয়া হয় না।”
তিনি বলেন, “পুলিশের কাছে প্রাণঘাতি অস্ত্র থাকবে না এই ভাবনাটা ইউরোপের জন্য প্রযোজ্য হতে পারে। আমাদের এখানে পুলিশের কাছে যদি অস্ত্র না থাকে তাহলে কোনোভাবেই সামলাতে পারবে না। টহল দলই উল্টো ছিনতাইয়ের কবলে পড়বে, পুলিশ অন্যের নিরাপত্তা দেবে কী।
“আমরা যখন মাঠে কাজ করছি আমাদের কাছে অস্ত্র আছে জেনেও দূর থেকে ককটেল মারছে। আর অস্ত্র নাই যদি জানে, তাহলে তো সংঘবদ্ধ অপরাধীদের প্রধান নিশানা হবে পুলিশ। আপনারা তখন প্রতিদিন খবরে লিখবেন যে আট-দশজন করে পুলিশ সদস্য হতাহত হচ্ছে।”
পুলিশ কখন, কোন পরিস্থিতিতে গুলি করতে পারে ব্যাখ্যা করে এই কর্মকর্তা বলেন, “সবারই আত্মরক্ষার ব্যক্তিগত অধিকার রয়েছে, পুলিশেরও আছে। এরকম চারটি ক্ষেত্রে পুলিশের গুলি করার অনুমতি থাকে। যখন তার নিজের জীবন বিপন্ন হয়, যখন তার সামনে অপরের জীবন বিপন্ন হয়, যখন তার নিজের সম্পদের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে এবং যখন সরকারি বা জনগণের সম্পদ ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এসব ক্ষেত্রে পুলিশের অস্ত্র ব্যবহার করার অধিকার আছে, এজন্য কারও অনুমতি লাগে না।
“অনুমতি লাগে যখন একটা দাঙ্গা শুরু হয়। অনেকটা সময় হাতে আছে কৌশল নির্ধারণের, তখন গুলি করার জন্য একজন হাকিম বা হাকিমের ক্ষমতা আছে, এমন কর্মকর্তার অনুমতি লাগে। আমরা দেখেছি গ্রামের দিকে দাঙ্গা লাগলে হাকিম নিয়োগ করা হত গুলির অনুমতি দেওয়ার জন্য। কিন্তু কখন গুলি করবে এই পরিস্থিতি বোঝার দায়িত্ব কিন্তু পুলিশেরই।”
তিনি বলেন, “এখন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরকেও আপনি অস্ত্র দিচ্ছেন, আর পুলিশকে অস্ত্র রাখতে দেবেন না? পুলিশকে অস্ত্র না দেওয়ার পরিণতি তার কোমর ভেঙে দেওয়ার সমান। অস্ত্র না থাকায় গ্রামের চৌকিদারকে মানুষ যেভাবে দেখে, ডিএমপির মত জটিল জায়গায় অপরাধীরা পুলিশকে সেটুকু ভয়ও পাবে না।”
জানতে চাইলে বরিশাল বিভাগে কর্মরত এসপি পর্যায়ের একজন পুলিশ কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, পুলিশের কাঠামোতে ইন্সপেক্টরের ওপরের কর্মকর্তাদের রাখাই হয়েছে বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণের জন্য। যেহেতু পুলিশের হাতে অনেক ক্ষমতা, সেহেতু তার অপব্যবহারের শঙ্কাও অনেক বেশি।
বাংলাদেশের মত দেশগুলোতে যেখানে ‘রাজনৈতিক চাপে’ পুলিশ তার আইন ও নীতি একেবারেই অনুসরণ করতে পারে না, সেখানে ক্ষমতার অপব্যবহারও অনেক বেশি হয়।
তার মতে, পুলিশ হাতে থাকা অস্ত্র দিয়ে মানুষ মারবে কি না, এটা পুরোপুরি নির্ভর করবে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ওপর।
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, “আপনি খোঁজ নিয়ে দেখেন বিগত ১৫ বছর কতজন কর্মকর্তা শুধুমাত্র ক্রসফায়ার করার জন্য বিপিএম-পিপিএম পুরষ্কার পেয়েছেন, তাহলেই ব্যাপারটা বুঝতে পারবেন। ওই আমলে সরকারের কাছে তুচ্ছ অপরাধ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক বিরোধীদের দমনের প্রধান উপায়ই ছিল ক্রসফায়ার অথবা অবৈধভাবে গ্রেপ্তার করে আটকে রাখা, যেটাকে আপনারা গুম বলেন।
“এখন সরকার যদি না চায়, তাহলে পুলিশের ঘাড়ে কয়টা মাথা যে অস্ত্র নিয়ে মানুষকে গুলি করবে? কক্সবাজারে সেনা কর্মকর্তা সিনহা পুলিশের গুলিতে খুন হওয়ার পরের কয়েক বছর সারা দেশে ক্রসফায়ার যে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, সেটা মনে আছে আপনাদের? কারণ তখন সরকার চায়নি ক্রসফায়ার হোক।”
৫ অগাস্টের পর ঢাকা মহানগর পুলিশ থেকে বদলি হয়ে একটি জেলায় কর্মরত একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলছেন, “জুলাই আন্দোলনের ধাক্কা তো পুলিশের মনোবল ভেঙে দিয়েছে মারাত্মকভাবে। ৫ অগাস্টের পর এমনিতেই বাহিনীকে নড়ানো যায় না। একটু ‘ঝামেলা’ দেখলেই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে ঠেলে দেয়। আর আপনি যদি অস্ত্র না দেন তাহলে তো বিপর্যয় হয়ে যাবে। রাতের টহল দল থানার আশেপাশেই ঘাপটি মেরে থাকবে, কোত্থাও যাবে না। আরে ভাই, ওরও তো নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দরকার।”
ওই কর্মকর্তা বলেন, “আমরা মোহাম্মদপুরে কাজ করছি। যে কয়টা গ্যাংয়ের পোলপান ধরছি এরা কিন্তু ৫ অগাস্টের আগে এতো বেপরোয়া ছিল না। এদের কেউ অটোরিকশা চালাতো, কেউ দোকানে বা কেউ বাসে চালকের সহকারী হিসেবে কাজ করত।
“জুলাই আন্দোলনের সময় এদের অনেকে পুলিশের সঙ্গে সংঘাতে অংশ নেয়। এরপর হঠাৎ করে পুলিশ শূন্য দেশে তারা ছোটখাট ডাকাতি বা ছিনতাই শুরু করে। এরপর তারা যখন দেখল যে পুলিশ ধরে ধরে কেবল জেলে ভরছে, আবার জামিনও পাওয়া যাচ্ছে, কোনো ক্রসফায়ার হচ্ছে না, তখন তারা রাতারাতি খুনে বাহিনীতে পরিণত হয়েছে।
“এই ছেলেরা এখন কথায় কথায় মানুষ কোপায়। তারা যখন জানবে যে পুলিশের কাছে কেবল লাঠি আর শটগান তারা পুলিশকে কোপাতেও এক মুহূর্তও ভাববে না।”
অস্ত্র পুলিশের ‘কর্তৃত্বের’ প্রতীক
পুলিশের হাতে মারণাস্ত্র না দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিষয়ে সাবেক আইজিপি মোহাম্মদ নুরুল হুদা বলছেন, “সরকার নিশ্চয় কোনো কৌশল নিয়েছে। মারণাস্ত্র না থাকলে কী থাকবে, শুধু লাঠি বা কাঁদুনে গ্যাস দিয়েই কাজ হবে কি না? বেআইনি জনতা ছত্রভঙ্গ করার জন্য বা জনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য এটা পর্যাপ্ত হবে কি না?
“তবে মারণাস্ত্র না থাকলে… এক ধরনের অপরাধী আছে যারা সংঘবদ্ধ চক্র বা যারা সংঘবদ্ধ উগ্রবাদী দল বা যারা চরমপন্থি তাদের মোকাবেলা করা তো মুশকিল হয়ে যাবে।”
তিনি বলেন, “অস্ত্রটা হচ্ছে পুলিশের কর্তৃত্বের ভিত্তি। পুলিশ একটা শক্তি প্রয়োগকারী আইনানুগ প্রতিষ্ঠান। অতএব সেই শক্তি প্রয়োগটা বিধিসম্মত হচ্ছে কী না বা মাত্রার মধ্যে থাকছে কী না সেটা হচ্ছে তার আসল সমস্যা, অস্ত্রটা সমস্যা নয়।
“এগুলোর ব্যবহার, প্রয়োগ এসব সমস্যা। সেখানে নির্দেশনা, নিয়ন্ত্রণ, ব্যবস্থাপনা এগুলো জরুরি। ব্যবস্থাপনার একটা জরুরি অংশ হবে আপনি কীভাবে এটার তত্ত্বাবধান করছেন। তত্ত্বাবধান ঠিক থাকলে এগুলো মাত্রাতিরিক্ত প্রয়োগ হবে না।”
বিগত সরকারের আমলে ‘অস্ত্রের মাত্রাতিরিক্ত প্রয়োগ ও যথেচ্ছাচার’ হয়েছে দাবি করে নুরুল হুদা বলেন, “সেটার তো একটা রাজনৈতিক কারণ ছিল। অস্ত্রের প্রয়োগ তো লোক দ্বারা হয়। অস্ত্র তো আর স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলে না। সেগুলো ঠিক করতে হবে।”
ধীরে ধীরে সময় নিয়ে অস্ত্রের ব্যবহার কমিয়ে আনা যেতে পারে মত দিয়ে সাবেক এই পুলিশ প্রধান বলেন, “ক্রমশ এই ধরনের প্রাণঘাতি অস্ত্র বা এর ব্যবহার যদি সীমিত করা যায়। সেই সীমিত করার বিষয়টা লম্বা সময়ের পরিকল্পনার অংশ। এই প্রক্রিয়াটা আমাদের সংস্কৃতি কী, বাস্তবতা কী– তার ওপর নির্ভর করবে। আমাদের অবস্থা তো আর ইংল্যান্ডের মত না। ইংল্যান্ডেও অস্ত্র ব্যবহার হয়, কিন্তু সেগুলোর প্রত্যেকটার জন্য আলাদা ইউনিট। অস্ত্র ব্যবহার করার জন্যও বিশেষ অনুমতি লাগে।
“কিন্তু এখন বাংলাদেশের বাস্তবতায় অস্ত্রটাই হচ্ছে (পুলিশের) কর্তৃত্বের প্রতীক। লোকজন ভয় পায় এবং এই ভয়টা না থাকলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা এবং অপরাধ প্রতিরোধ ও তদন্ত করা মুশকিল হয়ে যায়। সেটা খেয়াল রাখতে হবে।”
সরকারের উপদেষ্টা শুধু এপিবিএনকে অস্ত্র দেওয়ার কথা বলছেন। সেটিও পুলিশের একটি ইউনিট।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক আইজিপি বলেন, “পুলিশের ছয়-সাতটা ইউনিট আছে। কিন্তু সব জায়গায় তো আর এপিবিএন পাওয়া যাবে না। আর এপিবিএনই যে এটা (অস্ত্র ব্যবহারের) করার উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ, তারাই এটা ঠিক মত ব্যবহার করবে আর অন্যরা ব্যবহার করতে পারবে না এটাতো প্রায়োগিক সমস্যা তৈরি করবে।
“যে কোনো জায়গায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে গেলে অস্ত্রটা দরকার। না হলে লোকজন ভাববে এদের কাছে তো কিছু নাই। আসো আমরা দলবদ্ধভাবে…এখন যদি তিন-চারশ লোক লাঠি নিয়ে আসে তাহলে…। এগুলো হচ্ছে প্রায়োগিক সমস্যা।”
এর সমাধান তাহলে কোন পথে?
নুরুল হুদা বলেন, “এগুলো মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে আলাপ করে দেখতে হবে। কীভাবে প্রাণঘাতি অস্ত্রের ব্যবহারও কমবে আবার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকবে সেটার বন্দোবস্ত করতে হবে। একটা ভারসাম্য আনতে হবে।”