Published : 08 Jun 2025, 07:59 PM
মুহাম্মদ ইউনূসের সাক্ষাৎ চেয়ে শেখ হাসিনার ভাগ্নি ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিক যে চিঠি পাঠানোর কথা বলছেন, তা এখনও হাতে না পাওয়ার কথা বলেছে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর।
রোববার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা এখন পর্যন্ত তার কোনো চিঠি হাতে পাইনি।”
দুর্নীতির অভিযোগ ঘিরে তৈরি হওয়া ‘ভুল বোঝাবুঝি’ দূর করার আশায় ইউনূসের লন্ডন সফরে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চান টিউলিপ।
চিঠিতে ইউনূসকে হাউস অব কমন্সে মধ্যাহ্নভোজ বা বিকালে চা পানের আমন্ত্রণ জানান যুক্তরাজ্যের সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী।
দ্বিপক্ষীয় সফরে সোমবার যুক্তরাজ্যের উদ্দেশে রওনা হবেন প্রধান উপদেষ্টা। দুদক চেয়ারম্যান আব্দুল মোমেন ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরও তার সঙ্গী হচ্ছেন।
শেখ হাসিনার আমলে বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফেরানোর উদ্যোগ এগিয়ে নিতেই প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে যাচ্ছেন তারা।
মূলত এ সফরেই ইউনূসের সঙ্গে বসার ইচ্ছা জানিয়ে চিঠি পাঠানোর কথা বলছেন টিউলিপ।
প্রেস সচিবের ভাষ্য, “ঈদুল আজহা উপলক্ষে আমরা ৫ জুন থেকে ছুটিতে আছি। আগামীকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় আমরা যুক্তরাজ্যের উদ্দেশে রওনা হব। যেহেতু চিঠি হাতে পাইনি, তাই এ বিষয়ে মন্তব্য করার সুযোগ নেই।”
কিন্তু টিউলিপের ঘনিষ্ঠ একজন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের লন্ডন প্রতিনিধি সৈয়দ নাহাস পাশাকে বলেছেন, গত ৪ জুন চিঠি পাঠানোর পর ইউনূসের দিক থেকে এখানও কোনো সাড়া পাননি এই ব্রিটিশ এমপি।
ওই ব্যক্তি বলেন, “দুদক কেন পেছনে লেগেছে টিউলিপ তা বুঝতে পারছেন না। তারা লন্ডনে যোগাযোগ না করে ঢাকায় সুধা সদনের ঠিকানায় চিঠি পাঠাচ্ছে।
“টিউলিপ এখন মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সবকিছু তাকে বুঝিয়ে বলতে চান। সমস্ত কাগজপত্র তার কাছে আছে, সেগুলো তিনি দেখাতে চান।”
চিঠিতে টিউলিপ লিখেছেন, “আমি আশা করি এই বৈঠকের মাধ্যমে ঢাকায় দুর্নীতি দমন কমিশনের সেই ভুল বোঝাবুঝি দূর করা সম্ভব হবে— যার মাধ্যমে আমার খালা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিষয়ে আমাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে।”
টিউলিপ লন্ডনের হ্যাম্পস্টিড অ্যান্ড হাইগেট আসনে লেবার পার্টির এমপি। বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যে তার বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর সমালোচনার মধ্যে গত জানুয়ারিতে তিনি যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান।
তার খালা, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতেই মানবতাবিরোধী অপরাধে তার বিচারের উদ্যোগ এগিয়ে নিচ্ছে ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার। পাশাপাশি কয়েকটি দুর্নীতি মামলাও দায়ের করা হয়েছে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে, যেখানে টিউলিপের নামও এসেছে।
চিঠিতে যা আছে
চিঠিতে টিউলিপ লিখেছেন, “আমি জানতে পেরেছি আপনি সরকারি সফরে লন্ডনে আসতে পারেন। আপনার এই সফর উপলক্ষে আমি আপনাকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই। একজন সংসদ সদস্য ও সাবেক মিনিস্টার হিসেবে আমি সবসময় যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি দৃঢ় ও স্বাস্থ্যকর সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি, বিশেষ করে লন্ডনে বসবাসরত বিশাল ব্রিটিশ-বাংলাদেশি কমিউনিটির কারণে, যার একজন গর্বিত সদস্য আমি নিজেও। আমি আপনার সফরের সর্বাঙ্গীন সাফল্য কামনা করি।
“আপনি যখন লন্ডনে থাকবেন, আমি আপনাকে হাউস অব কমন্সে আমার সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজে বা বিকেলের চা-পানের আমন্ত্রণ জানাতে চাই। জনসেবার প্রতি আমাদের অভিন্ন প্রতিশ্রুতি ও দায়বদ্ধতা রয়েছে, আর আমরা যারা সুশাসন, সঠিক প্রক্রিয়া এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, তাদের জন্য এটা চ্যালেঞ্জিং একটা সময়। বিষয়গুলো নিয়ে আপনার অভিমত জানতে পারলে আমার ভালো লাগবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকাকালে আমি সবসময়ই অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে আপনার ঐতিহাসিক কাজের প্রতি আগ্রহী ছিলাম।”
টিউলিপ মনে করছেন, ঢাকার দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষ থেকে তোলা ‘মিথ্যা’ অভিযোগের কারণে যে ‘ভুল বোঝাবুঝি’ তৈরি হয়েছে, লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার সুযোগ পেলে তিনি হয়ত বোঝাতে পারবেন যে, সেসব অভিযোগ ‘সঠিক নয়’।
“তারা (দুদক) মনে করছে, আমার খালা, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিষয়ে আমার কাছে কিছু প্রশ্নের উত্তর পাওয়া দরকার। আমি যুক্তরাজ্যের একজন নাগরিক, লন্ডনে আমার জন্ম। গত এক দশক ধরে আমি পার্লামেন্টে হ্যাম্পস্টেড ও হাইগেট আসনের ভোটারদের প্রতিনিধিত্ব করছি। বাংলাদেশে আমার কোনো সম্পত্তি বা ব্যবসায়িক স্বার্থ নেই। বাংলাদেশের প্রতি আমার আবেগ থাকলেও সেটি আমার জন্মস্থান বা কর্মস্থল নয়, সেখানে আমি থাকিও না।”
এই ব্রিটিশ এমপি অভিযোগ করেছেন, বিষয়টি স্পষ্ট করতে তিনি দুদকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছেন, কিন্তু তারা লন্ডনে তার আইনজীবীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে ‘অস্বীকৃতি জানিয়েছে’ এবং ঢাকায় উল্টোপাল্টা ঠিকানায় বারবার চিঠি পাঠাচ্ছে।
“এই কাল্পনিক তদন্তের প্রতিটি পদক্ষেপ গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হচ্ছে, অথচ আমার আইনজীবীদের সঙ্গে কোনো আলোচনা করা হচ্ছে না। এসব প্রতিবেদন যেন আমার নির্বাচনী এলাকার জনগণ এবং দেশের জন্য আমার গুরুত্বপূর্ণ কাজের পথে বাধা হয়ে না দাঁড়ায়, তা নিশ্চিত করা যে অত্যন্ত জরুরি, তা আপনি বুঝতে পারবেন বলেই আমি বিশ্বাস করি।”
ইউনূসকে টিউলিপ লিখেছেন, “এই বিভ্রান্তি দূর করতে আপনার সহায়তা পেলে আমি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ হব। আমরা সাক্ষাৎ করার আগে আমি আপনার সঙ্গে আমার আইনজীবীদের পক্ষ থেকে দুদককে দেওয়া জবাবগুলো শেয়ার করতে চাই। আমি লন্ডনের পার্লামেন্টারি স্ট্যান্ডার্ডস কমিশনারের রিপোর্টের একটি কপিও আপনাকে দিতে চাই, যেখানে স্পষ্ট করা হয়েছে যে, কোনো ধরনের অনিয়মের সঙ্গে আমি জড়িত ছিলাম না।
“আপনার ব্যস্ত সূচির মধ্যে কখন ওয়েস্টমিনস্টারে আমাদের সাক্ষাৎ সম্ভব, অনুগ্রহ করে জানালে কৃতজ্ঞ থাকব। আপনার সঙ্গে সাক্ষাতের অপেক্ষায় থাকলাম।”
আরও পড়ুন-
সাদা পতাকা তুললেন টিউলিপ, সাক্ষাৎ চান ইউনূসের