Published : 18 Jun 2025, 01:39 AM
কয়েক মাস ধরে ওঠানামার মধ্যে আরও এক দফা বেড়ে ৯১ দিনের ট্রেজারি বিলের সুদহার ১২ দশমিক ১০ শতাংশে পৌঁছেছে; যা আগের সব রেকর্ডকে ছাপিয়ে গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ১০ দিনের ব্যবধানে এ বিলের সুদহার চলতি সপ্তাহের প্রথম দিন ১৮ বেসিস পয়েন্ট বেড়েছে। এর আগে গত ২ জুন ছিল ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১২ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ।
ট্রেজারি বিল এক ধরনের স্বল্পমেয়াদি আর্থিক ঋণপত্র, যা একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সরকার বিক্রি করে থাকে। মেয়াদ হয় ৯১ থেকে ৩৬৪ দিন পর্যন্ত।
ব্যাংক খাতে তারল্য সংকটকেই ট্রেজারি বিলের সুদহার বেড়ে যাওয়ার মূল কারণ হিসেবে দেখছেন ব্যাংকাররা।
পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী বলেন, ব্যাংকগুলোতে এক ধরনের তারল্যের চাপ তৈরি হয়েছে। সরকারের চাহিদা অনুযায়ী টাকা দিতে পারছে না ব্যাংকগুলো। যে কারণে ট্রেজারি বিলে বেশি সুদ দিয়ে টাকা নিচ্ছে সরকার।
ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ মোহাম্মদ মারুফ বলেন, সরকারের টাকার চাহিদা বেড়েছে। কারণ ট্রেজারি বিল-বন্ডের সুদের হার কয়েক মাস আগে কমে গিয়েছিল। আবার সেটা বাড়ছে। তাছাড়া ব্যাংকে তারল্য যা থাকে তার চাইতে চাহিদা বাড়লে সুদের হারও বেড়ে যায়।
এক মাস না যেতেই ট্রেজারি বিলের সুদহার বাড়ল
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ব্যাংকের কাছে তারল্য কম থাকলে ও সরকারের টাকা নেওয়ার চাহিদা বেশি থাকলে ট্রেজারি বিলের সুদের হার বাড়ে। ডিমান্ড-সাপ্লাইয়ের ওপর সুদের হার ওঠানামা করে।
বেসরকারি একটি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা ৯১ দিনের ট্রেজারি বিলের সুদের হার বেড়ে যাওয়ার পেছনে দুটি কারণ ব্যাখ্যা করেন। বলেন, ব্যাংক আগের মতো ট্রেজারি বিলে বিনিয়োগ করতে চাচ্ছে না। কারণ ব্যাংকে তারল্যের এক ধরনের চাপ রয়েছে। আর রেপো থেকে যে টাকা ধার নেওয়া হয় তা সময়মত বাংলাদেশ ব্যাংকে পরিশোধ করতে হয়। তাই ‘সেটেলমেন্ট রিস্ক’ এর কথা বিবেচনা করে ট্রেজারি বিলে বিনিয়োগ করতে আগের মতো আগ্রহী নয়। তাই ট্রেজারি বিলের সুদের হার বাড়ছে।
দ্বিতীয় কারণ হিসেবে তিনি সরকারের ব্যাংক ঋণের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কথা বলেন।
তিনি বলেন, ট্রেজারি বিল-বন্ডে আগে বিনিয়োগ ছিল ৩০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকা। আড়াই বছরের মধ্যে এর সুদের হার বেড়েছে। এ কারণে এ খাতে বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছে ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি।
ব্যাংকাররা বলছেন, ট্রেজারি বিল-বন্ডের সুদের হার বাড়ার কারণে ব্যাংকে আমানতের বদলে এ খাতে বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধি বেশি। ব্যাংকে যেসব আমানত যাওয়ার কথা ছিল সেগুলো ট্রেজারি বিল-বন্ডে বিনিয়োগ হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
ট্রেজারি বিল-বন্ডে সুদহার আরও কমেছে
ট্রেজারি বিলের সুদ হার আরও বেড়ে ১২ ছুঁই ছুঁই
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছর মার্চে ট্রেজারি বিলের সুদহার কমেছিল। তবে পরের মাস এপ্রিলেই তা আবার বেড়ে যায়। এক মাসের ব্যবধানে বাড়ে ১০১ থেকে ১২৩ বেসিস পয়েন্ট পর্যন্ত। জুনে তা আরও বাড়ল।
এপ্রিলে ৯১ দিনের ট্রেজারি বিলের সুদহার ছিল ১১ দশমিক ৫৮ শতাংশ পৌঁছায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ১৬ জুন ১৮২ দিনের ট্রেজারি বিলের সুদহার দাঁড়ায় ১২ দশমিক ১১ শতাংশ। ৩৬৪ দিনের ট্রেজারি বিলে দাঁড়ায় ১২ দশমিক ২৪ শতাংশ।
নিরাপদ ও কম ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ হিসেবেও ট্রেজারি বিল পরিচিত। কারণ এর ওপর নির্দিষ্ট হারে সুদ পাওয়ার নিশ্চয়তা থাকে।
ট্রেজারি বন্ড হল দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক ঋণপত্র। এটির বিপরীতের বিনিয়োগ থেকে সরকার অর্থ নিয়ে থাকে। এটির মেয়াদ হয় ২ থেকে ২০ বছর।