Published : 28 Jan 2025, 02:41 PM
রেলের আন্দোলনরত রানিং স্টাফদের সঙ্গে এখন পর্যন্ত সরাসরি কোনো কথাবার্তা না হলেও ‘ইনডিরেক্টলি যোগাযোগ হয়েছে’ বলে জানিয়েছেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম।
তিনি বলেন, “ইনডিরেক্টলি যোগাযোগ হচ্ছে। আমরা অপেক্ষা করছি তারা আমাদের সঙ্গে আলোচনায় বসবে।"
মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনে ভিআইপি ওয়েটিং রুমে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন সচিব ফাহিমুল ইসলাম।
আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনার দরজা ‘খোলা আছে’ জানিয়ে তিনি বলেন, “তারা আসলে তাদের সঙ্গে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে যে কোনো সময় ট্রেন চলাচল শুরু হতে পারে।”
কর্মসূচির পরিপ্রেক্ষিতে অচলাবস্থার বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন কী না- এ প্রশ্নের জবাবে ফাহিমুল ইসলাম বলেন, “অর্থ বিভাগের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। এরকম একটা মোমেন্টে তারা তো কিছু বলতে পারছে না। এ বিষয়ে আলোচনার স্কোপ আছে। উপদেষ্টা স্যার বলেছেন আলোচনা করবেন, সেখানে আমরা অর্থ বিভাগকে নিয়ে যাব।”
মূল বেতনের সঙ্গে রানিং অ্যালাউন্স যোগ করে পেনশন এবং আনুতোষিকের দাবি পূরণ না হওয়ায় কর্মবিরতিতে গেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতি; তাতে সারাদেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
এই কর্মবিরতির কারণে সোমবার মধ্যরাতের পর ঢাকার কমলাপুর স্টেশন থেকে কোনো ট্রেন ছেড়ে যায়নি।ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় বিভিন্ন স্টেশনে এসে ফিরে যাচ্ছেন যাত্রীরা।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, আন্দোলনকারীদের দাবি পূরণের বিষয়টি নিয়ে রেল বিভাগ তাদের করণীয় করেছে। এখন বিষয়টি অর্থ বিভাগের 'হাতে রয়েছে' বলে জানিয়েছেন তিনি।
তবে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনার পথ উন্মুক্ত থাকার কথা রেলপথ উপদেষ্টাও বলেছিলেন সাংবাদিকদের।
আর অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ জানিয়ে দিয়েছেন, আন্দোলনরত রেল কর্মচারীদের 'যৌক্তিক দাবি' আগেই মেনে নেওয়া হয়েছে।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, "আমার মনে হয় মোটামুটি যতটুকু যৌক্তিক ছিল আমরা সুবিধা দিয়েছি। এখন তারা যদি বলে আরো সবগুলো একসাথে দিতে হবে, এখন আমাদের অর্থের সংকুলান তো করতে হবে। আমি তো বাহির থেকে ঋণ করে হলেও মোটামুটি একটা স্থিতিশীল পর্যায়ে নিয়ে এসেছি।
দাবি মেনে নেওয়া না হলে কর্মবিরতি চালিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত অটল অবস্থানের কথা জানিয়েছেন রেলওয়ের ট্রেন পরিচালকদের সংগঠন রেলওয়ে গার্ডস কাউন্সিল কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. আফজাল হোসেন এবং বাংলাদেশ রেলওয়ে গার্ড কাউন্সিল ঢাকা শাখার সভাপতি নাজমুল হাসান অপু।
অপুও সাংবাদিকদের বলেছিলেন, কর্মবিরতি চালিয়ে গেলেও সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসতে তাদের কোনো ‘আপত্তি নেই।
রানিং স্টাফদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কী না জানতে চাইলে সচিব ফাহিমুল ইসলাম বলেন, “শাস্তিমূলক ব্যবস্থার বিষয়ে আমি এই মুহূর্তে বলতে পারছি না। আমরা বলেছি আমাদের আলোচনার দ্বার খুলে রেখেছি। সরকার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কি করবে সেটা বলতে পারিনা। তারা যদি না আসে তাহলে তো আমাদের হাতে নাই ব্যাপারটা। সব সময় সব ব্যাপার কিন্তু রেল মন্ত্রণালয়ের হাতে নিয়ন্ত্রণ থাকে না।”
রানিং স্টাফদের দাবি যৌক্তিক কী সাংবাদিকদের প্রশ্নে সচিবের উত্তর হল, দাবি ‘যৌক্তিক মনে করেই’ তারা আলোচনা করতে চাইছেন।
“এটার জন্য আমরা কিছুটা অর্জন করেছি। ওরা চার বছর ধরে আন্দোলন করছে। আমরা একটা অর্জন নিয়ে এসেছি যৌক্তিক মনে করেই।”
গার্ড, লোকোমাস্টার, সহকারী লোকোমাস্টার, সাব লোকো মাস্টার এবং টিটিইরা রেলের রানিং স্টাফ। এরা ট্রেন চালানোর সঙ্গে সরাসরি জড়িত।
সারাদেশে রেলওয়েতে ১৭ শর বেশি রানিং স্টাফ কাজ করেন। দৈনিক কর্মঘণ্টা ৮ ঘণ্টা হলেও রানিং স্টাফদের গড়ে ১৫–১৮ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। সেজন্য তাদের আগে দেওয়া হত বিশেষ আর্থিক সুবিধা, যাকে রেলওয়ের ভাষায় বলা হয় মাইলেজ। মাইলেজ রানিং স্টাফদের বেতনেরই অংশ।
প্রতি ১০০ কিলোমিটার ট্রেন চালালে রানিং স্টাফরা মূল বেতনের এক দিনের বেসিকের সমপরিমাণ টাকা অতিরিক্ত পেতেন। ৮ ঘণ্টায় এক দিনের কর্মদিবস ধরলে রানিং স্টাফদের প্রতি মাসে কাজ দাঁড়ায় আড়াই বা তিন মাসের সমপরিমাণ। তাদের বেতনও সেভাবেই দেওয়া হত। এ ছাড়া মূল বেতনের হিসাবে অবসরকালীন ভাতা যা হয়, তার সঙ্গে অতিরিক্ত আরও ৭৫ শতাংশ টাকা বেশি দিয়ে তাদের পেনশন দেওয়া হত।
২০২২ সালের জানুয়ারিতে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে রানিং স্টাফদের সেই সুবিধা বাতিল করা হয়। এরপর থেকে বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ঐক্য পরিষদে ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন করছে।
আরও পড়ুন-
সারাদেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ, ভোগান্তিতে যাত্রীরা
রেলের কর্মচারীদের 'যৌক্তিক দাবি' আগেই মেনে নেওয়া হয়েছে: অর্থ উপদেষ্টা
কর্মবিরতি চলবে, আলোচনার পথও খোলা: গার্ড কাউন্সিল সভাপতি
ময়মনসিংহে যাত্রীভর্তি ট্রেন রেখে পালিয়েছে চালক, অবরুদ্ধ স্টেশন সুপার