Published : 22 Aug 2024, 11:49 PM
অবশেষে এস আলমের নেতৃত্বাধীন পর্ষদ ভেঙে দিয়ে ইসলামী ব্যাংকে পাঁচজন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক; যাদের মধ্যে নতুন চেয়ারম্যান করা হয়েছে সাবেক ব্যাংকার মো. ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদকে।
রাষ্ট্রায়ত্ত দুই ব্যাংক সোনালী ও রূপালীর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) দায়িত্ব পালন করা ওবায়েদ উল্লাহকে আলোচিত এ ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে বৃহস্পতিবার বেছে নিয়েছেন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।
ঋণ অনিয়মের কারণে তারল্য সংকটে ভুগতে ইসলামী ব্যাংকে স্থিতিশীলতা ফেরানোর চ্যালেঞ্জ থাকছ নতুন চেয়ারম্যানের সামনে, যিনি এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলমের ছেলে আহসানুল আলমের স্থলাভষিক্ত হবেন।
অভিজ্ঞ ব্যাংকার ওবায়েদ উল্লাহ ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সোনালী ব্যাংকে এবং ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত রূপালী ব্যাংকের এমডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক সাংবাদিকদের নতুন পর্ষদ গঠন করার তথ্য দেন।
নতুন পর্ষদে চেয়ারম্যানসহ সবাই স্বতন্ত্র পরিচালক।
ইসলামী ব্যাংকের পর্ষদ 'বিলুপ্ত' হবে, এস আলমের শেয়ার যাবে 'সরকারি
ব্যাংক খাতে সংস্কার শুরু ইসলামী ব্যাংক দিয়ে?
অন্য পরিচালকরা হলেন- বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ খুরশীদ ওয়াহাব, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল জলিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং বিভাগের অধ্যাপক এম মাসুদ রহমান ও সনদপ্রাপ্ত হিসাববিদ আব্দুস সালাম। এর মধ্যে আব্দুস সালাম বেশ আগে ব্যাংকটির স্বতন্ত্র পরিচালক ছিলেন।
এদিন বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ইসলামী ব্যাংকে দেওয়া চিঠিতে আগের পরিচালনা পর্ষদ বাতিল করার সিদ্ধান্তও জানানো হয়। ওই পর্ষদের চেয়ারম্যান ছিলেন আহসানুল আলম, যিনি আলোচিত চট্টগ্রামভিত্তিক ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলমের ছেলে।
২০১৭ সালে ‘জোরজবরদস্তি’ করে ইসলামী ব্যাংকের কর্তৃত্ব নেয় এস আলম গ্রুপ। তারপর নামে বেনামে ব্যাংক থেকে ঋণ বের করে নেয় গ্রুপটি। তাতে অবনতি ঘটে ব্যাংকটির। শুধু ইসলামী ব্যাংক থেকেই গ্রুপটি ৭৫ হাজার কোটি টাকা বের করে নেয়। এর মধ্যে খাতুনগঞ্জ শাখা থেকেই ৬৭ হাজার কোটি টাকা বের হয়ে যায়।
ছাত্র-জনতার তুমুল আন্দোলনের মধ্যে সরকার পতনের পরদিনই এস আলম মুক্ত করতে বিক্ষোভ ও আন্দোলনে নামে ইসলামী ব্যাংকের কর্মীরা। এ নিয়ে একদিন গোলাগুলির ঘটনাও ঘটে। ইসলামী ব্যাংক ও এস আলম নিয়ে আলোচনার মধ্যেই ব্যাংকটি নিয়ে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়া শুরু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আগের দিনই ইসলামী ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দিয়ে এস আলমের মালিকানায় থাকা এ ব্যাংকের সব শেয়ার সরকারি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার কথা বলেছিলেন।
পরদিনই আগেরটি ভেঙে নতুন পর্ষদ গঠন করা হল।
বুধবার আহসান এইচ মনসুর বলেছিলেন, “ইসলামী ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ বের করা হয়েছে। সেই টাকা ব্যাংকে এখনও ফিরে আসেনি। ইসলামী ব্যাংক নিয়ে অডিট করা হবে। নতুন পর্ষদ ব্যাংকে টাকা ফেরত আনার চেষ্টা করবে।”
তিনি বলেন, “সরকার কোনো ব্যাংকের দায়িত্ব নেবে না। আপাতত স্বতন্ত্র পরিচালক দিয়ে ব্যাংকগুলো চলবে। এস আলম গ্রুপ ছাড়া অন্যদের হাতে ২ শতাংশের বেশি শেয়ার থাকলে পরে তারা পর্ষদে আসতে পারবেন।”
সে সময় গভর্নর শুধু শরিয়াহভিত্তিক দেশের অন্যতম বৃহত্তম এ ব্যাংক নয়, ব্যবসায়িক গোষ্ঠী এস আলমের মালিকানায় থাকা অন্য ব্যাংকগুলোর পর্ষদও ধীরে ধীরে ভেঙে দেওয়ার কথা বলেছেন।
আরও পড়ুন:
ইসলামী ব্যাংক: খাতুনগঞ্জ শাখাতেই এস আলমের ঋণ ৬৭ হাজার কোটি টাকা