Published : 10 Jun 2025, 07:48 PM
দেশে করোনাভাইরাসের নতুন ধরনের সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে মাস্ক ব্যবহার ও বারবার হাত ধোয়ার মত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুরোধ করেছেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক আজাদ খান।
সোমবার নিজের ফেইসবুকে এক পোস্টে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানান তিনি।
আজাদ খান লেখেন, “মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তারাধীন প্রতিষ্ঠানসমূহকে এই নির্দেশনা অনুসরণ বা প্রতিপালনের যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হল। কোভিড ১৯ প্রটোকল অনুসরণ বাধ্যতামূলক।”
দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ঈদ ও গ্রীষ্মের ছুটি চলছে। মাধ্যমিক ও নিম্নমাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুলগুলো আগামী ১৯ জুন পর্যন্ত এবং কলেজগুলো আগামী ১২ জুন পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। আর প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ২৩ জুন পর্যন্ত এবং মাদ্রাসাগুলোতে ১৬ জুন পর্যন্ত চলবে ঈদ ও গ্রীষ্মের ছুটি।
ঈদের আগে গত ৪ জুন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেয়।
বারবার প্রয়োজনমত সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, নাক-মুখ ঢাকার জন্য মাস্ক ব্যবহার, আক্রান্ত ব্যক্তির থেকে ৩ ফুট দূরে অবস্থান, অপরিষ্কার হাতে নাক-চোখ-মুখ স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকা এবং হাঁচি কাশির সময় বাহু, টিস্যু বা কাপড় দিয়ে নাক মুখ ঢেকে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়।
ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ভারত ও ভাইরাস ছড়ানো দেশে ভ্রমণ থেকে বিরত থাকতে বলেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ঝুঁকি মোকাবেলায় সব স্থল ও বিমানবন্দরে হেলথ স্ক্রিনিং ও নজরদারি বাড়াতেও বলেছে।
অপরদিকে ঈদের ছুটি শেষে ট্রেনে ঢাকায় ফেরার সময় যাত্রীদের মাস্ক ব্যবহারের অনুরোধ করেছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। মেট্রোরেলের যাত্রীদেরও মাস্ক পরার অনুরোধ জানিয়েছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।
পাঁচ বছর আগে ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর প্রথম চীনে ছড়ানো করোনাভাইরাস দুই মাস পর ছড়িয়েছিল বাংলাদেশেও। এরপর নানা উদ্বেগ আর আতঙ্কের মধ্যে মাস্ক পরাসহ ধাপে ধাপে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হয় টানা তিন বছর।
সেসময় লকডাউনে জনশূন্য হয় নগর, শহর। অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজের কার্যক্রম চলে অনলাইনে। চাকরি হারিয়ে বেকার হয়ে পড়ে মানুষ।
সীমান্ত সংযোগ ও বিমানবন্দরে চলে কঠোর কড়াকড়ি, স্থগিত রাখা হয় আকাশ যোগাযোগ। বিশ্বব্যাপী সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে, ডলারের দাম বাড়ে, বেড়ে যায় নিত্যপণ্যের দামও।
সেইসঙ্গে হাসপাতালগুলো ভরে যায় কোভিড রোগীতে, ঘটে প্রাণহানি। বছর তিনেক এ অবস্থা চলার পর কোভিডের সংক্রমণ কমতে থাকলে ধীরে ধীরে সব স্বাভাবিক হতে শুরু করে।
সম্প্রতি সেই ভাইরাসের নতুন ধরন ‘এনবি.১.৮.১’ এর সংক্রমণ বাড়ার খবর মিলছে। ভারতের কেরালা, গুজরাট, পশ্চিমবঙ্গ ও দিল্লিকে এখন ‘সংক্রমণের হটস্পট’ ধরা হচ্ছে। দেশটিতে এক দিনেই মৃত্যু হয়েছে ছয়জনের।
এ অবস্থার মধ্যে বাংলাদেশেও কোভিড আক্রান্ত হয়ে বৃহস্পতিবার ঢাকায় একজনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বাংলাদেশে দেড় বছরের মধ্যে কোভিডে মৃত্যুর প্রথম ঘটনা সেটি।
সংক্রমণ যেন না বাড়ে, সেজন্য জনসমাগমে মাস্ক পরতে জনসাধারণের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
২০২০ সালে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পর দেশে ১ কোটি ৫৭ লাখ ২৬ হাজার ২২৪টি নমুনা পরীক্ষা করে ২০ লাখ ৫১ হাজার ৭৩৯ জন রোগী শনাক্ত হয়। তাদের মধ্যে মৃত্যু হয় ২৯ হাজার ৫০০ জনের।
২০২৪ সালে এই রোগে কেউ মারা যাননি। ২০২৩ সালে ৩৭ জন, ২০২২ সালে ১৩৬৮ জন রোগী মারা যান।
কোভিডে সবচেয়ে বেশি ২০ হাজার ৫১৩ জনের মৃত্যু হয় ২০২১ সালে। আর মহামারীর প্রথম বছর ২০২০ সালে কেড়েছিল ৭ হাজার ৫৫৯ জনের প্রাণ।
আরও পড়ুন-
কোভিড সংক্রমণে 'ঊর্ধ্বগতি', ফিরতি যাত্রায় ট্রেনে মাস্ক পরার অনুরোধ
কোভিডের ঊর্ধ্বগতি, জনসমাগমে মাস্ক পরার অনুরোধ
কোভিডের নতুন ঝুঁকি: জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ভারতে না যাওয়ার পরামর্শ