Published : 28 May 2025, 03:31 PM
সরকারি চাকরি আইন সংশোধন অধ্যাদেশ বাতিল না হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন এক ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন সচিবালয়ে আন্দোলনরত কর্মচারীরা।
বুধবার সচিবালয়ে কর্মচারী ইউনিয়ন কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘোষণা দেন সচিবালয় কর্মকর্তা কর্মচারী ঐক্য ফোরামের কো-চেয়ারম্যান বাদিউল কবীর।
তিনি বলেছেন বৃহস্পতিবার থেকে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত এক ঘণ্টার শান্তিপূর্ণ কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করবেন তারা।
কবীর বলেন, “এই কালো আইন সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহারের ক্ষেত্রে মোটামুটি একটা সবুজ সংকেত পেয়েছি। প্রধান উপদেষ্টা দেশে ফিরলে উপদেষ্টারা এটা নিয়ে কথা বলবেন। আন্দোলনের ফসল হিসাবে আমাদের দাবি নিয়ে বিচার বিশ্লেষণ শুরু হয়েছে। আজকে দায়িত্বপ্রাপ্ত কয়েকজন সচিব মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে কথা বলেছেন। উনারা পরিষ্কার করে কিছু না বললেও আমাদের বুঝতে বাকি নেই।
“এই পরিস্থিতিতে আমরা আগামীকাল থেকে প্রতিদিন সকাল ১০ টা থেকে ১১টা পর্যন্ত এক ঘণ্টার শান্তিপূর্ণ কর্মবিরতি পালন করব। হাসপাতালসহ অন্যান্য জরুরি সেবার ক্ষেত্রে প্রয়োজনে আরও কম সময় কর্মবিরতি চলবে।”
ভূমি সচিব এ এসএম সালেহ আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, এদিন সকালে তিনি মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশীদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করেছেন।
জাপান সফর শেষে দেশে ফেরার পর প্রধান উপদেষ্টার কাছে বিষয়টি মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশীদ তুলে ধরবেন।
“এখন প্রধান উপদেষ্টা মহোদয় জাপান থেকে দেশে ফিরলে বাকিটা বলা যাবে। আমি যেহেতু দায়িত্বপ্রাপ্ত না, তাই কিছু বলতে পারছি না।”
উপদেষ্টা পরিষদ বৃহস্পতিবার সরকারি চাকরি আইন সংশোধন করে অধ্যাদেশ আকারে জারি করার প্রস্তাবে সায় দেয়।
এর প্রতিবাদে শনিবার সকাল থেকে দিনভর সচিবালয়ে বিক্ষোভ করেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাদের আপত্তির মধ্যেই রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে রোববার রাতে অধ্যাদেশ জারি করা হয়।
সেখানে পুরোনো আইনের সঙ্গে ’৩৭ক’ নামের আরেকটি ধারা সংযোজন করা হয়।
নতুন ধারায় একজন কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে দুই দফায় সাত দিন করে নোটিসের পর দায়ী হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা রাখার বিধান রাখা হয়েছে।
অধ্যাদেশে ‘আচরণ বা দণ্ড সংক্রান্ত’ বিশেষ বিধানে বলা হয়েছে-
>> কেউ যদি এমন কাজ করে যা অনানুগত্যের সামিল এবং যা অন্য কর্মচারীদের মাঝে অনানুগত্য সৃষ্টি করতে পারে বা শৃঙ্খলা বিঘ্ন ঘটাতে পারে বা অন্যের কর্তব্য পালনে বাধার সৃষ্টি করতে পারে;
>> এককভাবে বা সম্মিলিতভাবে ছুটি ব্যতীত কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলে। কাউকে কর্মবিরতিতে বাধ্য বা উস্কানি দেওয়া, অন্য কর্মচারীকে কাজে বাধা দেওয়া হলে;
>> কোনো কর্মচারীকে তার কর্মস্থলে আসতে বা কাজ করতে বাধা দেওয়া হলে তা দণ্ডনীয় অপরাধ হবে।
এসব অপরাধের শাস্তি হিসেবে পদাবনতি বা গ্রেড অবনতি, চাকরি থেকে অপসারণ কিংবা চাকরি থেকে বরখাস্ত করার বিধান রাখা হয়েছে।
এসব অসদাচরণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অভিযোগ গঠন, সাত দিনের সময় দিয়ে কারণ দর্শানোর নোটিস, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কারণ জানিয়ে জবাব না দিলে আবার সাত দিনের নোটিস দেওয়ার পর তা বিবেচনা করে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারবে।
তবে অভিযুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীর আপিল রাখার সুযোগ রয়েছে। দণ্ডের নোটিস হাতে পাওয়ার ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে আপিল করা যাবে।
নতুন এই অধ্যাদেশকে আন্দোলনকারীরা বলছেন ‘নিবর্তনমূলক কালো আইন’।
এ পরিস্থিতিতে সোম ও মঙ্গলবারও দিনভর আন্দোলন চলে। অধ্যাদেশ সংশোধন নয়, পুরোপুরি বাতিলের দাবি তোলেন আন্দোলনকারীরা।
লাগাতার আন্দোলনের মধ্যে মঙ্গলবার সকালে মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশিদ বেশ কয়েকজন সচিবকে নিয়ে জরুরি সভা করেন। ওই সভায় অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে আন্দোলনরত কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনা করার সিদ্ধান্ত হয়।
পরে ভূমি সচিব, গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব, পরিসংখ্যান সচিব, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব ও যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন।
মঙ্গলবার বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, সকল সচিব মিলে বুধবার সকাল ১০টায় মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে বিষয়টি অবহিত করবেন। এরপর সরকার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে এবং সেটি জানানো হবে।
সচিবদের সঙ্গে বৈঠকে আশ্বাস পেয়ে বুধবারের জন্য আন্দোলন স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত জানিয়েছিলেন সরকারি কর্মচারীরা।
পুরনো খবর...
সরকারি চাকরি আইন: কর্মচারীদের দাবি প্রধান উপদেষ্টার কাছে তুলবেন
সচিবালয়ের বাইরে কড়া নিরাপত্তা, ভেতরে কর্মচারীদের বিক্ষোভ
সরকারি কর্মচারীদের আন্দোলন একদিনের জন্য স্থগিত
সচিবালয়ের কর্মচারীরা বললেন, অধ্যাদেশ বাতিল না হলে আন্দোলন চলবেই
দিনভর বিক্ষোভে অচল সচিবালয়, সরকার নিশ্চুপ
বিক্ষোভের মধ্যেই সরকারি চাকরি আইন সংশোধনের অধ্যাদেশ জারি
সরকারি চাকরি আইন সংশোধন: সচিবালয়ে দ্বিতীয় দিনের মত বিক্ষোভ
সচিবালয়ে বিক্ষোভ: আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, বললেন স্বরাষ্ট
সচিবালয়ের কর্মচারীরা বললেন, অধ্যাদেশ বাতিল না হলে আন্দোলন চলবেই