Published : 28 Dec 2023, 01:29 PM
ভোটে বাধা দেওয়াকে ‘মানবাধিকারের লঙ্ঘন’ বললেও কাউকে ভোট দিতে বাধ্য করার তৎপরতাকে ‘নির্বাচনী আচরণবিধির লঙ্ঘন’ বললেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন আহমেদ।
বৃহস্পতিবার ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, "পৃথিবীর কোনো কোনো দেশে ভোট বাধ্যতামূলক। ভোট কেউ না দিতে চাইলে সেটা তার ইচ্ছা। কিন্তু কেউ যদি ভোট দিতে চায়, তাকে যদি বাধা দেওয়া হয়, সেটি মানবাধিকারের লঙ্ঘন।"
এসময় সাংবাদিকরা জানতে চান, ভোট দিতে কাউকে বাধ্য করা হলে সেটিও মানবাধিকারের লঙ্ঘন হবে কিনা।
জবাবে কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, "কাউকে ভোট দিতে বাধ্য করা হলে, এটি প্রমাণিত হলে; সেটি হবে আচরণবিধির লঙ্ঘন।"
সেটা কেন মানবাধিকার লঙ্ঘন হবে না জানতে চাইলে চেয়ারম্যান বলেন, "কেউ ভোট দিতে না চাইলে, তাকে জোর করে নিয়ে গেলে, সে দিকটাতেও আমরা নজর রাখছি।"
ইসিকে যা বলল মানবাধিকার কমিশন
ভোটের প্রচারে সহিংসতার মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শান্তিপূর্ণ করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে 'বুদ্ধিবৃত্তিক কৌশল' নির্ধারণ করে কাজ করার পরামর্শ দিচ্ছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।
কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, ভোটের আগে-পরে প্রার্থী ও কর্মীরা উত্তেজনা সৃষ্টি করলে মানুষের আস্থা ব্যাহত হয়। এবার যাতে তা না হয়ম সে বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন তারা।
বিএনপি নির্বাচন বর্জন করলেও এবার অন্তত এক-তৃতীয়াংশ আসনে নিজের দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের চ্যালেঞ্জে পড়েছেন সরকারদলীয় প্রার্থীরা। কোথাও কোথাও ভোটের লড়াই সহিংসতায় রূপ নেওয়ায় প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে।
এ পরিস্থিতির মধ্যে ভোটের দশদিন আগে নির্বাচন ভবনে ইসির সঙ্গে বৈঠকে বসেন মানবাধিকার কমিশনের আট সদস্য।
প্রায় সোয়া এক ঘণ্টার বৈঠক শেষে বেরিয়ে কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, "আমরা অনেক সময় দেখেছি, বিভিন্ন প্রার্থী নির্বাচনের আচরণবিধি ভঙ্গ করে এবং কর্মীরা উত্তেজনা সৃষ্টি করে। সে ধরনের বিষয় যেন না ঘটে, সেটি আমরা কমিশনকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছি। নির্বাচনকালীন সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে অনেক সমসা সৃষ্টি হয়। সেগুলো যেন না হয়, প্রত্যেকে যেন নিজের ভোট নিজে দিতে পারে, সেটি নিশ্চিত করার জন্য আমরা বলেছি।
"আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সেক্ষেত্রে যেন যথাযথ ভূমিকা পালন করে, সে বিষয়টিও আমরা মনে করিয়ে দিয়েছি।"
ভোট-পরবর্তী সহিংসতা বাংলাদেশের নির্বাচনে নিয়মিত ঘটনা। এবার যাতে তেমন 'দুর্ভাগ্যজনক' ঘটনা না ঘটে, সে তাগিদ দিয়ে চেয়ারম্যান বলেন, "২০০১ সালের নির্বাচনের সময় আমরা বিশাল সহিংসতা দেখেছি। সে ধরনের অবস্থা যেন না হয়, যথাযথ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন কৌশল নির্ধারণ করে যেন এ কাজটি সম্পাদন করবেন, সেটিও আমরা বলেছি।"
নির্বাচন বর্জন করা বিএনপি ও সমমনা দলগুলো হরতাল, অবরোধ, অসহযোগ আন্দোলনের মত কর্মসূচি পালন করছে। এ অবস্থায় নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব কি না, এমন প্রশ্নে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, “আমাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব হিসেবে আমাদের নির্বাচন করতে হয়। প্রত্যেকের অধিকার রয়েছে নির্বাচন করার এবং নির্বাচিত হওয়ার। করার ক্ষেত্রে কেউ যদি না করতে চায়, সেক্ষেত্রে নিরপেক্ষতার ব্যাপারটি মনে হয় না কোনো সংঘাত সৃষ্টি করে না।
"কারও ইচ্ছা না করলে তিনি নির্বাচন করবেন না। তবে আহবান জানানো উচিত।… সেক্ষেত্রে কেউ না এসে থাকলে কী করা যাবে?"
ভোটাধিকার বিষয়ে মানবাধিকার কমিশন একটি নির্দেশিকা বের করেছে জানিয়ে কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, "নির্বাচনের ক্ষেত্রে যারা অংশীজন, তাদের প্রত্যেকের ভূমিকা নিয়ে আমরা গাইডলাইন দিয়েছি।
"আমরা চাই দেশে যেন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, অবাধ নির্বাচন হোক। সেজন্য আমরা জনসংযোগ করছি।"