Published : 01 Jun 2025, 10:36 PM
জাপানে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সফর ‘খুবই সফল’ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
তিনি বলেছেন, “বাংলাদেশের সঙ্গে জাপানের যে সম্পর্ক, সেটি এই সফরের পর নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে। উভয় দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও গভীর ও শক্তিশালী হল।”
রোববার বিকালে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ব্রিফিংয়ে এসে সমসাময়িক বিষয়ে কথা বলছিলেন শফিকুল আলম। সেখানে প্রধান উপদেষ্টার জাপান সফরের বিস্তারিত তুলে ধরেন তিনি।
জাপানের সঙ্গে ছয়টি এমওইউ সই হওয়ার তথ্য দিয়ে প্রেস সচিব বলেন, এর মধ্যে অর্থনৈতিক সংস্কার এবং জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতার জন্য উন্নয়ন নীতি ঋণ হিসেবে ৪১৮ মিলিয়ন ডলার, জয়দেবপুর-ঈশ্বরদীকে ডুয়েল গেজ ডাবল রেলপথে উন্নয়নে ৬৪১ মিলিয়ন ডলার এবং বৃত্তির জন্য অনুদান হিসেবে আরও ৪.২ মিলিয়ন ডলার দেবে।
জাপানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমরা যেসব আশ্বাস চাচ্ছিলাম, তার প্রত্যেকটাই…। তারা বলেছে, এই অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে থাকবে এবং মহেশখালী ও মাতারবাড়ী ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ নিয়ে মাস্টার প্ল্যানে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে। জাপান থেকে একটা সাপোর্ট আমরা পাব।”
প্রধান উপদেষ্টা গত ২৭ মে রাতে জাপান সফরে যান। দেশটিতে ৩০তম নিক্কেই ফোরামে যোগ দেন তিনি। জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার সঙ্গে বৈঠকও করেন।
শফিকুল আলম বলেন, এ সফরের অন্যতম লক্ষ্য জাপানি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা। প্রধান উপদেষ্টা বারবার বলছেন, বাংলাদেশকে একটা ম্যানুফ্যাকচারিং হাব হিসেবে গড়া ওনার স্বপ্ন, সে জন্য আমাদের প্রচুর বিদেশি বিনিয়োগ লাগবে।
“জাপানিরা পুরো বিশ্বে এখন বিনিয়োগ করছে, তারা ‘চায়না প্লাস ওয়ান’ নতুন নীতি নিয়েছে। আগে তাদের বিনিয়োগ চীনমুখী ছিল, এখন তারা বাইরে গিয়েও অনেক বিনিয়োগ করছে। মুহাম্মদ ইউনূস জাপানি প্রধান বিনিয়োগ এজেন্সির সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বড় কিছু কোম্পানির সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেছেন। বিনিয়োগকারীদের এক ইভেন্টে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।”
বৈঠকে ‘ভালো ইতিবাচক সাড়া’ পাওয়ার কথা তুলে ধরে প্রেস সচিব বলেন, “প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরের পর সে দেশের বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে এসেছেন। এখন জাপান সফরের পর দেশটির অনেক বড় বিনিয়োগকারী আসবে এবং তাদের সর্বাত্মক সহায়তা করা হবে।”
‘জনশক্তির বাজারে নতুন দুয়ার খুলছে’
প্রধান উপদেষ্টার সফরের মধ্য দিয়ে জাপানের জনশক্তির বাজারে বাংলাদেশের জন্য ‘নতুন দুয়ার খুলছে’ বলে মন্তব্য করেছেন শফিকুল আলম।
তিনি বলেন, “এ ক্ষেত্রে কিছু অ্যাগ্রিমেন্ট হয়েছে। আমরা আশা করছি এবং জাপানি কোম্পানিগুলো জানিয়েছে, আগামী পাঁচ বছরে এ দেশ থেকে এক লাখ লোক নেবে। সেই লক্ষ্যে এরই মধ্যে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। একটা সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া হলে ১ লাখের বেশি লোকও পাঠানো যাবে।
“দেশটিতে বর্তমানে সর্বোচ্চ ৪০ হাজারের মত বাংলাদেশি রয়েছে। এই সরকারের সময় রেকর্ড সংখ্যক ৩ হাজার শিক্ষার্থী গেছে জাপানে। আরও অধিক সংখ্যক সামনে যাবে বলে আমরা আশা করছি। আগামীতে জাপান বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ জনশক্তি ডেস্টিনেশন হবে।”
এক প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব বলেন, “ভাষার ক্ষেত্রে জাপান ছাড় দিচ্ছে। আমরা আশা করছি, সামনে আরও আলোচনা হবে। যত দ্রুত ও যত বেশি জনশক্তি পাঠানো যায়, সেই চেষ্টা করছেন প্রধান উপদেষ্টা।”
জনশক্তির দক্ষতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ে সরকার উদ্যোগ নেবে কিনা, এ প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমরা দেখছি এ ক্ষেত্রে নেপাল ও ইন্দোনেশিয়াসহ অন্যান্য দেশ কীভাবে কাজ করছে। ওরা এই কাজটা ইতোমধ্যে করেছে, তারা কীভাবে এত অধিক সংখ্যক লোক পাঠালো সেই অভিজ্ঞতা আমরা নেব।
“আমরা জানতে চাইব, তারা কীভাবে ধাপে ধাপে এগিয়েছে। খুব দ্রুত স্কেলআপ করতে হবে। এ সংক্রান্ত যত বাধা আছে, তা কত দ্রুত সমাধান করতে টাস্কফোর্স কাজ করবে। এ ক্ষেত্রে জাপানে থাকা বাংলাদেশিরাও আমাদের সঙ্গে কাজ করবে। সামনে এটি আরও বেগবান হবে।”
‘নির্বাচন ৩০ জুনের পরে যাবে না’
ব্রিফিংয়ে নির্বাচন সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে শফিকুল আলম বলেন, “এটা (নির্বাচন) আগেও হতে পারে, ৩০ জুন মানে এর বেশি যাবে না।
“এর মধ্যে এটা ডিসেম্বরে হতে পারে, জানুয়ারিতে হতে পারে, ফেব্রুয়ারিতে হতে পারে, মার্চেও হতে পারে, এপ্রিলে হতে পারে, মে মাসেও হতে পারে, জুনেও হতে পারে। কিন্তু ৩০ জুনের পরে যাবে না।”
গুম সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “গুম কমিশনের সদস্যরা দিনরাত কাজ করছেন। ইতোমধ্যে দুটি রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে। আরও একটি রিপোর্ট সামনে আসবে। অনেক বিস্তারিত জানতে পারবেন। আপনারা গুম কমিশনে যান, তাদের কাজগুলো একটু দেখেন।
“অনেকে এখনও নিখোঁজ। তারা কোথায় গেলেন, তাদের ভাগ্যে কী ঘটল, সেটি পুরো জাতি জানতে চায়। এ বিষয়ে কমিশন কাজটা করুক, তারা ফাইন্ডিংস জানাক। তারপর আমরা পরবর্তী কাজ করব।”
‘ডিসেম্বরের মধ্যে একটি রাজনৈতিক দল নির্বাচন চায়’ প্রধান উপদেষ্টার এমন বক্তব্য নিয়ে তার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, “বড় দলগুলোর মধ্যে একটি দল ডিসেম্বরে নির্বাচন চায়, সেটি বুঝিয়েছেন।”
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের বিষয়ে কথা বলেন আজাদ মজুমদার।
তিনি বলেন, “আমরা আশা করছি দ্বিতীয় দফার আলোচনা খুব শিগগিরই শেষ হবে এবং তারপর জুলাই চার্টার নিয়ে সুস্পষ্ট ঘোষণা দেওয়া হবে। ঈদুল আজহার আগে আরও একবার দুইবার আলোচনা হতে পারে। ঈদের পরপরই হয়ত আবার আলোচনা শুরু হবে। আশা করছি, খুব শিগগিরই এই আলোচনার সমাপ্তি টানা হবে।”