Published : 09 May 2025, 01:34 AM
গণআন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে বিক্ষোভের মধ্যে স্বেচ্ছাসেবক ও যুবলীগ নিষিদ্ধ হচ্ছে বলে খবর দিয়েছেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
এ প্রক্রিয়া সপ্তাহখানেক আগে শুরু হওয়ার তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, এ সিদ্ধান্তও কিছুদিন আগে হয়েছে।
জুলাই আন্দোলনের এই নেতা বৃহস্পতিবার রাত ১০টা ৪৫ মিনিটে নিজের ফেইসবুক পেইজে লেখেন, “নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ। সপ্তাহখানেক আগে থেকেই প্রসেস করে সব ফরমালিটি শেষ করে এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে।
“গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ এবং তার সহযোগী সংগঠনগুলোর নিষিদ্ধ এবং রাজনৈতিকভাবে নিশ্চিহ্নকরণ নিশ্চিত করাই জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অঙ্গীকার।”
অন্তর্বর্তী সরকার এর আগে আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করেছে।
আগের পোস্টের দুই ঘণ্টা পর রাত ১২টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্ট করেন অন্তর্বর্তী সরকারে দুটি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্বে থাকা আসিফ।
সেখানে লেখেন, “যুবলীগ, সেচ্ছাসেবক লীগ নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত কিছুদিন আগেই হয়েছে। এটা আন্দোলন দমনের কোনো প্রক্রিয়া নয়। বরং আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের পথেই আরেক ধাপ এগিয়ে যাওয়া।
“ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, গণহত্যাকারী রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বাংলাদেশে রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই। গণহত্যাকারীদের বিচার নিশ্চিত করা এবং আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিকভাবে নিষিদ্ধ ও নিশ্চিহ্ন করাই জুলাইয়ের অঙ্গীকার।”
এর আগে সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের দেশত্যাগের খবর নিয়ে আলোচনার মধ্যে রাতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন ও প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান কর্মসূচির ডাক দেন এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ।
তার আহ্বানের পর রাত ১০টার পর যমুনার সামনের সড়কে অবস্থান নিয়েছেন কয়েকশ বিক্ষোভকারী।
যমুনামুখী সব সড়ক বন্ধ করে রেখেছে পুলিশ। কাকরাইল মোড়, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল ক্রসিং, মিন্টু রোডের মোড় থেকেই পুলিশ যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছে।
যমুনায় ব্যারিকেডের সামনে এক সারি পুলিশ দাঁড়ানো। ব্যারিকেডের ভেতরে আর্মড পুলিশ, এরপর ডিবি ও এরপর সেনাবাহিনীর সদস্যরা দাঙ্গা দমনের উপকরণসহ অবস্থান নিয়েছেন। তাদের হাতে রয়েছে ঢাল ও লাঠি। জড়ো হওয়া জমায়েতে স্লোগান ধরেছেন হাসনাত আব্দুল্লাহ।
সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের দেশত্যাগের ঘটনায় ফেইসবুকে এ কর্মসূচির ডাক দেন হাসনাত।
তিনি লেখেন, “গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিত ও রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ না পাওয়া পর্যন্ত আজ (বৃহস্পতিবার) রাত ১০টা থেকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান কর্মসূচি চলবে। যার এজেন্ডায় গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের সুস্পষ্ট বয়ান নাই, তার সাথে আমরা নাই।”
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামও রাতে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার দাবিতে সবাইকে রাজপথে নেমে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।
নিজের ফেইসবুক আইডিতে তিনি লেখেন, “সবাই চলে আসুন। জুলাইয়ের সকল শক্তি, সকল শহীদ পরিবার ও আহতদের আহ্বান জানাই রাজপথে নেমে আসুন। বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম চলবে।”
তিনি লেখেন, “আমরা দেখতে পাচ্ছি ফ্যাসিস্ট ও খুনি আওয়ামী লীগের বিচার নিয়ে টালবাহানা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল ও নিষিদ্ধের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে না। আসামিদের জামিন দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অবৈধ ফ্যাসিস্ট সরকারের রাষ্ট্রপতিকে চোখের সামনে পালিয়ে যেতে দেওয়া হয়েছে। বিচার প্রশ্নে সরকারের প্রতি আমাদের অনাস্থার জায়গা তৈরি হয়েছে।
“জুলাইয়ে আমাদের প্রতিশ্রুতি ছিল খুনিদের বিচার। এবং মুজিববাদীরা বাংলার মাটিতে আর কখনও রাজনীতি করতে পারবে না। আজ রাতেই ফয়সালা হবে আওয়ামী লীগের বিষয়ে। আওয়ামী লীগের বিচার, নিবন্ধন বাতিল ও রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ না আসা পর্যন্ত আমরা রাজপথ থেকে উঠবো না।”
আরও পড়ুন-
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে যমুনার সামনে বিক্ষোভকারীদের অবস্থান