Published : 06 Jun 2025, 03:40 PM
জাতীয় ঈদগাহ ময়দান ও ঈদের ছুটিতে ফাঁকা ঢাকার নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ‘পূর্ণ প্রস্তুতি’ থাকার কথা জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
জাতীয় ঈদগাহ ময়দান পরিদর্শন করে তিনি বলেছেন, “নিরাপত্তা নিয়ে আমি পুরাভাবেই কনফিডেন্ট, আল্লায় দিলে শতভাগ কনফিডেন্ট, যেন কোনো ধরনের কোথাও কিছু না হয়।”
রাষ্ট্রপতি, সরকারপ্রধান, প্রধান বিচারপতি, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, রাজনীতিবিদ, সচিব ও আমলাসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষ সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে জাতীয় ঈদগাহ মাঠে ঈদের নামাজ পড়ে থাকেন। ফলে সেখানে কড়া নিরাপত্তা জোরদার করা হয় আগে থেকেই।
এবারের কোরবানির ঈদ ঘিরেও নিরাপত্তা জোরদার করে শুক্রবার জাতীয় ঈদগাহ মাঠে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, “আমাদের প্রস্তুতি আল্লায় দিলে সব ভালো আছে। কোনোধরনের কোনো অসুবিধা নাই। পুরা নিরাপত্তার জন্য আমাদের পর্যাপ্ত সংখ্যক নিরাপত্তা বাহিনী রয়ে গেছে। তারা ছুটিতে যায় নাই, যেন সবার নিরাপত্তা থাকে।
“…এখানে (ঈদগাহ মাঠ) সব ভিভিআইপিরা সবাই আসেন। প্রতিবার যেমন ভালোভাবে হয়, এইবারও আমরা আশা করতেছি সবকিছু ভালোভাবে হয়ে যাবে। জায়নামাজও নিয়া আসতে হবে না। আল্লাহর কাছে খালি দোয়া করবেন, যেন বৃষ্টি না হয়। বৃষ্টি হলে জামাতটা বায়তুল মোকাররমে চলে যাবে।”
ঈদের ছুটিতে ফাঁকা ঢাকার নিরাপত্তা নিয়ে এক প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের এখানে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হইছে। প্রায় ৫০০ পেট্রোল রাখা হচ্ছে, অলিগলি সবজায়গা কভার করা হচ্ছে।”
কোথাও কোনো তথ্য পেলে কাছের থানার জানানোর অনুরোধ করে তিনি বলেন, “ছোটখাট দুই একটা ঘটনা অনেক সময় ঘটে যায়, এটাও যেন না ঘটে এজন্য আমরা পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিব।”
আসামিদের জেল থেকে ছাড়া পেয়ে ফের অপরাধে জড়ানো নিয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “এটা তো আমার হাতে না। আটক করার পরে যে ছাইড়া দেয় ওইটাতো আমার পুলিশ ছাড়ে না। ওইটাতো কোর্ট থেইকা ছেড়ে দেয়। কিন্তু বের হয়ে যদি আবার কোন রকমের অবৈধ কাজে লিপ্ত হয়, তারে ছাড় দেওয়া হয় না।"
“দেখছেন না দুইজন শীর্ষ সন্ত্রাসী ছাড়া পাইছিল, কিন্তু যেই অবৈধ কাজে লিপ্ত হইছিল আমরা কিন্তু তারে ছাড়ি নাই, আবার আইনের আওতায় নিয়া আসছি। এইরকম যদি কেউ আইসা কোনো ধরনের অবৈধকাজে লিপ্ত হয়, কাউরেই ছাড় দেওয়া হবে না। এটা পুঁটি মাছ হোক, রুই মাছ হোক, কাতলা মাছ হোক আইন সবার জন্যই সমান।”
থানায় মামলা না নেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “যদি কোথাও মামলা না নেয়, তাদের ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আরেকটা জিনিস সুখবর আগেই জানায় যাচ্ছি, আমরা কিন্তু পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে অনলাইনে জিডি করার জন্য সিলেট ডিভিশনটা প্রথমে আমরা নিছি।
“ভবিষ্যতে জিডি এবং মামলা দুইটাই যেন অনলাইনে নিতে পারে আসরা ব্যবস্থা করতেছি। থানায় গিয়ে যেন কারো কোনো ভোগান্তি না হয়, এজন্য আমরা চেষ্টা করতেছি। বাট আমরা পুরাটা এখনো কার করতে পারি নাই। আমরা পাইলট প্রজেক্টটা সিলেট ডিভিশন দিয়ে শুরু করছি।"
সাংবাদিকদের ব্যাপারে তিনি বলেন, “সত্যি ঘটনা অবশ্যই জানাবেন। কিন্তু অনেক সময় দুয়েক জায়গায় আছে একটু ভুল রিপোর্ট হয়ে যায়, ওইটা যাতে না হয়। মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করা হলে ওইটা পার্শ্ববর্তী দেশ কিন্তু একটা সুবিধা পেয়ে যায় এবং ওইটারে তারা ফলাও করে লেখে।”
ঈদ জামাত ঘিরে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা জোরদার: ডিএমপি কমিশনার
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ছাড়াও জাতীয় ঈদগাহ ময়দান পরিদর্শন করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী।
শুক্রবার ঈদগাহ ময়দানে তিনি বলেন, ঈদ জামাত ঘিরে ‘সমন্বিত, সুদৃঢ় ও নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা’ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
“ঈদগাহ ময়দান ও আশেপাশের এলাকায় ইতোমধ্যেই সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। ঈদগাহ ময়দানে স্থাপিত অস্থায়ী পুলিশ কন্ট্রোল রুম থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।”
সাজ্জাত আলী বলেন, “ঈদগাহ ময়দান ও আশেপাশের এলাকা এসবির সুইপিং টিম এবং সিটিটিসির ডগ স্কোয়াড দ্বারা সুইপিং করা হবে। ডিএমপির সোয়াট ও বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকবে। ডিবি ও সিটিটিসির পর্যাপ্ত সংখ্যক সদস্য সাদা পোশাকে মোতায়েন থাকবে এবং পুরো এলাকায় আলাদা নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হবে।
“নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য ইতোমধ্যে ‘ওয়াচ টাওয়ার’ স্থাপন করা হয়েছে। নিরাপত্তা প্রদানে নিয়োজিত অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে সার্বক্ষণিক সমন্বয় করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।”
এবারের কোরবানির ঈদ ঘিরে ঢাকা মহানগরীতে ১১৮টি ঈদগাহ ও ১ হাজার ৬২১টি মসজিদে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া মহানগরীতে শিয়া ও কাদিয়ানি সম্প্রদায়ের আটটি এবং সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে তিনটি জামাত অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান কমিশনার।
জাতীয় ঈদগাহে প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল সাড়ে ৭টায়। এখানে একসঙ্গে ৩৫ হাজার মুসল্লি ঈদের নামাজ আদায় করতে পারেন। মোট পাঁচটি গেইট দিয়ে প্রবেশ করা যাবে।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, “ঈদগাহ ময়দানে আসার প্রধান তিনটি রাস্তার প্রবেশ মুখে অর্থাৎ মৎস্য ভবন ক্রসিং, প্রেস ক্লাবের সামনে ও হাই কোর্ট ক্রসিংয়ে ব্যারিকেড ও তল্লাশির ব্যবস্থা থাকবে। ঈদগাহ ময়দানে প্রবেশপথে আর্চওয়ের মাধ্যমে সকল মুসল্লিকে প্রবেশ করতে হবে। এছাড়া মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে ও ম্যানুয়ালি তল্লাশির ব্যবস্থা থাকবে।”
নারীদের জন্য পৃথক নামাজের ব্যবস্থা, প্রবেশপথ ও নিরাপত্তা থাকবে বলে জানান তিনি।
বায়তুল মোকাররমেও ঈদের জামাত ঘিরে নিরাপত্তা জোরদারের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, মহানগরীর একটি ঈদ জামাতও নিরাপত্তা ব্যবস্থার বাইরে থাকবে না।
কোনো প্রকার ব্যাগ, ধারালো বস্তু বা দাহ্য পদার্থ সঙ্গে না আনার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, “ঈদ জামাত শেষে তাড়াহুড়ো না করে সুশৃঙ্খলভাবে বের হবেন। সন্দেহজনক কিছু মনে হলে অনতিবিলম্বে নিকটস্থ পুলিশ সদস্যকে জানাবেন।”
ছুটির মধ্যে ফাঁকা ঢাকার নিরাপত্তা নিয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “দিনে ও রাতের নিরাপত্তায় ৫০০ পেট্রোল টিম থাকবে। আশা করি কোনো সমস্যা হবে না। সড়কে চেকপোস্ট তল্লাশি থাকবে।”