Published : 05 May 2025, 12:41 AM
এমপিওভুক্ত বেসরকারি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের দাবিতে একদল নিয়োগপ্রার্থী শিক্ষক বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) কার্যালয়ে ‘জোর করে’ ঢুকে কর্মচারীদের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে জড়িয়েছেন।
রোববার রাজধানীর ইস্কাটনের রেডক্রিসেন্ট বোরাক টাওয়ারের তৃতীয় তলায় সরকারি সংস্থাটির কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
’জোর জবরদস্তি’ করে নিয়োগপ্রত্যাশীদের সেখানে ঢুকে পড়াকে ’মব হামলা‘ হিসেবে অভিহিত করেছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। কার্যালয়ে ঢুকে আন্দোলনকারীরা ’বিশেষ সুবিধা’ দাবি করেছেন বলে অভিযোগ এনটিআরসির কর্মকর্তাদের।
তারা বলেন, নিয়োগের জন্য গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দাবিতে আন্দোলনরত ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের এনটিআরসির কার্যালয়ে ঢুকে পড়ার সময় সেখানে ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের মৌখিক পরীক্ষা চলছিল।
অপরদিকে আন্দোলনকারী চাকরিপ্রত্যাশীরা বলছেন, তারা যৌক্তিক দাবি নিয়েই সেখানে গিয়েছিলেন।
আন্দোলনকারীদের নেতা ইউসুফ ইমনের দাবি তারা ভাইভা চলাকালীন এনটিআরসিএ কার্যালয়ে প্রবেশ করেননি। তার দাবি এসময় কোনো ধস্তাধস্তির ঘটনাও ঘটেনি।
পরে পুলিশের মধ্যস্ততায় দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত এনটিআরসিএর সম্মেলন কক্ষে আন্দোলনরতদের সঙ্গে বৈঠক করেন সংস্থার চেয়ারম্যান মোহাম্মাদ মফিজুর রহমানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এসময় সেখানে আন্দোলনরত প্রার্থীদের প্রতিনিধিদের পাশাপাশি কয়েকজন পুলিশ সদস্য ও সংবাদকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
সভায় চেয়ারম্যান প্রার্থীদের বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় বয়সসীমা নির্ধারণ করেছেন। আপিল বিভাগ সনদের মেয়াদ নির্ধারণ করেছে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার বাইরে কোনো উদ্যোগ নেওয়ার এখতিয়ার তার নেই।
প্রার্থীরা বিশেষ পরিস্থিতিতে নিজেদের বঞ্চিত হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে তাদের আবেদনের সুযোগ দিয়ে বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তি জারির দাবি করেন।
সভা শেষে এনটিআরসিএর চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের বলেন, “ওদের সঙ্গে আলোচনা করে এটা সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, ১৭তম ব্যাচের কোনো রিভিউ মামলা পেন্ডিং নেই। ফলে এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবে।”
এ আশ্বাসে সন্তুষ্ট হয়ে প্রার্থীরা এনটিআরসিএ কার্যালয় ছেড়ে চলে যান।
দুপুরের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা দুপুরে যখন নামাজে দাঁড়িয়েছিলাম, তখন তারা ভাইভা চলাকালীন জোর করে কার্যালয়ে প্রবেশ করেছেন। তাদের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে আমাদের একজন কর্মচারী আহত হয়েছেন। এটা ঘটনাকে আমি কোন বিশেষণ দেব না, আপনারাই বিবেচনা করুন।”
এ ঘটনাকে ‘মব হামলা’ বলে মনে করছে এনটিআরসিএর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। কাজী কামরুল আহছান নামে এক কর্মকর্তা বলেন, “এখনতো মবই চলছে।”
সভা শেষ হওয়া পর্যন্ত সেখানে উপস্থিত থাকা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের রমনা বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনার (পেট্রোল-রমনা) মো. আমজাদ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রার্থীরা তাদের দাবি দাওয়া তুলে ধরে তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আলোচনা যাতে শেষ হয় সে চেষ্টা করেছি। সভা শেষে তারা জটিলতা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন, এতে প্রার্থীরা খুশি।”
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “এটি মব না।”
আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার ফল প্রকাশ করতে এনটিআরসিএ দেরি করায় উত্তীর্ণ ৭৩৯ জন প্রার্থীর বয়সসীমা পার হয়ে গেছে। এ কারণে শুধু ভুক্তভোগীদের আবেদনের সুযোগ দিয়ে শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য ‘বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তি’ জারির দাবি জানিয়েছেন।
এনটিআরসিএ কার্যালয়ে ঢুকে পড়ারা আগে তারা ভবনের সামনে মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন আন্দোলনকারীরা।
কেন বিশেষ সুবিধা দাবি
ইউসুফ ইমন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “১৭তম শিক্ষক পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি ২০২০ সালের ২৩ জানুয়ারি প্রকাশ করা হয়। পরবর্তী সময়ে কোভিড মহামারী ও এনটিআরসিএ দাপ্তরিক কারণে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ থেকে চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করতে চার বছরের বেশি সময় চলে যায়। চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করে ২০২৩ সালের ২৮ ডিসেম্বর। শিক্ষক পদে নিয়োগের বয়সসীমা ৩৫ বছর। চূড়ান্ত ফল প্রকাশের পর আমরা উত্তীর্ণ হয়ে সনদ পাই। পরে ২০২৪ সালের মার্চে নিয়োগের গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হলেও আমরা আবেদন করতে পারিনি। কারণ ফল প্রকাশের চার বছর চলে যাওয়ায় আমাদের ৭৩৯ জনের বয়সসীমা পার হয়ে গেছে। এদিকে বয়সসীমা পার হলেও আপিল বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী আমাদের সনদের মেয়াদ আছে।
“প্রথম থেকে ১৭তম নিবন্ধনে উত্তীর্ণরা শিক্ষক পদে নিয়োগ পেতে আবেদনের সুযোগ পেলেও আমরা কোন আবেদন করতে পারিনি। আমরা তখন আবেদনের সুযোগ দাবি করে এনটিআরসিএতে আন্দোলন করি। তখন এনটিআরসিএ আমাদের বয়স শিথিল করে আবেদনের সুযোগ দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে লিখিত প্রস্তাব পাঠায়। কিন্তু আমরা আবেদনের সুযোগ পাইনি।”
৫ অগাস্ট সরকারের পট পরিবর্তনের পর ফের ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধনে উত্তীর্ণ হয়েও বয়সসীমা পার হওয়া প্রার্থীরা আন্দোলন শুরু করলে এনটিআরসিএ তাদের জন্য আবেদনের সুযোগ দিয়ে একটি ‘বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তি’ জারির প্রস্তাব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠিয়েছিল, যোগ করেন তিনি।
ইউসুফ বলেন, “শিক্ষা মন্ত্রণালয় তা আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য পাঠায়। আইন ও বিচার বিভাগ এ বিষয়ে তাদের মতামত জানায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে। পরে চলতি বছরের ২৭ মার্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তির বিষয়ে এনটিআরসিএর কাছে রূপরেখা চায়। তবে এনটিআরসিএর চেয়ারম্যান শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে লিখিতভাবে জানান, আমাদের নিয়োগ নিয়ে মামলা চলছে। কিন্তু অন্য ব্যাচের একটি মামলা আপিল বিভাগে রিভিউ পেন্ডিং রয়েছে, যেটি আমাদের না।
“গত ২৩ ফেব্রুয়ারি আইন মন্ত্রণালয়ের দেওয়া মতামতে বলা হয়, আপিল বিভাগের রায় অনুযায়ী সনদের মেয়াদ ৩ বছর থাকায় ও কোভিড-১৯ বিবেচনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় বয়সসীমা পার হওয়া প্রার্থীদের ক্ষেত্রে কোন তারিখ থেকে বয়স গণ্য করা হবে তা কর্তৃপক্ষের বিবেচনার ওপর নির্ভরশীল। এ মতামত বাস্তবায়নে জন্য আমরা এনটিআরসিএর চেয়ারম্যানকে বারবার অনুরোধ করে বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তি জারির আবেদন করলেও তিনি কর্ণপাত করেননি।”
এ নিয়ে আলোচনার জন্যই তারা এনটিআরসিএ কার্যালয়ে গিয়েছিলেন বলে দাবি করেন তিনি।