Published : 08 Apr 2025, 09:15 PM
রাষ্ট্র সংস্কারে সমঝোতায় পৌঁছানোর সংলাপে সংবিধান সংস্কার কমিশনের দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ বা আইনসভা গঠনের প্রস্তাবের বিপক্ষে মত দিয়েছে নাগরিক ঐক্য।
এছাড়া সংসদে অর্থবিল ছাড়া সব ক্ষেত্রে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে ভোট দেওয়ার সুপারিশের সঙ্গেও পুরোপুরি এক মত নয় দলটি।
মঙ্গলবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপে বিভিন্ন সুপারিশের বিষয়ে মতামত দেওয়ার বিষয়টি সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন নাগরিক ঐক্যের প্রেসিডিয়াম সদস্য জিন্নুর আহমেদ চৌধুরী দীপু।
সংলাপের পর জিন্নুর রহমান বলেন, “আমরা মনে করি আমাদের এই ছোট দেশে, আমরা যেহেতু ফেডারেল সরকার না, এক ইউনিট নেশন, এখানে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদের প্রয়োজন পড়ে না।
“তারা আনুপাতিক পদ্ধতিতে দ্বিকক্ষ করতে চাচ্ছেন। তাতে একই জিনিস দাঁড়াচ্ছে। নিচে যারা বেশি আসন পাবেন, আনুপাতিক হলে উপরে তারাই বেশি আসন পাবেন। এতে গুণগত কোন পরিবর্তন হবে বলে আমরা মনে করি না।”
গত ৫ অগাস্ট অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে অন্তর্বর্তী সরকার প্রথম ধাপে যে ছয়টি সংস্কার কমিশন করেছিল।
পুলিশ বাদে বাকি পাঁচ কমিশনের সুপারিশ বিষয়ে মতামত নেওয়ার পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। ২০ মার্চ প্রথম দল হিসেবে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির সঙ্গে বৈঠকের মধ্য দিয়ে এই সংলাপ শুরু হয়।
মঙ্গলবার জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে হওয়া সংলাপে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না উপস্থিত ছিলেন না। দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য জিন্নুর আহমেদ চৌধুরী দীপু ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন।
সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবে অর্থবিল ছাড়া সবক্ষেত্রে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে ভোট দেওয়ার বিধানের সুপারিশ করেছে।
বিদ্যমান সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংসদ সদস্যরা দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে সংসদে ভোট দিতে পারে না। ভোট দিলে তার আসন শূন্য হবে। এছাড়া দল থেকে পদত্যাগ করলেও সংশ্লিষ্ট সংসদ সদস্য আসন হারাবেন।
এ বিষয়ে জিন্নুর আহমেদ বলেন, সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশে দ্বিমত তুলে ধরে নাগরিক ঐক্য অর্থবিলের পাশাপাশি অনাস্থা ভোটে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে ভোট না দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন তারা।
তিনি বলেন, “এতে পার্লামেন্টের ম্যানিপুলেশন হয়ে যেতে পারে বা দুই দিন পর পর সরকার চেঞ্জ হয় তাহলে দেশের জন্য ক্ষতি হবে। এই চিন্তা থেকে আমরা আস্থা ভোট বাদ দেওয়ার জন্য বলেছি। বিষয়টি নিয়ে ওনাদের বক্তব্য শুনেছি, আগামী বৈঠকে আলোচনা করব এবং বিবেচনায় নিব। জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলের সুপারিশের সঙ্গে নাগরিক ঐক্য একমত।”
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত সাত সদস্যের জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গত ১৫ ফেব্রুয়ারি কাজ শুরু করে।
সংস্কার কমিশনগুলোর প্রতিবেদনে আসা গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলোর ওপর ১৩ মার্চের মধ্যে মতামত জানাতে ৩৮টি দলকে অনুরোধ জানিয়েছিল ঐকমত্য কমিশন।
লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ লেবার পার্টি ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন সংলাপের পর ঈদের ছুটির বিরতি পড়ে।
ছুটির পর সোমবার থেকে আবার সংলাপ শুরু হয়েছে; সেদিন ঐকমত্য কমিশন এবি পার্টির সঙ্গে বৈঠকে বসে।
এ পর্যন্ত বিএনপি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) ২৮টি রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে কমিশন মতামত পেয়েছে।
সংস্কার কমিশনগুলোর প্রস্তাবের মধ্য থেকে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ ১৬৬টি প্রস্তাবের মধ্যে ১১৪টিতে একমত, ১১টিতে আংশিক দ্বিমত ও বাকিগুলোতে নাগরিক ঐক্য একমত নয় বলে বৈঠকের শুরুতেই সাংবাদিকদের বলেন জিন্নুর আহমেদ চৌধুরী।
সংলাপের পর তিনি বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাব কীভাবে বাস্তবায়ন হবে তা নিয়ে বৈঠকে কথা হয়নি।
জিন্নুর আহমেদ বলেন, “এ নিয়ে পরবর্তী বৈঠকে আলোচনা করব।”
নারীদের জন্য নির্ধারিত ১০০ আসনে ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে নির্বাচন করার সুপারিশ করেছে সংবিধান সংস্কার কমিশন, যাতে যোগ্যতার ভিত্তিতে নির্দিষ্ট আসন থেকে নারীদের সরাসরি নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়।
এ বিষয়ে নাগরিক ঐক্যের নেতা জিন্নুর আহমেদ বলেন, “প্রক্রিয়াগতভাবে কীভাবে এই নারীরা নির্বাচিত হবেন সেটা আমরা সামনে আবার বসে ঠিক করব। আমরা এক প্রক্রিয়া দিয়েছি। তারা ভিন্ন প্রক্রিয়ায় ১০০ নির্বাচিত করতে চাচ্ছেন। একই সঙ্গে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বয়সসীমা ২৫ এর পক্ষে আমরা।’
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষে বৈঠকে নেতৃত্ব দেন সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় বিকেল ৩টার পরে শুরু হওয়া বৈঠক চলে আড়াই ঘণ্টার বেশি সময়।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, ইফতেখারুজ্জামান।