Published : 17 Jun 2025, 07:20 PM
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সুবিধা পাওয়া চট্টগ্রামভিত্তিক শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্টদের নামে থাকা আরও ২০০ একর জমি জব্দের আদেশ দিয়েছে আদালত।
দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের উপপরিচালক তাহাসিন মুনাবীল হকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন।
সংস্থার আবেদনে ২০০ দশমিক ২৬ একর জমির দলিলমূল্য ১৮০ কোটি ৬১ লাখ টাকা বলা হয়েছে।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম এ তথ্য দিয়েছেন।
আবেদনে দুদক বলেছে, বলা হয়, মোহাম্মদ সাইফুল আলম (এস আলম) ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ‘অর্থ পাচারের’ অভিযোগ অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য টিম গঠন করা হয়েছে। তারা বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ‘নামে বেনামে বিধিবহির্ভূতভাবে ঋণ নিয়ে তা আত্মসাৎ করে’ নিজ ও পরিবারের সদস্যদের নামে দেশে-বিদেশে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জন করেছেন।
এস আলম ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্টদের স্থাবর সম্পদ অন্যত্র ‘হস্তান্তর, স্থানান্তর বা বেহাত’ করার চেষ্টা চলছে বলে দুদকের আবেদনে বলা হয়েছে।
দুদক মনে করছে, অনুসন্ধান নিষ্পত্তির আগে এসব সম্পদ হস্তান্তর হয়ে গেলে পরবর্তীতে তা উদ্ধার করা দুরূহ হয়ে পড়বে। এজন্য এস আলম ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্টদের নামে থাকা এসব সম্পদ জব্দের আদেশ দেওয়া প্রয়োজন।
এর আগে ২৩ এপ্রিল এস আলম ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্টদের নামে ঢাকা ও চট্টগ্রামে থাকা ১৫৯ দশমিক ১৫ একর জমি জব্দের আদেশ দেয় একই আদালত। দুদকের আবেদনে এসব জমির দাম বলা হয়েছে ৪০৭ কোটি টাকা।
১৭ এপ্রিল এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্টদের নামে থাকা এক হাজার ৩৬০টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দেওয়া হয়। এসব হিসাবে দুই হাজার ৬১৯ কোটি সাত লাখ ১৬ হাজার টাকা রয়েছে।
তার আগে গত বছরের ৭ অক্টোবর এস আলম ও তার স্ত্রী ফারজানা পারভীনসহ তার পরিবারের ১২ সদস্যের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয় আদালত।
চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি এস আলম ও তার পরিবারের সদস্যদের ৩ হাজার ৫৬৩ কোটি ৮৪ লাখ ২১ হাজার টাকার শেয়ার অবরুদ্ধ করার আদেশ দেয় আদালত।
তারপর ৩ ফেব্রুয়ারি ৩৬৮ কোটি ২৫ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ টাকা মূল্যের ১৭৫ বিঘা সম্পদ জব্দের আদেশ দেওয়া হয়।
১২ ফেব্রুয়ারি ৪৩৭ কোটি ৮৫ লাখ ২ হাজার ২৭৪টি শেয়ার অবরুদ্ধের আদেশ দেয় আদালত। এসব শেয়ারের মূল্য ৫ হাজার ১০৯ কোটি টাকা।
২৩ ফেব্রুয়ারি তাদের ৮ হাজার ১৩৩ কোটি ৫৬ লাখ ৭২ হাজার টাকা মূল্যের শেয়ার অবরুদ্ধ করা হয়।
১০ মার্চ এস আলমের এক হাজার ছয় বিঘা জমি জব্দের আদেশ দেয় আদালত।
এরপর ৯ এপ্রিল তার ৯০ বিঘা জমি জব্দের আদেশ দেওয়া হয়। একইদিন আদালত তার ঘনিষ্ঠজনদের নামে থাকা ৩৭৪টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দেয়।
২৫ মার্চ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুর আলম ও তার স্ত্রী ফারজানা পারভীনের বিরুদ্ধে আলাদা মামলা করেছে দুদক।
সাইফুল আলমের বিরুদ্ধে করা মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, তিনি ৭৯৬ কোটি ২৮ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন।
আরেক মামলায় ফারজানা পারভীনের বিরুদ্ধে ৭৪৩ কোটি ৫৭ লাখ ১ হাজার ৪৫৩ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ এনেছে দুদক।
গতবছরের ৫ অগাস্ট ক্ষমতার পালাবদলে পর এস আলম গ্রুপের অর্থ কেলেঙ্কারির অভিযোগে দুদকের অনুসন্ধানে গতি পায়।
চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি তাদের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের অভিযোগের অনুসন্ধান নিয়ে পাঁচ মাস আগে হাই কোর্টের দেওয়া স্বপ্রণোদিত রুল খারিজ করে আপিল বিভাগ।
এরই মধ্যে ইসলামী ব্যাংকের অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনায় এস আলমের ছেলে ও ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান আহসানুল আলমকে আসামি করে তিনটি মামলা করা হয়েছে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সরকার পতনের পর ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী হিসেবে পরিচিতি পাওয়া শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের বিভিন্ন অনিয়ম সামনে আসে।
চট্টগ্রামভিত্তিক এ গ্রুপের চেয়ারম্যান এস আলমের বিরুদ্ধে ব্যাংক খাতে অনিয়ম, টাকা পাচার, আয়কর ফাঁকির অভিযোগ তদন্ত শুরু করে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা। দুদকও ‘অবৈধ সম্পদ’ অর্জনসহ বিভিন্ন অভিযোগ অনুসন্ধানে নামে।
ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে প্রভাবশালী মহলের সহযোগিতায় এস আলমের বিরুদ্ধে জোরজবরদস্তি করে ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার অভিযোগ বহু পুরনো। পরে তিনি ও তার ব্যবসায়ী গোষ্ঠী শরীয়াহভিত্তিক আরও কয়েকটি ব্যাংকের পর্ষদের নিয়ন্ত্রণ নেন।
এসব ব্যাংক থেকে বিপুল অর্থ নামে ও নাম সর্বস্ব কোম্পানি খুলে অনিয়ম ও জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ নিয়ে বিদেশে পাচার করার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
আরও পড়ুন:
এস আলমের ১৫৯ একর জমি জব্দের আদেশ
এবার এস আলমের ২৬১৯ কোটি টাকা অবরুদ্ধের আদেশ
এস আলম পরিবারের আরও ২,৯৭০ শতাংশ জমি জব্দের আদেশ
এস আলম পরিবারের ১৭৫ বিঘা জমি ক্রোকের আদেশ
শীর্ষ খেলাপি এখন বেক্সিমকো, এস আলম: ৫ ব্যাংকে ১০ গ্রুপেরই ৫২০০০