Published : 05 Nov 2023, 03:24 PM
পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি খোলা চিঠি দিয়েছে আদিবাসী অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলন’।
সংগঠনটির যুগ্ম সমন্বয়কারী অধ্যাপক খায়রুল ইসলাম চৌধুরী ও জাকির হোসেন স্বাক্ষরিত চিঠিটি রোববার সংবাদমাধ্যমে পাঠানো হয়।
চিঠিতে বলা হয়, “দীর্ঘ দুই যুগের অধিক সশস্ত্র সংঘাতের অবসানে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর তৎকালীন সরকারের সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের পক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। দেশের মানুষ আশা করেছিল, সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে এইসব আদিবাসী জাতিসমূহকে ‘অস্বীকারের মাধ্যমে’ রাষ্ট্র যে ‘ঐতিহাসিক ভুল’ করেছিল তা থেকে মুক্তির পথ কিছুটা হলেও সমাধান দেবে স্বাক্ষরিত এই চুক্তি।
“কিন্তু বাস্তবতা হল, পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরের প্রায় ২৫ বছর পেরিয়ে গেলেও এই চুক্তির মৌলিক বিষয়সমূহ এখনও বাস্তবায়িত হয়নি এবং পার্বত্য চট্টগ্রামকে আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চল হিসেবে তার অনন্য বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণ ও বিকাশের কাজটি এখনও অসম্পূর্ণ থেকে গেছে। ফলে পার্বত্য অঞ্চলে এখনও ঔপনিবেশিক কায়দায় পাহাড়ি মানুষের উপর ‘সামরিক-বেসামরিক শাসন ও শোষণ’ অব্যাহত রয়েছে।”
চিঠিতে দেশের সকল রাজনৈতিক দলের প্রতি সাত দফা দাবি বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।
দাবিগুলো হল-
>> পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য সময়সূচি ভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করে দ্রুত ও যথাযথ বাস্তবায়ন করা।
>> পাহাড়ে ‘সামরিক কর্তৃত্ব ও পরোক্ষ সামরিক শাসনের’ স্থায়ী অবসান।
>> আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদগুলোকে প্রতিনিধিত্বমূলক গণতান্ত্রিক ও স্থানীয় শাসন নিশ্চিতকরণে শান্তি চুক্তি মোতাবেক যথাযথভাবে ক্ষমতায়ন করা।
>> পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনকে কার্যকর করার মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু ও ভারত থেকে ‘জুম্ম শরণার্থীদের’ পুনর্বাসন করে তাদের ভূমি অধিকার নিশ্চিত করা।
>> দেশের মূলধারার অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও টেকসই উন্নয়ন কর্মসূচিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের অংশীদারত্ব নিশ্চিত করা।
>> সব স্তরের স্থানীয় সরকারে সমতলের আদিবাসীদের জন্য বিশেষ আসন সংরক্ষণ ও আদিবাসী জনগণের জীবনমান উন্নয়নে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
>> সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠন করা।
রাজনৈতিক দলের নেতাদের উদ্দেশে বলা হয়, “আমরা আশা করি দেশের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ তাদের স্ব স্ব দল ও অবস্থান থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির পূর্ণাঙ্গ ও যথাযথ বাস্তবায়নে সরকার ও সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর প্রতি চাপ সৃষ্টিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন।”
চুক্তি বাস্তবায়নের পথ ত্বরান্বিত করতে চারটি দাবি তুলে ধরেছে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলন’।
>> পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের পক্ষে উপরের সাত দফার আলোকে রাজনৈতিক দলগুলোর সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি ঘোষণা করা।
>> ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারে ওই সাত দফা দাবি অন্তর্ভুক্ত করা।
>> রাজনৈতিক দল ও তার সহযোগী সংগঠনসমূহে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ আদিবাসী জনগণের বিষয়ে একজন মুখপাত্র ও সাংগঠনিকভাবে সম্পাদকীয় পদ তৈরি করা।
>> জাতীয় সংসদসহ স্থানীয় সরকার পরিষদসমূহের সকল স্তরে আদিবাসীদের দলীয় মনোনয়ন দেওয়া।