Published : 08 Oct 2023, 05:39 PM
রাজনৈতিক সমঝোতা নির্বাচন কমিশনের কাজ নয় বলে সাফ জানিয়ে দিলেন সাংবিধানিক সংস্থাটির একজন কমিশনার। তিনি বলেছেন, এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ তারা নেবেন না, এমনকি এ বিষয়ে কথাও বলবেন না।
নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে প্রধান দুই রাজনৈতিক শক্তি আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমঝোতায় আসতে না পারলেও ভোটের প্রস্তুতি এগিয়ে নেওয়া ছাড়া কমিশনের কিছুই করার থাকবে না বলেও জানিয়েছেন তিনি। বলেছেন, যারা আসবে, তাদের নিয়েই ভোট হবে।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ক্ষণ গণনা শুরুর আর তিন সপ্তাহ বাকি থাকতে নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক শক্তির মুখোমুখি অবস্থানের মধ্যে এমন বক্তব্য রাখলেন নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা।
রোববার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন এই কমিশনার।
এক মাস পরেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার কথা রয়েছে। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ভোট করার লক্ষ্য নিয়ে আগাচ্ছে কমিশন। তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি ও সমমনারা নির্বাচন নয়, তারা নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে ‘কঠোর আন্দোলনের’।
চলতি অক্টোবর মাসেই বড় কর্মসূচির কথা জানিয়েছিলেন বিরোধী জোটের নেতারা। তবে মাসের শেষ প্রান্তিকে দুর্গাপূজার জন্য তা পেছানোর সিদ্ধান্ত এসেছে।
এরপর রাজনীতিতে কী হয়, তা নিয়ে জনমনে আছে শঙ্কা। দুই দলের এমন মুখোমুখি অবস্থানের মধ্যে ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচন হয় ব্যাপক সহিংসতা ও প্রাণহানির মধ্য দিয়ে।
সে সময় দুই শক্তির মধ্যে মধ্যস্ততার চেষ্টায় ছিল দেশি-বিদেশি নানা পক্ষ এবং বিভিন্ন রাষ্ট্র। এবার তেমন কোনো উদ্যোগ নেই, যদিও পশ্চিমারা সরকারের ওপর নানাভাবে চাপ বাড়িয়ে চলছে।
নির্বাচন কমিশন এ ক্ষেত্রে কোনো পদক্ষেপ নেবে কি না, জিজ্ঞাসা ছিল সাংবাদিকদের। জবাবে তিনি বলেন, “আমরা রাজনৈতিক সমঝোতার বিষয়ে কিছুই বলব না। কারণ, এটা আমাদের কাজও নয়, আমাদের হাতের মধ্যেও নয়। তবে নির্বাচন করার পথে সংবিধান অনুযায়ী এগিয়ে যাচ্ছে এবং যথাসময়ে নির্বাচন করার জন্য প্রস্তুত আছি।”
রাজনৈতিক সমঝোতা না হলেও কমিশনের করার কিছু থাকবে না জানিয়ে তিনি বলেন, “সেক্ষেত্রে যারা অংশ নেবে তাদেরকে নিয়েই ভোট করতে হবে।”
“ইসির কী করার আছে?”- এই প্রশ্ন রেখে রাশেদা সুলতানা বলেন, “রাজনৈতিক সমঝোতা না হলে দল তো আরও আছে। অন্য যে দলগুলো আসবে আমাদের তাদের নিয়ে (নির্বাচন) করব।
“কী করব এখন আমরা আপনারাই বলুন, আর কী করার আছে আমাদের, বলুন”- প্রশ্নকর্তা সাংবাদিকের দিকেই পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দেন নির্বাচন কমিশনার।
বলেন, “আমাদের উদ্যোগ নেওয়ার কিছু নেই। আমাদের দূতিয়ালি করারও সুযোগ নেই, মধ্যস্থতা করারও কিছু নেই।”
ভোটকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন নতুন করে কোনো সংলাপের চিন্তা নেই বলেও জানিয়ে দেন তিনি। বলেন, “সংলাপের কোনো উদ্যোগ হয়নি। কখন কীভাবে সংলাপ করব- যখন হবে তখন দেখা যাবে।
“আমরা আমাদের মত করে চেষ্টা করে যাচ্ছি একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের। আমাদের চাওয়া ও লক্ষ্য একটাই, সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন। ভোটার আসবে ভোট দেবে এটাই চাওয়া।”
আস্থা অর্জনে সব সময় চেষ্টা ছিল
নির্বাচন কমিশন সবার সবার আস্থা অর্জনে সব সময় সচেষ্ট ছিল এবং আছে বলেও দাবি করেন এ নির্বাচন কমিশনার।
তিনি বলেন, “আস্থার জায়গায় ডেভেলপ করার জন্য আমরা নিরন্তর কাজ করছি। কেউ বলতে পারবেন না আমরা চেষ্টা করছি না। নিরপেক্ষভাবে কাজ করে যাচ্ছি, আমরা এই বিষয়ে পিছপা হব না। উনারাদেরকেও (ইসিকে যারা আস্থায় নিতে পারছে না) তো আস্থা- মানসিকতার উন্নয়ন করতে হবে।”
ইসির অবস্থান হচ্ছে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করা জানিয়ে রাশেদা সুলতানা বলেন, “এ পর্যন্ত যতগুলো নির্বাচন হয়েছে কোথাও কোনো ব্যত্যয় হয়নি।”
জাতীয় নির্বাচনে দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকদের বিষয়ে তিনি বলেন, “পর্যবেক্ষক এলেও গুরুত্বপূর্ণ, না এলেও গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের বড় পর্যবেক্ষক আমাদের জনগণ, আমাদের মিডিয়া আছে। মিডিয়াও গুরুত্বপূর্ণ। আমরা চাই একটা সুষ্ঠু নির্বাচন।”