Published : 13 Apr 2025, 01:00 PM
অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের মামলায় খালাস পেয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের সাবেক উপদেষ্টা মোহাম্মদ মোসাদ্দেক আলী ফালু।
রোববার এ রায় ঘোষণা করেন ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ আদালতের বিচারক আব্দুল্লাহ আল মামুন।
রায়ে বিচারক বলেন, “উনার (মোসাদ্দেক আলী ফালু) বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ এ মামলার কোনো অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। উনি তো সম্পদ বিবরণী দাখিল করেছেন। আর তার অবৈধ সম্পদ যদি থাকে, সেটা তো অবরুদ্ধ করতে হতো। সেটাও তো করা হয়নি। সুতরাং এ মামলা থেকে তাকে খালাস দেওয়া হলো।”
দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মীর আহমদ আলী সালাম এ তথ্য জানিয়েছেন।
এদিন স্ত্রীসহ আদালতে উপস্থিত ছিলেন মোসাদ্দেক হোসেন ফালু। রায়ের পর তিনি হাসিখুশি মেজাজে নেতাকর্মীদের অভিবাদন গ্রহণ করেন। তবে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।
সাবেক সংসদ সদস্য ফালুর বিরুদ্ধে মামলাটি হয়েছিল সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে ২০০৭ সালের ৮ জুলাই।
মতিঝিল থানায় এ মামলা দায়ের করেন দুদকের তখনকার কর্মকর্তা রহিমা। মামলায় ফালুর স্ত্রী মাহবুবা সুলতানাকেও আসামি করা হয়েছিল। পরে তিনি অব্যাহতি পান।
তদন্ত শেষে দুদকের সহকারী পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম আদালতে অভিযোগপত্র দেন।
এরপর ফালু ও তার স্ত্রী মামলা বাতিলে হাই কোর্টে আবেদন করেন। সেই কারণে দীর্ঘদিন মামলার বিচার আটকে ছিল।
পরে হাই কোর্ট ফালুর আবেদন খারিজ করে দিলেও তার স্ত্রীর আবেদন গ্রহণ করে তাকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয়।
এতে বিচারিক আদালতে মামলার বিচারের পথ খোলে। ২০১৮ সালের ২৭ অগাস্ট ফালুকে পলাতক দেখিয়ে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয় আদালতে।
এ মামলার অভিযোগে বলা হয়, দুদকের সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিস পেয়ে ২০০৭ সালের ১ মার্চ আইনজীবীর মাধ্যমে সম্পদের হিসাব দাখিল করেন ফালু। তা নিয়ে তদন্তে তার আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন ৪৫ কোটি ৬৬ লাখ ৮ হাজার ৮৬৬ টাকার সম্পদ এবং ১০ কোটি ৬০ লাখ ৪২ হাজার ৫১৪ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের প্রমাণ পায় দুদক।
২০০৪ সালে ঢাকা-১০ আসনের উপনির্বাচনে ফালু ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হওয়ায় ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন পাননি। পরে আওয়ামী লীগ সরকার থাকার সময় কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি।
এরপর রাজনীতি থেকে নিজেকে অনেকটা গুটিয়ে নেন ফালু। ২০১৬ সালের ৬ অগাস্ট তাকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান করা হয়। কিন্তু পদ পাওয়ার পরপরই তার অনাগ্রহের কথা জানিয়ে দেন দলকে। তখন চিকিৎসার জন্য ব্যাংককে অবস্থান করছিলেন ফালু। সেখান থেকেই এক ফ্যাক্স বার্তায় তিনি পদত্যাগপত্র দলের কাছে পাঠিয়ে দেন।
বিএনপির আগের কমিটিতে খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এই বিএনপি নেতা। রাজনীতির পাশাপাশি ব্যবসায়ী হিসেবেও পরিচিতি আছে তার।
বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মালিকদের সমিতি অ্যাটকোর সভাপতি ছিলেন। সিকিউরিটিজ, আবাসন, অ্যাগ্রো, আমদানি-রপ্তানি ব্যবসায় জড়িত এই ব্যবসায়ী বেসরকারি এনটিভির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে একের পর এক মামলায় জর্জরিত ফালু ২০১৭ সালের ৯ মার্চ দেশ ছাড়েন। পটপরিবর্তনের পর গত ১৯ অগাস্ট তিনি দেশে ফেরেন।