Published : 07 May 2025, 04:23 PM
রাষ্ট্র বিনির্মাণে কাঠামোগত সংস্কারে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দেওয়া প্রায় সব প্রস্তাবে একমত জানালেও সংসদের নিম্নকক্ষে আনুপাতিক পদ্ধতির ভোটের পক্ষে নয় নাগরিক ঐক্য।
উচ্চকক্ষে ১০৫ আসনের মধ্যে পাঁচটিতে রাষ্ট্রপতির প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার যে প্রস্তাব করা হয়েছে সে ব্যাপারেও দ্বিমত আছে দলটির।
বুধবার দুপুরে জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপ শেষে দলটির সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার সাংবাদিকদের বলেন, “জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে প্রথম সংলাপে ৩৮টি বিষয়ে আমরা দ্বিমত করলেও আজকের আলোচনার মধ্য দিয়ে আমাদের মত পার্থক্য অনেকখানি নিরসন হয়েছে।”
রাষ্ট্র সংস্কারে সমঝোতায় পৌঁছানোর সংলাপে ৮ এপ্রিল নাগরিক ঐক্য সংবিধান সংস্কার কমিশনের দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ বা আইনসভা গঠনের প্রস্তাবের বিপক্ষে মত দিয়েছিল।
এছাড়া সংসদে অর্থবিল ছাড়া সব ক্ষেত্রে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে ভোট দেওয়ার সুপারিশের সঙ্গেও পুরোপুরি এক মত ছিল না দলটি।
দ্বিতীয় দফা আলোচনার পর নাগরিক ঐক্যের নেতারা বলেছেন, ১৬৬টি প্রস্তাবের মধ্যে প্রথমদিন আলোচনায় ১১৪টির সাথে একমত হলেও পরে দলীয় ফোরামে আলোচনার পরে ১১৮টিতে একমত হয়েছেন তারা।
দলের সাংগঠনিক সম্পাদক সাকিব আনোয়ার বলেন, “নাগরিক ঐক্যের অবস্থান হল-সর্বোচ্চ ছাড় দিয়ে আমরা যেন ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারি, আমরা সর্বোচ্চ ছাড় দেওয়ার জন্য প্রস্তুত।
“দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্টে একমত ছিলাম না, এখন আমরা একমত হয়েছি। এখন আমরা আস্থা ভোট এবং অর্থবিল অর্থাৎ ৭০ অনুচ্ছেদ সংস্কারের বিপক্ষে নই।”
তিনি বলেন, “নিন্ম কক্ষে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতির বিষয়ে আমরা দ্বিমত জানিয়েছি। বর্তমানে যে পদ্ধতিতে নির্বাচন হয় সেই পদ্ধতিততে নির্বাচনের কথা আমরা বলেছি।
এখানে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের ক্ষেত্রে নানান ধরণের ঝামেলা হয়। তবে উচ্চকক্ষে অবশ্যই সংখ্যানুপাতিক হারে করতে হবে।”
সাকিব আনোয়ার বলেন, উচ্চ কক্ষে ১০৫টি আসনের মধ্যে পাঁচ আসন রাষ্ট্রপতি পূরণ করবেন বলে যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে সেটা রাখার পক্ষে নাগরিক ঐক্য।
সংলাপের সূচনায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ বলেন “প্রতিটা রাজনৈতিক দলের ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান থাকবে। কিন্তু কিছু মৌলিক জায়গায় আমাদের ঐকমত্যে আসতে হবে, এসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো ছাড় দেবে। তাদের কাছ থেকে কমিশন এটাই প্রত্যাশা করে৷
“জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কমিশন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা করছে। কিন্তু, শুধুমাত্র কমিশনের আলোচনেই যথেষ্ট নয়, রাজনৈতিক দলগুলোরও তাদের সহযোগী এবং প্রতিপক্ষের সাথে আলোচনার মাধ্যমে একমত হয়ে জাতীয় সনদ তৈরির লক্ষ্যকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।”
রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোর মধ্যে পাঁচটি কমিশনের প্রতিবেদনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশের ওপর ৩৯টি রাজনৈতিক দলের মতামত জানতে চেয়েছিল ঐকমত্য কমিশন। এরপর সেই মতামত ধরে সংশ্লিষ্ট দলের সঙ্গে সংলাপ করছে কমিশন।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় আরও উপস্থিত আছেন কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বদিউল আলম মজুমদার।
নাগরিক ঐক্যের প্রতিনিধি দলে অন্যদের মধ্যে ছিলেন মোফাখখারুল ইসলাম নবাব, মঞ্জুর কাদির, শাহনাজ রানু ও ফেরদৌসী আক্তার সুমি।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত এ কমিশন গত ১৫ ফেব্রুয়ারি কাজ শুরু করে।