Published : 17 May 2025, 10:12 PM
আদালতের আদেশ ও গেজেট প্রকাশের পরও ডিএসসিসির মেয়র হিসেবে শপথ নিতে না পারায় বৈষম্যের অভিযোগ তুলেছেন ইশরাক হোসেন।
শনিবার সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলনে এসে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের কাছে মনে হচ্ছে, ধানের শীষের প্রার্থীর প্রতি বৈষম্য করা হচ্ছে। মামলাটি ছিল নৌকার প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপসের বিরুদ্ধে।
“তাদের পক্ষ হয়ে এখন কারা এ মামলায় বাধা দিতে পারে? তাহলে তারা সেই দোসরদেরই লোক হয়ে গেল, তাই না? আমি দোষ দেব ওই দোসরদের, আমি অন্য কাউকে দোষ দেব না।”
তিনি বলেন, “আমি সব পক্ষ, যারা এখানে রেসপন্সেবল পার্টি রয়েছেন, সবাইকে বলব, যত দ্রুত সম্ভব, আদালতের রায় কার্যকর করুন; বাস্তবায়ন করুন।”
অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের প্রয়াত মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাককে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে বুধবার থেকে কর্মসূচি পালন করে আসছেন তার সমর্থকরা। সেদিন থেকেই ডিএসসিসি নগর ভবন কার্যত অচল।
দাবি আদায়ে শনিবার হয় সচিবালয় অভিমুখে যাত্রা। এ কর্মসূচির পর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন ইশরাকের সমর্থকরা।
নিজেকে ডিএসসিসি মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানোর ‘প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা’ নিতে এদিন স্থানীয় সরকার বিভাগে চিঠিও দেন ইশরাক হোসেন। এরপর সন্ধ্যায় ডাকেন সংবাদ সম্মেলন।
সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিক ইশরাকের কাছে জানতে চান, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার সঙ্গে তার কোনো বিরোধ আছে কিনা?
জবাবে তিনি বলেন, ‘‘স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা বা অন্য কোনো উপদেষ্টার সঙ্গে আমার কোনো ব্যক্তিগত বিরোধও নাই, ব্যক্তিগত সম্পর্কও নাই।
“তাদের (উপদেষ্টাদের) ৯৯ শতাংশের সঙ্গে আমরা কোনো দিনই দেখা হয়নি; পরিচয়ও নাই। সেজন্য প্রশ্নটি একেবারেই অবান্তর।”
২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটির নির্বাচন হয়। বিএনপির ইশরাক হোসেনকে পৌনে ২ লাখ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে মেয়র হন আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপস।
ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর গেল ২৭ মার্চ ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. নুরুল ইসলাম মেয়র পদে তাপসকে বিজয়ী ঘোষণার সেই ফল বাতিল করে ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করেন।
এরপর ২৭ এপ্রিল ইশরাককে ডিএসসিসি মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে ইশরাকের শপথ অনুষ্ঠান এখনও হয়নি।
শপথ না হওয়ায় কোনো রাজনৈতিক দলকে দোষী মনে করেন, সংবাদ সম্মেলনে এমন প্রশ্নের মুখেও পড়েন ইশরাক।
জবাবে তিনি বলেন, “আমি কোনো রাজনৈতিক দল বা কোনো একক ব্যক্তি বা সরকারকে দোষারোপ করছি না। আমরা এর সমাধান চাচ্ছি।”
রায়ের বিস্তারিত তুলে ধরে ইশরাক বলেন, “গ্যাজেট প্রকাশের ২০ দিন হয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত আমাকে শপথ গ্রহণ করানোর কোনো পদক্ষেপ বর্তমান সরকার নেয়নি।
“বর্তমান সরকার বলতে স্থানীয় সরকার বিভাগকে বোঝানো হচ্ছে, যেখানে নির্বাচন কমিশন থেকে এ নির্দেশনাটি গেজেটসহ পাঠানো হয়। পাঠানোর পর তারা যে কাজ করে, সেটিকে আইনের দৃষ্টিতে অনেকেই বলেছে বেআইনি, সেটি হলো তারা ইসিকে পাল্টা চিঠি লেখে। সেখানে একাধিক রেফারেন্স দিয়ে বলার চেষ্টা করে, এখানে আপিল করবে কিনা।”
“এই ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনও পাল্টা উত্তর দিয়েছে যে, সম্পূর্ণ আইনি ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছে, তারা কোন কোন গ্রাউন্ডে কীভাবে সিদ্ধান্তটি নিয়েছে এবং গেজেটটি প্রকাশ করেছে। সেটি পাওয়ার পর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এখন কালক্ষেপণ করার জন্য আবারও চিঠি দিয়েছে।”
ইশরাক মনে করেন, “স্পষ্টতই বোঝা যায় যে একটি সরকারের ভেতরে আরেকটি সরকার রয়েছে, যারা এখন দলীয় আচরণ করছে। তারা একটি বিশেষ দলকে সুবিধা দেওয়ার জন্য তাদের পলিসি অনুযায়ী কাজ করে চলেছে।
“কারণ এর মাঝে আরেকটি ঘটনা আপনারা দেখতে পাবেন। যে এনসিপি (জাতীয় নাগরিক পার্টি) থেকে তারা বিবৃতি দেয়, সেখানে বলা হয় যে, এরকম রায়ের বিষয়ে পর্যবেক্ষণ করা হয়। এমনকি যে বিচারক, তার ব্যাপারেও বিষোদগার করা হয়, যেটি কিনা অত্যন্ত দুঃখজনক।”
ইশরাক হোসেন বলেন, “আমার প্রশ্ন হচ্ছে যে, এনসিপি যদি গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সরকার বা গণঅভ্যুত্থানের ফসলের সরকার হয়ে থাকে, আমি ইশরাক হোসেন, আমি কি শেখ হাসিনার পক্ষের কেউ ছিলাম? নাকি শেখ হাসিনার বিপক্ষে আন্দোলনটাও কম করেছি? নাকি শেখ হাসিনার মধু খেয়ে আমি রাজনীতি করেছি?”
তিনি বলেন, “তারা আমার বিপক্ষে কেন? তার কারণ হচ্ছে আমি বিএনপির প্রার্থী ধানের শীষের মনোনীত প্রার্থী। তারা চাচ্ছে যে তাদের নিজস্ব দলীয় ব্যক্তিদের প্রশাসক হিসেবে বসাবে এবং আগামী নির্বাচনের সময় একটা ফায়দা লুটবে।
“বর্তমানে যে অর্থনৈতিক লুটপাট চলছে নগরভবনকেন্দ্রিক এবং বিভিন্ন ঠিকাদারি, বিভিন্ন বিল, সবকিছুতে, সেগুলা চলমান রাখার জন্য তারা এখন আমাকে বাধা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে সাবেক সচিব মশিউর রহমান, ইশরাকের আইনজীবী নুরুল ইসলাম, তাহেরুল ইসলাম তৌহিদ ও রফিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।