Published : 22 Aug 2024, 05:49 PM
এনজিও বিষয়ক ব্যুরো দশ বছর আগে বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘অধিকার’-এর নিবন্ধন বাতিলের যে সিদ্ধান্ত দিয়েছিল, তা অবৈধ ঘোষণা করেছে হাই কোর্ট।
এ বিষয়ে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে বৃহস্পতিবার বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি শশাঙ্ক শেখর সরকারের বেঞ্চ এ রায় দেয়।
এ রায়ের ফলে অধিকারের প্রকল্পে বিদেশি সহায়তা নিতে আর কোনো বাধা রইল না বলে আইনজীবী রুহুল আমিন ভুঁইয়া জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, অধিকারের বিদেশি সহায়তা পাওয়ার জন্য এনজিও ব্যুরোর লাইসেন্স নবায়নের যে শর্ত ছিল, সেজন্য দরখাস্ত দেওয়া হয়েছিল ২০১৪ সালে।
“সেটা নবায়ন না করায় আমরা তা চ্যালঞ্জে করে ২০১৯ সালে রিট আবেদন করি। ২০২২ সালে বেআইনিভাবে তারা আমাদের আবেদন নামঞ্জুর করে। নামঞ্জুর করার কারণে মহামান্য আদালত বললেন, এটা তো অকার্যকর হয়ে গেল, আপনারা আপিল করেন।
“তখন আমরা আপিলে গেলাম, আপিল নামঞ্জুর হয়ে গেল। সে আপিলের বিরুদ্ধে আমরা রিট করলাম। সে রিটে কাল শুনানি হয়েছিল। আজ জাজমেন্ট হয়েছে। রুল অ্যাবসোলিউট হয়েছে। অর্থাৎ রিটটা মঞ্জুর করেছেন, আমাদের আবেদন মঞ্জুর করেছেন। এখন অধিকারের বিদেশি সহায়তা পাওয়ার আর বাধা রইল না।”
যেভাবে নিবন্ধন বাতিল
যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে শাহবাগে গণজাগরণ আন্দোলন শুরুর পর তার প্রতিক্রিয়ায় মাঠে নেমেছিল কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজত সারাদেশ থেকে সংগঠনের কর্মী ও মাদ্রাসাশিক্ষার্থীদের ঢাকায় জড়ো করে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে অবস্থান নিয়েছিল।
সরকারের বারবার আহ্বানেও তারা ওই স্থান না ছাড়ায় রাতে সমন্বিতভাবে অভিযান চালিয়ে তাদের সরিয়ে দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সেই অভিযানে ৬১ জন নিহত হন বলে পরে অধিকার তাদের এক প্রতিবেদনে দাবি করে; যদিও পুলিশের দাবি, রাতের অভিযানে কেউ মারা যাননি, আর দিনভর সংঘাতে নিহতের সংখ্যাটি ১১।
অধিকারের প্রতিবেদনে প্রকাশিত সংখ্যাটি নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হলে ওই বছরের ১০ অগাস্ট এই ঘটনায় গুলশান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে গোয়েন্দা পুলিশ। পরে জিডিটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়। গ্রেপ্তার করা হয় অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খান শুভ্রকে।
আদিলুর দুই মাস পর জামিনে মুক্তি পান। সংগঠনটির পরিচালক নাসির উদ্দিন এলানও আদালতে আত্মসর্পণ করে জামিন নেন।
তদন্ত শেষে ওই বছরের ৪ সেপ্টেম্বর ঢাকার আদালতে আদিলুর ও এলানের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। ২০১৪ সালে তাদের বিচার শুরু হয়।
নয় বছর পর ২০২৩ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় এই দুইজনকে দুই বছর কারাদণ্ড দেয়।
এদিকে এনজিও ব্যুরোতে অধিকারের নিবন্ধনের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৫ সালের ২৫ মার্চ। এর কয়েক মাস আগে ২০১৪ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর তারা নিবন্ধন নবায়নের আবেদন করে।
সেই আবেদনের নিষ্পত্তি করে এনজিও ব্যুরোর ২০২২ সালে এক চিঠিতে বলা হয়, “বৈদেশিক অনুদান রেগুলেশন আইন ২০১৬-এর ধারা ৪ (৪) মোতাবেক সংস্থা কর্তৃক দাখিলকৃত নবায়নের আবেদনপত্রে অসংগতি থাকা, সময় সময় চাহিত তথ্যাদির সঠিক জবাব/ব্যাখ্যা ও কাগজপত্র দাখিল না করা এবং রাষ্ট্রের সুনাম ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে এমন কাজে সম্পৃক্ত থাকার কারণে সংস্থার কার্যক্রম সন্তোষজনক না হওয়ায় ’অধিকার’ নামীয় সংস্থাটির নিবন্ধন নবায়নের আবেদনটি বিবেচনার সুযোগ নাই।”
এরপর অধিকার আদালতে যায়। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দশ বছর পর তারা নিজেদের পক্ষে রায় পেল।
এদিকে বৃহস্পতিবারই আরেক রায়ে আদিলুর রহমান ও নাসির উদ্দিন এলানের সাজা বাতিল করে দিয়েছে হাই কোর্ট।
গত বছর সাইবার ট্রাইব্যুনালের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছিলেন তারা। তা মঞ্জুর করে বিচারপতি মো. আবদুর রবের একক হাই কোর্ট বেঞ্চ এদিন সাজা বাতিল করে রায় দেয়।
পুরনো খবর