Published : 11 Jun 2025, 09:04 AM
জাতীয় সংসদের ৭৫টি আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণে এখন পর্যন্ত ৬০৭টি আবেদন পাওয়ার কথা বলছে নির্বাচন কশিমন (ইসি)।
কিন্তু খসড়া প্রকাশের আগেই জমা পড়া এসব আবেদনের নিষ্পত্তি কীভাবে হবে, সে সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি।
কমিশন বলছে, তারা পরের সভায় এসব নিয়ে আলোচনা করবে। তবে কেউ কেউ বলছেন, ভোটার কিংবা জনসংখ্যা, সীমানা নির্ধারণে যেকোনো একটি বিষয়ে বিবেচনা নেওয়া উচিত।
সংসদ নির্বাচনের আগে সীমানা নির্ধারণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সেক্ষেত্রে ৩০০ আসনের সীমানার খসড়া প্রকাশ করে থাকে ইসি। এ খসড়া প্রস্তাবের ওপর দাবি-আপত্তি শুনানি শেষে চূড়ান্ত সীমানার গেজেট প্রকাশ করা হয়।
ভোট সামনে রেখে কয়েক মাস আগে আসনের সীমানা চূড়ান্ত হয়। এবার খসড়া প্রকাশ কবে নাগাদ করা হবে, সে বিষয়ে পরবর্তী কমিশন সভায় আলোচনা হতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন ইসি কর্মকর্তারা।
এএমএম নাসির উদ্দিন নেতৃত্বাধীন ইসির ষষ্ঠ কমিশন সভা হয় বুধবার। এদিন সীমানা সংক্রান্ত আবেদনগুলো নিয়ে প্রাথমিক আলোচনাও হয়।
সেদিন বৈঠকের অগ্রগতি তুলে ধরে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেছিলেন, “এ পর্যন্ত ৬০৭টি আবেদন জমা পড়েছে। ৭৫টি আসনের পুনর্বিন্যাস চেয়ে বিভিন্নজন বিভিন্নভাবে এসব আবেদন করেছেন। এসব আবেদন নিয়ে গবেষণা ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে কমিটি পর্যায়ে। এটা নিয়ে বিষদ আলোচনা হবে ঈদের পর।”
এখনও সীমানার খসড়া প্রকাশ না করলেও ইতোমধ্যে কমিশনের কাছে আসা আবেদন পর্যালোচনা করে নিষ্পত্তি করতে চায় কমিশন।
গেল ১২ মে জাতীয় সংসদের নির্বাচনি এলাকার সীমানা নির্ধারণ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ জারি করা হয়।
সীমানা নির্ধারণে ‘গাইডলাইন’ অনুসরণের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, “সীমানা পুনর্নির্ধারণ আমাদের যে আইন আছে সেই আইন অনুযায়ী হবে। যেমন আইনে যে জিনিসগুলো আছে- প্রশাসনিক অখণ্ডতা, ভৌগোলিক অবস্থান, জনসংখ্যা, ভোটার সংখ্যা ও ঐতিহাসিক ভিত্তিও সীমানা পুনর্নির্ধারণের ক্ষেত্রে বিবেচনায় নেব।”
অধ্যাদেশের গেজেট পেলেই সীমানা নির্ধারণ কাজ শুরু: ইসি সচিব
সংসদ নির্বাচন: সীমানা আইন সংশোধনীর অপেক্ষায় ইসি
তিনি বলেন, “জনসংখ্যার সঙ্গে ভোটার সংখ্যাটা ‘আন্তঃসম্পর্কিত’। বাংলাদেশের বাস্তবতায় আমাদের হয়ত বা জনসংখ্যা ব্যাপারটা একদম ঐকিক হারে করা যাবে না।”
প্রধান উপদেষ্টা ৬ জুন জাতির উদ্দেশে ভাষণে বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধের যে কোনো একটি দিনে অনুষ্ঠিত হবে। এই ঘোষণার ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন উপযুক্ত সময়ে নির্বাচনের বিস্তারিত রোডম্যাপ দেবে।
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন এর সীমানা নির্ধারণে স্বাধীন একটি কমিশন করার সুপারিশ করেছিল।
এ বিষয়ে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য আব্দুল আলীম বলেন, “সীমানা নির্ধারণের বিষয়টি একটি কারিগরি কাজ। সীমানা নির্ধারণের বিতর্কমুক্ত রাখতে বিশ্বের অনেক দেশের মত আমরা স্বাধীন একটি সীমানা নির্ধারণ কমিশন করতে সুপারিশ করেছি। এটি এখনই করতে হবে এমন নয়, দীর্ঘমেয়াদের জন্য সুপারিশটি করা হয়েছে।”
সীমানা নির্ধারণে জনসংখ্যা বা ভোটার সংখ্যা যে কোনো একটি বিবেচনায় নেওয়ার পক্ষে মত দেন এ নির্বাচন বিশেষজ্ঞ।
তিনি বলেন, “ভোট দেবেন ভোটাররা। সেক্ষেত্রে সীমানা নির্ধারণে অন্য বিষয়গুলোর সঙ্গে ভোটারদের ভারসাম্য বজায় রাখার বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া যায়। আবার বরাবরের মতো জনসংখ্যার বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে। দুটোর ভারসাম্য আনতে গিয়ে আবার জটিলতাও তৈরি হতে পারে। যেকোনো একটিই বিবেচনায় নেওয়াই ভালো হবে।”
নির্বাচনি সীমানা নির্ধারণ অধ্যাদেশে উপদেষ্টা পরিষদের সায়
২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধের যে কোনো দিন নির্বাচন: ইউনূস
৩০০ আসনের সীমানার খসড়া প্রকাশের ক্ষেত্রে ইতোমধ্যে আসা আবেদনগুলো বিবেচনায় নেওয়ার পরামর্শ দেন আব্দুল আলীম।
এ বিশেষজ্ঞ বলেন, “যারা এখন ৭৫টি আসনের ৬০৭টি আবেদন করেছেন, তাদের দাবিগুলো আমলে নিয়ে খসড়া প্রকাশ করলে ইতিবাচক হবে। তখন তাদের আবেদনগুলো কাজে আসবে। কিন্তু এখন যদি আবেদনগুলো কোনো সিদ্ধান্ত না নেয়, তাহলে তাদের অনেকেই আবার খসড়া প্রকাশের পর প্রশ্ন তুলতে পারে।”