Published : 01 Jun 2025, 12:43 AM
মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে দেশের আট বিভাগেই ‘ভারি থেকে অতি ভারি’ বৃষ্টিপাতের আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আর ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে পাঁচ জেলার পাহাড়ি এলাকায়।
শনিবার আবহাওয়া অধিদপ্তর এসব আভাস দিয়েছে।
অধিদপ্তরের সতর্কবাতায় বলা হয়, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকার কারণে শনিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টি হতে পারে।
অধিদপ্তর বলছে, ভারি বৃষ্টির ফলে চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলার পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও ভূমিধ্বসের আশঙ্কা রয়েছে।
“সেই সঙ্গে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীর কোথাও কোথাও অস্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতা তৈরি হতে পারে।”
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে সর্বোচ্চ ২০২ মিলিমিটার বৃষ্টি ঝরেছে সিলেটে। এছাড়া চট্টগ্রামে ৮২, ময়মনসিংহে ৭৬, নেত্রকোণায় ৬২ ও শ্রীমঙ্গলে ৪৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
সাধারণত ২৪ ঘণ্টায় ১ থেকে ১০ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে তাকে হালকা, ১১ থেকে ২২ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে তাকে মাঝারি, ২৩ থেকে ৪৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে তাকে মাঝারি ধরনের ভারি, ৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে তাকে ভারি এবং ৮৮ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি রেকর্ড হলে তাকে বলা হয়ে থাকে অতি ভারি বৃষ্টিপাত।
লঘুচাপের প্রভাবে দেশের বিভিন্ন এলাকায় কয়েক দিন ধরেই বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের প্রভাবে নদনদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ার আভাস দিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। ছয় জেলায় বন্যা হওয়ার আভাসও দিয়েছে তারা।
পাশের দেশ ভারতের সিকিমে টানা ভারি বৃষ্টিতে তিস্তায় পানি বাড়তে থাকায় ‘রেড অ্যালার্ট’ জারি করেছে দেশটির আবহাওয়া দপ্তর।
সিকিম হিমালয়ের চিতামু হ্রদ থেকে সৃষ্টি নদী তিস্তা ভারতের সীমানা পেরিয়ে নীলফামারী জেলার কালীগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। ফলে তিস্তার উজানে বন্যা দেখা দিলে তার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়ে।
বাংলাদেশের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলেছে, রংপুর বিভাগে তিস্তার সঙ্গে ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি তিন দিন বাড়তে পারে এবং তিস্তার পানি বিপৎসীমায় প্রবাহিত হতে পারে।
উজানে ভারি বৃষ্টির প্রভাবে সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগেও নদনদীর পানি আগামী দুইদিন বাড়তে পারে বলে পূর্বাভাস এসেছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে শনিবার বলেন, সিলেট বিভাগের নদীর পানি এখনও বাড়ছে।
"উজানে ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এর ফলে সিলেট ও মনসিংহ বিভাগের নদীর পানি আগামাী দুই দিন বিপৎসীমা অতিক্রমের সম্ভাবনা রয়েছে। তৃতীয় দিন থেকে কমতে পারে। চট্টগ্রাম বিভাগের নদীগুলোর পানি কাল থেকে কমতে পারে।"
বন্যার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের সারিগোয়াইন, যাদুকাটা, ধলাই, সোমেশ্বরী ও মনু নদীর পানি আগামী দুইদিন বেড়ে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। এই সময় সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা ও মৌলভীবাজার জেলায় নদী সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি তৈরির ঝুঁকি রয়েছে।
সুরমা-কুশিয়ারা নদীর পানি বাড়ছে, এ পরিস্থিতি আগামী দুইদিন অব্যাহত থাকতে পারে। পরের দিন কমে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।
রংপুর বিভাগের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি আগামী তিন দিন বাড়তে পারে এবং তিস্তার পানি সতর্কসীমায় প্রবাহিত হতে পারে।
পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম বিভাগের গোমতী, মুহুরী, ফেনী, হালদা, সাঙ্গু, মাতামুহুরী নদীর পানি স্থিতিশীল থাকতে পারে এবং পরের দুই দিন কমতে পারে।
গঙ্গা-পদ্মা অববাহিকায় নদীর পানি পাঁচ দিন বাড়তে পারে; তবে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।
ব্রহ্মপুত্র-যমুনা অববাহিকার নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে দিয়ে প্রবাহিত হলেও আগামী পাঁচ দিন বাড়তে পারে। তবে বিপৎসীমার নিচেই থাকার আভাস মিলেছে।