Published : 04 Jun 2025, 12:03 AM
সরকার টেলিযোগাযোগ খাতে সংস্কার করে যে নতুন নেটওয়ার্ক ও লাইসেন্সিং নীতিমালা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে, তা কাজের পরিসরকে সীমিত করবে বলে মনে করছে দেশের বেসরকারি মোবাইল অপারেটররা।
তবে তারা এও বলছে, সরকারের এ উদ্যোগ আন্তর্জাতিক ‘সর্বোত্তম অনুশীলনের’ সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং এ উদ্যোগে তাদের সমর্থন রয়েছে।
মঙ্গলবার রাতে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বেসরকারি মোবাইল অপারেটরগুলোর সংগঠন— অ্যামটব এ প্রতিক্রিয়া জানায়।
দেশের বেসরকারি তিন মোবাইল অপারেটর— গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংক এ সংগঠনের সদস্য।
এই খাতের মধ্যস্তরে অবস্থানকারী দেশীয় লাইসেন্সধারী কোম্পানিগুলো কয়েক দিন ধরে নানাভাবে বলে আসছে, নতুন নীতিমালাটি ‘বিদেশি কোম্পানিবান্ধব’।
গত এক মাসে দেশীয় ইন্টারন্যাশনাল গেইটওয়ে (আইজিডব্লিউ), ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেইটওয়ে (আইআইজি), ইন্টারকানেকশন এক্সচেঞ্জ (আইসিএক্স) এবং ন্যাশনওয়াইড টেলিকম ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন) ব্যবসায়ীরা পৃথকভাবে এ বার্তা দিয়ে গেছেন।
তাদের ভাষ্য এই সংস্কার নীতিমালা বাস্তবায়ন হলে দেশীয় এসব কোম্পানি বসে যাবে, এদের হাজারো কর্মী বেকার হবে এবং সরকার প্রচুর রাজস্ব হারাবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় বলা হয়েছে, এসব লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতি করা হয়েছে তৎকালীন সরকারের আমলে। এই খাতে ব্যাপক লুটপাটের অভিযোগ তদন্ত ও শ্বেতপত্র প্রকাশের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
খাতের সংস্কার প্রস্তাবে তিন স্তরে লাইসেন্স দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এই লাইসেন্সিংয়ের খসড়া নিয়েই মোবাইল অপারেটরদের সঙ্গে দেশীয় লাইসেন্সধারী কোম্পানিগুলোর বিরোধ অনেকটা প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে।
মঙ্গলবার পাঠানো অ্যামটবের বক্তব্যে বলা হয়, “প্রস্তাবিত খসড়া নিয়ে সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন মহলের মতামত গুরুত্ব দিয়ে পর্যবেক্ষণ করেছে অ্যামটব।
“সংস্কারের প্রস্তাবগুলোর মাধ্যমে বিদেশি প্রতিষ্ঠান বা মোবাইল অপারেটরদের সুবিধা দেয়া হচ্ছে বা এটি তাদের পক্ষে যাচ্ছে, এমন ধারণার বিপরীতে আমরা স্পষ্টভাবে জানাতে চাই, বর্তমান খসড়া সংস্কার নীতিতে মোবাইল অপারেটরদের এ ধরনের কোনো সুবিধা দেওয়া হয়নি। প্রকৃতপক্ষে, মোবাইল অপারেটরগুলো দেশজুড়ে টেলিযোগাযোগ ও ডিজিটাল সেবা নিশ্চিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করলেও প্রস্তাবিত সংস্কার নীতিতে তাদের কাজের পরিসরকে আরও সীমিত করা হয়েছে।“
দেশীয় লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠানগুলো নিরবচ্ছিন্ন কানেক্টিভিটিতে কোনো অবদান রাখছে না, উল্টো তাদের কারণে ব্যয় বাড়ছে অভিযোগ করে অ্যামটব বলছে, “এ সীমাবদ্ধ ব্যবসায়িক কাঠামোর ফলে গ্রাহকদের জন্য নিরবচ্ছিন্ন ও মানসম্মত সেবা নিশ্চিত করা আমাদের জন্য দিন দিন কঠিন হয়ে উঠেছে।
“২০০৭ সালের ইন্টারন্যাশনাল লং ডিসট্যান্স টেলিকমিউনিকেশন সার্ভিসেস পলিসির (আইএলডিটিএস) মত অপ্রচলিত পুরানো কিছু নীতিমালার কারণে নিয়ন্ত্রক ও অবকাঠামোগত চ্যালেঞ্জগুলো দীর্ঘদিন ধরেই এ খাতের সম্ভাবনায় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
অ্যামটব মনে করে, “আইএলডিটিএস নীতিমালা টেলিযোগাযোগ খাতকে বিভক্ত করেছে এবং এর ফলে অনেক মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান যেমন- আইজিডব্লিউ, আইআইজি, আইসিএক্স, এনটিটিএন ইত্যাদি তৈরি হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান নিরবচ্ছিন্ন কানেক্টিভিটি সুবিধা নিশ্চিতে তেমন কোনো অবদান রাখছে না; বরং তাদের কারণে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে এবং উদ্ভাবন ব্যাহত হয়েছে।”
অ্যামটব বলছে, “যদিও প্রস্তাবিত খসড়ায় আমাদের দীর্ঘমেয়াদি কিছু সমস্যার সমাধান হয়নি, তবুও আমরা সংস্কার উদ্যোগকে একটি সাহসী ও জরুরি পদক্ষেপ বলে বিবেচনা করছি। আমরা মনে করি, এ উদ্যোগ টেলিযোগাযোগ খাতকে আরও কার্যকর করে তুলতে ভূমিকা রাখবে।
“সংস্কার প্রস্তাব অনুযায়ী লাইসেন্সিং কাঠামোকে তিন ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- ইন্টারন্যাশনাল কানেক্টিভিটি সার্ভিসেস, ন্যাশনাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার কানেক্টিভিটি সার্ভিসেস ও অ্যাকসেস নেটওয়ার্ক সার্ভিসেস। এতে মোবাইল অপারেটরদের ফাইবার বসানো কিংবা নিজেদের টাওয়ার স্থাপনের স্বাধীনতা থাকছে না, যা আগে ছিল। তবে সরকারের এ উদ্যোগ আন্তর্জাতিক সর্বোত্তম অনুশীলনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।”
বিভিন্ন ধাপে লাইসেন্সের বাধ্যবাধকতা থাকায় বাংলাদেশে মোবাইল সেবা খাতের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়েছে উল্লেখ করে অ্যামটব বলছে, “বিশ্বজুড়ে মোবাইল অপারেটরদের পুরো অবকাঠামো পরিচালনার সুযোগ দেওয়া হয়, যাতে তারা কম খরচে উন্নতমানের সেবা দিতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশে বিভিন্ন ধাপে বিভিন্ন লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করায় খাতটির বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়েছে এবং সাধারণ গ্রাহকও ভোগান্তিতে পড়েছেন। তারা সেরা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”
বর্তমান সংস্কার প্রস্তাবই শেষ সমাধান না হলেও এটি ইতিবাচক সূচনা উল্লেখ করে অ্যামটব বলছে, “আমরা খাতসংশ্লিষ্ট সকল অংশীদার, যেমন: আইজিডব্লিউ অপারেটর ও এনটিটিএনসহ সবাইকে একসাথে দেশের টেলিযোগাযোগ খাতের উন্নয়নের লক্ষ্য নিয়ে ইতিবাচক পরিবর্তনে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানাই। বাস্তবসম্মত ও কার্যকর নীতিমালা তৈরি ও বাস্তবায়নে এমটব সরকার ও বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সাথে একযোগে কাজ করতে প্রস্তুত।”