Published : 19 Jun 2025, 08:22 PM
ঢাকার মহাখালী ডিওএইচএসে ষাট বছরের পুরনো সদর দপ্তর ও কারখানার কার্যক্রম গুটিয়ে এ মাসেই আশুলিয়ায় যাচ্ছে তামাক পণ্য বাজারজাতকারী ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো বাংলাদেশ-বিএটিবিসি।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এ কোম্পানি বৃহস্পতিবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের জানিয়েছে, আগামী ১ জুলাই থেকে বিএটিবিসি প্রধান কার্যালয়ের নতুন ঠিকানা হবে সাভার উপজেলার আশুলিয়া থানার ধামসোনা ইউনিয়নের দেহরা গ্রাম।
চলতি জুন মাসের মধ্যেই মহাখালী ডিওএইচএস এলাকায় পুরনো কার্যালয় খালি করে ফেলা হবে। ১ জুলাই থেকে ঢাকার কারখানাও বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ।
ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরু করে ১৯৪৯ সালে। চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটে খোলা হয় কারখানা।
ঢাকায় মহাখালী ডিওএইচএসের এই কারখানা চালু হয় পাকিস্তান আমলে, ১৯৬৪ সালে। পরে প্রধান কার্যালয়ও ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। সে সময় মাহখালী ছিল অনেকটাই গ্রামীণ জনপদ।
মূল শহরের অংশ না হওয়ায় সে সময় মহাখালীতে সদরদপ্তর ও কারখানা স্থাপনের অনুমতি পেয়েছিল ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো। পরে সেখানে আবাসিক এলাকা গড়ে উঠলেও কারখানা সরিয়ে নেয়নি বিএটিবিসি।
মহাখালী অফিস ও কারখানার জন্য ওই জমি তারা ঢাকা ক্যান্টন বোর্ড কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে লিজ পেয়েছিল ৯০ বছরের জন্য। শর্ত ছিল, প্রতি ৩০ বছর অন্তর অন্তর লিজের মেয়াদ নবায়ণ করতে হবে, সর্বোচ্চ ৯০ বছরের জন্য প্রযোজ্য হবে এই লিজ।
প্রথম ৩০ বছরের মেয়াদ শেষ হলে লিজ নবায়ণ করা হয় ১৯৯৪ সালে। দ্বিতীয় মেয়াদে ৬০ বছর শেষে ২০২৪ সালে আরো ৩০ বছরের জন্য লিজ চায় বিএটিবিসি।
ঢাকা ক্যান্টনবোর্ড কর্তৃপক্ষ তৃতীয়বার লিজের মেয়াদ না বাড়ালে বিএটিবিএসি উচ্চ আদালতে রিট মামলা করে। তবে আদালতের সায় তারা পায়নি।
কোম্পানির এক্সটার্নাল কমিউনিকেশন ম্যানেজারের মাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বিএটি বাংলাদেশের একজন মুখপাত্র বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “২০২৫ সালের ২৯ মে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ থেকে দেওয়া সাম্প্রতিক রায়ে আমাদের লিজ নবায়নের আবেদন খারিজ হয়ে যায়। আমরা সম্মানিত সুপ্রিম কোর্টের এই সিদ্ধান্তকে সম্মান করি এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে ২০২৫ সালের জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে স্থানটি ছাড়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। বর্তমানে আমরা নতুন হেড অফিসে স্থানান্তর প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করার জন্য কাজ করছি।
“একইসঙ্গে আমাদের দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই ব্যবসায়িক পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আমরা আগেই বর্তমান প্রাঙ্গণের পাশাপাশি সাভারে একটি কারখানা স্থাপন করেছি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সাভারের স্থাপনাটিতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বিনিয়োগ করা হয়েছে, যা বাংলাদেশে আমাদের ধারাবাহিক বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের অংশ।"
তামাকবিরোধী ও পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠন দীর্ঘদিন ধরেই মহাখালী থেকে বিএটিবিসির কারখানা সরানোর দাবি জানিয়ে আসছিল। তাদের যুক্তি ছিল, তামাকের গন্ধ আবাসিক এলাকায় দূষণের কারণ ঘটাচ্ছে।
দেশের সবচেয়ে বড় তামাক কোম্পানি ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ১৯৭৭ সালে।
ডিএসই তথ্য অনুযায়ী, গত মে শেষে বিএটিবিসির মোট শেয়ারের পরিমাণ ছিল ৫৪ কোটি। এর মধ্যে ৭২ দশমিক ৯১ শতাংশ শেয়ার উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের কাছে, শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ বাংলাদেশ সরকারের হাতে রয়েছে।
অবশিষ্ট শেয়ারের মধ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ১৪ দশমিক ১১ শতাংশ ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে ৪ দশমিক ১৯ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।
সবশেষ ২০২৪ সালে বিনিয়োগকারিদের ৩০০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয় এ কোম্পানি।