Published : 19 Jun 2025, 06:13 PM
ঢাকার উত্তরা এলাকায় ‘নগদ’ পরিবেশকের ১ কোটি ৮ লাখ ১১ হাজার টাকা লুটের ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ, তাদের মধ্যে একজন সাবেক সেনা সদস্য ও একজন চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্য।
ঘটনার চার দিনের মধ্যেই ‘চাঞ্চল্যকর’ এই ডাকাতির ‘রহস্য উদঘাটনের’ দাবি করে পুলিশ বলছে, লুট হওয়া টাকার ৩২ লাখ ১০ হাজার ৭৮০ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। বাকি টাকা উদ্ধার ও জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
গ্রেপ্তাররা হলেন- মো. হাসান (৩৫), গোলাম মোস্তফা ওরফে শাহিন (৫০), শেখ মো. জালাল উদ্দিন ওরফে রবিউল (৪৩), মো. ইমদাদুল শরীফ (২৮) ও মো. সাইফুল ইসলাম ওরফে শিপন (২৭)।
এদের মধ্যে এই চক্রের মূলহোতা গোলাম মোস্তফা ওরফে শাহিন পুলিশের চাকরিচ্যুত একজন কনস্টেবল। তার বিরুদ্ধে অস্ত্রসহ একাধিক মামলা রয়েছে, যেসব মামলায় ইতোপূর্বে গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন তিনি।
আর শেখ মো. জালাল উদ্দিন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট, কিন্তু তিনি নিজেকে ক্যাপ্টেন পরিচয় দিয়ে আসছিলেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার মো. মুহিদুল ইসলাম বলেন, “এ ঘটনায় আমরা নগদের লোকজনকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। কেউ কাউকে চেনে কি-না, কারও কোনো আত্মীয়, বন্ধুবান্ধব এই অফিসে যাতায়াত করেছে কি-না। যাদের গ্রেপ্তার করেছি তাদের জিজ্ঞাসাবাদেও নগদের সংশ্লিষ্টতা এখন পর্যন্ত আমাদের হাতে আসেনি।
“মামলাটা তদন্তাধীন, মনে করি যেই জড়িত থাকুক প্রত্যেকের নাম চলে আসবে।”
এই বিপুল টাকা বহনের তথ্য পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “অনেক সোর্স অনেক সময় কাজ করে। নগদের কোনো লোক এটা করেনি বলা যাবে না, তবে এখন পর্যন্ত বৈধ প্রমাণ হাতে আসেনি। গ্রেপ্তাররাও কেউ বলেননি তাদের (নগদ) অফিসের কোনো লোক এটার সাথে জড়িত বা এটার তথ্য দিয়েছে।”
১৪ জুন সকালে ‘নগদ’ পরিবেশক আব্দুল খালেক নয়নের উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরের ১২ নম্বর রোডের ৩৭ নম্বর বাসা থেকে প্রতিষ্ঠানের চারজন কর্মচারী চারটি ব্যাগে ১ কোটি ৮ লাখ ১১ হাজার টাকা নিয়ে কাছেই নগদের কার্যালয়ে রওনা দেন।
দুটি মোটরসাইকেলে করে যাওয়ার সময় একটি কালো রঙের হাইয়েস মাইক্রোবাস তাদের গতিরোধ করে।
মাইক্রোবাস থেকে ‘র্যাব’ লেখা কালো কটি পরা মুখে কালো কাপড় বাঁধা কয়েকজন অস্ত্র হাতে নেমে টাকার ব্যাগসহ নগদের তিন কর্মচারীকে ধাওয়া করে ধরে ফেলে।
পরে ডাকাতরা তিনজনকে তুরাগ থানাধীন ১৭ নম্বর সেক্টরের বৃন্দাবন এলাকায় ফেলে রেখে পালিয়ে যায়।
এ ঘটনায় আব্দুর রহমানের অভিযোগের ভিত্তিতে উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি মামলা করা হয়। যেটি তদন্তের ধারাবাহিকতায় বুধবার রাতে খিলগাঁও এলাকা থেকে মাইক্রোবাসের চালক হাসানকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে নকল একটি নেমপ্লেট ও নগদ ৮ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার করা হয়।
এরপর মাদারটেক থেকে ডাকাতির ঘটনায় ব্যবহৃত মাইক্রোবাসটি জব্দ করা হয়।
উপকমিশনার মুহিদুল ইসলাম বলেন, “আমরা নয়নসহ টাকা পরিবহনে থাকা চারজনকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। স্বল্পতম সময়ের মধ্যে আমরা গাড়ির নম্বরটি শনাক্ত করতে পারি। গাড়িটি ফলো করে দ্রুত সফলতার দিকে যাই। গাড়ির মালিককে বের করি ও পরে তার দেওয়া তথ্যমতে চালক হাসানকে গ্রেপ্তার করি।
“প্রথমে স্বীকার করেছে সে ৫০ হাজার টাকা পেয়েছে। কিন্তু সাড়ে ৪১ হাজার টাকাই সে খরচ করে ফেলেছে।”
এদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশ-ডিএমপির গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) বুধবার রাতেই ডাকাত চক্রের মূলহোতা শাহিনকে উত্তরা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে ১৩ লাখ ৩৪ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার করা হয়।
পরে শাহিনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আদাবর থেকে ইমদাদুলকে ৮ লাখ ৪ হাজার ৭৮০ টাকাসহ এবং সবুজবাগ থেকে জালালকে ৬৩ হাজার টাকাসহ গ্রেপ্তার করা হয়।
জালাল নিজেকে ক্যাপ্টেন জালাল হিসেবে পরিচয় দিয়ে আসছিলেন, ঘটনার পরদিন লুট হওয়া টাকার ১২ লাখ নিজ ব্যাংক হিসাবে জমা করেন বলে স্বীকার করেছেন তিনি।
সবশেষ বিমানবন্দর রেলস্টেশন এলাকা থেকে শিপনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে র্যাব ও পুলিশের নকল আইডি কার্ড, লাঠি, সিগনাল লাইট, সেনাবাহিনীর লোগো সম্বলিত মানিব্যাগ, বিভিন্ন ব্যাংকের চেকবই ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
এই মামলার ‘রহস্য উদঘাটনকে’ নিজেদের ‘বড় সফলতা’ আখ্যা দিয়ে উপকমিশনার মুহিদুল ইসলাম বলেন, “মামলাটি তদন্তাধীন আছে, আসামিদের আদালতে পাঠিয়ে রিমান্ড আবেদন করা হচ্ছে। রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে আরও কারা জড়িত, টাকা কোথায় রয়েছে খুঁজে বের করতে পারবো।”
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “পুলিশের কোনো দুর্বলতা নেই। ৫ তারিখের পর কতোটা সক্ষমতা নিয়ে পুলিশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে আপনারা দেখেছেন। রমজানের ঈদ, পহেলা বৈশাখ, কোরবানির ঈদ কোথাও কোনো ধরনের ডাকাতি-ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেনি। এটি একটি ঘটনা ঘটেছে, আমরা লক্ষ্য করেছি।
“আমরা মনে করি যে ঘটনাই ঘটুক, সেটা উদঘাটন করার সক্ষমতা এবং দক্ষতা আমাদের রয়েছে। তবে জনগণেরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন। কেউ টাকা বহন করলে আমরা সুরক্ষা দিচ্ছি।”
পাঁচ আসামির ছয় দিনের রিমান্ড
গ্রেপ্তার পাঁচজনের ছয়দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছে ঢাকার মহানগর হাকিম আদালত।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উত্তরা পশ্চিম থানার এসআই সুমন মিয়া আসামিদের আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন।
রিমান্ড আবেদনে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সাবেক সদস্যকে ডাকাত দলের দলনেতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
শুনানি শেষে রিমান্ডের আদেশ দেন মহানগর হাকিম জশীতা ইসলাম।
আদালতের প্রসিকিউশন বিভাগের এসআই আতিকুল ইসলাম পাঁচ আসামির রিমান্ড মঞ্জুরের তথ্য দিয়েছেন।