Published : 17 Jun 2025, 08:20 PM
তারল্য সংকটে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকের ১৪ দিনের জন্য টাকা ধার বা রেপো নেওয়ার যে সুবিধা, সেটা আগামী মাস থেকে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
এর আগে গত ১০ এপ্রিল থেকে ২৮ দিনের রেপো বন্ধ করে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ১৪ দিনের রেপো বন্ধ হওয়ার কথা ছিল চলতি মাসেই। কিন্তু সেটা আরও এক মাস পিছিয়ে যাওয়ার আভাস এল বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খানের কাছ থেকে।
মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “গভর্নরের নির্দেশনা রয়েছে। ১৪ দিনের রেপো বন্ধ করে দেওয়া হবে। এটা কার্যকর হবে জুলাই থেকে।”
বাণিজ্যিক ব্যাংক তারল্য সংকটে পড়লে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা ধার নেয়, যা রেপো হিসেবে পরিচিত। এর সুদহার ঠিক হয় রেপো বা ‘রিপারচেজ অ্যাগ্রিমেন্টের’ মাধ্যমে।
আর রিভার্স রেপোর মাধ্যমে (জুলাই থেকে যা পরিচিত এসডিএফ নামে) ব্যাংকগুলো তাদের উদ্বৃত্ত অর্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা রাখে। কিংবা কেন্দ্রীয় ব্যাংক চাইলে বাজার থেকে অতিরিক্ত তারল্য তুলে নিতে পারে।
এই দুই পদ্ধতিতে সরকারি সিকিউরিটিজ কেনাবেচার মাধ্যমে বাজারে টাকার সরবরাহে ভারসাম্য ধরে রাখে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এখন শুধু ৭ ও ১৪ দিন মেয়াদি নিলাম হয়। ১৪ দিনের রেপো বন্ধ হয়ে গেলে শুধু ৭ দিনের নিলাম হবে। সপ্তাহে একদিন মঙ্গলবার রেপোর নিলাম হয়।
অনেক দিন থেকেই ২৮ ও ১৪ দিনের রেপো সুবিধা দেওয়া বন্ধ করার তাগিদ দিয়ে আসছিল আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।
এ বিষয়ে পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ব্যাংকগুলোকে তারল্য ব্যবস্থাপনায় শক্তিশালী করতে চায় বাংলাদেশ ব্যাংক। তাই ১৪ দিনেরটা বন্ধ হলে ৭ দিনের রেপোতে টাকা ধার নেবে ব্যাংকগুলো। যদিও বার বার নেওয়া লাগবে।“
তিনি মনে করেন, “১৪ দিনের রেপো সুবিধা বন্ধ করে দিলে তেমন একটা অসুবিধা হবে না। তাতে ব্যাংকগুলোকে তারল্য ব্যবস্থাপনায় আরও উন্নতি করতে হবে।“
রেপো বন্ধের ব্যাখ্যায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “১৪ ও ২৮ দিনের রেপোর বদলে ৭ দিনের রেপো পদ্ধতির দিকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
“ব্যাংকগুলোর তারল্য দরকার পড়লে কলমানি থেকে ধার করবে। তাতে কলমানি বাজারটা শক্তিশালী হবে। কিন্তু আমাদের দেশের ব্যাংকগুলো সেই চর্চা করছে না।”
তিনি বলেন, “আমাদের দেশের ব্যাংকগুলো উল্টো চর্চা করছে। আন্তঃব্যাংক থেকে ধার করার চেয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে ধার করছে বেশি।
“ব্যাংক যখন কলমানি কিংবা অন্য জায়গা থেকে টাকা ধার করতে পারবে না, অর্থাৎ একদম না পেরে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আসবে।”
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ কর্মকর্তা মনে করেন, “৭ দিনের রেপোই হবে স্ট্যান্ডার্ড ও একমাত্র ব্যবস্থা।”
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যালোচনা করে দেখেছে, ব্যাংকগুলো ১৪ ও ২৮ দিনের রেপোর মাধ্যমে টাকা ধার করে সেটা আবার ট্রেজারি বিল-বন্ডে বিনিয়োগ করছে। এসব বন্ধ করা উচিত। বাণিজ্যিক ব্যাংক এভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে ব্যবসা করতে পারে না। তাই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”