Published : 01 Jun 2025, 10:17 PM
ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইয়ে সেনাবাহিনীর ‘স্পষ্ট অবস্থান এবং কার্যক্রম’ দেখতে চান জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা সারজিস আলম।
জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের রংপুরের বাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনায় সেনাবাহিনীর ‘অপারেশন’ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
রোববার সন্ধ্যায় ফেইসবুক পোস্টে এসব কথা বলেন এনসিপির এ মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল)।
তিনি বলেন, "বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে আমরা এখনো যথেষ্ট সম্মানের জায়গায় রাখি। কিন্তু ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইয়ে তাদেরও স্পষ্ট অবস্থান এবং কার্যক্রম আমরা দেখতে চাই।"
সারজিস বলেন, "জাতীয় পার্টির যে সন্ত্রাসীরা অবৈধ মেয়র মোস্তফার নেতৃত্বে প্রথম ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্যের বিক্ষোভ মিছিলে হামলা চালিয়েছে, যে জিএম কাদের এলাকায় সন্ত্রাসীদেরকে নিয়ে বৈঠক করে পরিস্থিতিকে উসকে দিয়েছে, তাদেরকে ধরতে কয়টি অভিযান চালানো হয়েছে?"
জাতীয় পার্টিকে আওয়ামী লীগের বি টিম দাবি করে তিনি বলেন, "৩ দিন আগে রংপুরে জাতীয় পার্টি থেকে মনোনীত অবৈধ নির্বাচনের একাধিকবারের অবৈধ মেয়র মোস্তফা আবার মেয়র পদে ফিরে আসার জন্য আওয়ামী লীগের পোষ্য ‘বি টিম’ জাতীয় পার্টি এবং আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদেরকে সঙ্গে নিয়ে রংপুর শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে!
"আওয়ামী লীগ ও ভারতের সঙ্গে নেগোসিয়েশন করে সাময়িক বিরোধিতার ভান ধরে বিরোধী দলের যাবতীয় সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করেছে জাতীয় পার্টি। এমনকি বিএনপি জামায়াত যখন প্রহসনের অবৈধ নির্বাচন থেকে দূরে থেকেছে, হাজারো অন্যায়, জুলুম, অত্যাচার সহ্য করেছে, তখন এই জাতীয় পার্টি বিরোধী দল সেজে আওয়ামী লীগকে সরকারি দলের বৈধতা দেওয়ার অপচেষ্টা করেছে! সকল সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করেছে!"
এনসিপির বিক্ষোভে জাতীয় পার্টি হামলা চালিয়েছে দাবি করে সারজিস বলেন, "২ দিন আগে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের রংপুরে গিয়ে আবার স্থানীয় জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদেরকে নিয়ে মাঠে নামার পরিকল্পনা শুরু করেছে!
"অতঃপর যখন রংপুরের ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য একসঙ্গে জিএম কাদের ও জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে অহিংস বিক্ষোভ মিছিল করে, তখন জাতীয় পার্টি সন্ত্রাসীরা সেই বিক্ষোভ মিছিলে প্রথম হামলা চালায়!"
রংপুরে বৃহস্পতিবার রাতে জি এম কাদেরের বাসভবনে হামলা হয়। এ ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও এনসিপির সঙ্গে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
এরপর শনিবার মধ্যরাতে রংপুর শহরের পায়রা চত্বরে বিএনপির তিনজন এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুজন নেতার সঙ্গে কথা বলেন সেনাবাহিনীর ৭২ পদাতিক ব্রিগেডের কমান্ডার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কাইয়ুম।
আলোচনার এক পর্যায়ে রাত ১টার দিকে সেখানে হাজির হন সারজিস। সেনা কর্মকর্তা হুমায়ুন কাইয়ুম তার সঙ্গেও কথা বলেন।
এসব ঘটনার কথা তুলে ধরে সারজিস ফেইসবুকে লিখেছেন, "জিএম কাদেরের বাড়িতে একটি বাইক পোড়ানোর ঘটনা দেখা যায়। এই বাইক পোড়ানোর মব বা ভ্যান্ডালিজমকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে রংপুরের সেনাবাহিনী সংশ্লিষ্টদেরকে খুঁজতে নয় মাসের সর্বোচ্চ বড় অপারেশনের জন্য মাঠে নামে! মহানগর বিএনপির সভাপতি, সেক্রেটারি এবং জেলা ও মহানগরের বৈষম্যবিরোধীর আহ্বায়ককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ করা হতেই পারে, এটা নিয়ে কোনো সমস্যা নেই।
"কিন্তু যে ঘটনাগুলোকে কেন্দ্র করে সর্বশেষ এ ঘটনা ঘটেছে, সেই ঘটনাগুলোর কারণ কিংবা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে না খুঁজে সর্বশেষ বিষয় নিয়ে আদিখ্যেতা দেখানো শুরু হয়। জিএম কাদেরের বাড়ির পুরনো বাইক আর সামান্য আগুন নিয়ে যাদের এত চিন্তা, তারা বিগত নয় মাসে আওয়ামী সন্ত্রাসী খুনিদেরকে ধরতে কয়টা অভিযান চালিয়েছে? কতজনকে গ্রেপ্তার করেছে?"
তিনি বলেন, "যে মোস্তফা একাধিক অবৈধ নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হয়ে তার পরিবারের সদস্য ও সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে রংপুরে লুটপাট চালিয়েছে, কোটি টাকা দুর্নীতির আখড়া বানিয়েছে, সিটি করপোরেশনকে ডাকাতির ক্ষেত্র বানিয়েছে, সেই মেয়র মোস্তফাকে ধরতে কয়দিন অপারেশন চালানো হয়েছে?
"নয় মাসে রংপুরের বিভিন্ন জায়গায় আওয়ামী দখলদারদের থেকে জনগণের ন্যায্য সম্পদ অর্থ উদ্ধারের জন্য কয়টি অভিযান চালানো হয়েছে?"
"নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের সন্ত্রাসীরা তাদেরই ‘বি টিম’ জাতীয় পার্টি রূপে ফিরে আসার চেষ্টা করলে সেই চেষ্টাকে ব্যর্থতায় পর্যবসিত করা হবে," বলেন সারজিস।
আরও পড়ুন
ভিডিও দেখিয়ে বিএনপি-এনসিপির তথ্য চাইল সেনাবাহিনী, হঠাৎ হাজির সারজিস
রংপুরে জিএম কাদেরের বাড়িতে হামলা, বৈষম্যবিরোধীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ