Published : 15 May 2025, 02:40 PM
তিন দফা দাবিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে শরিক হতে একের পর এক বাস নিয়ে আসছেন সতীর্থরা। কাকরাইলে চলা এ আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করে অংশ নিয়েছেন বিপুল সংখ্যক শিক্ষকও।
বুধবার রাতভর সড়কে অবস্থান করা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সমবেত হতে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ৩০টি একতলা ও দোতলা বাস যোগে শিক্ষার্থীরা এসেছেন।
সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে আন্দোলনে যোগ দেওয়া শিক্ষার্থী আবুল হাসনাত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা গতকাল সারাদিন আন্দোলন করে রাতে ফ্রেশ হওয়ার জন্য অনেকেই বাসায় আসি।
“কিন্তু আমাদের ভাই-বোনরা না খেয়ে টানা ২৪ ঘণ্টা আন্দোলন করছে; আর আমরা বাসায় বসে তো থাকতে পারি না। তাই তাদের সাথে যোগ দিতে আমরা আবার এসেছি।”
এই আগে সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক রইছ উদদীন ফেইসবুক লাইভে এসে আন্দোলনে যোগ দিতে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানান। তার ডাকে সাড়া দিয়ে শিক্ষকদের অন্তত পাঁচটি বাস আন্দোলনস্থলে এসেছে।
ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নাসির আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শত শত শিক্ষকরাও আন্দোলনে যোগদান করছে। অনেকেই শিক্ষার্থীদের সাথে সড়কে রাত্রিযাপন করেছেন।
“যত সময় যাবে, আন্দোলনের তীব্রতা আরও বাড়বে। তাই সরকারের প্রতি আহ্বান থাকবে- যত দ্রুত সম্ভব অবহেলিত জবি শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি মেনে নিন।”
প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস না আসা পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার কথা বলছেন আন্দোলনকারীরা। প্রধান বিচারপতির বাসভবনের সামনের এলাকায় তারা দাবি আদায়ে বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন।
এর মধ্যে রয়েছে- ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’, ‘তুমি কে আমি কে, জবিয়ান জবিয়ান’, ‘ভুজুংভাজুং বুঝি না, লংমার্চ টু যমুনা’, ‘রক্ত লাগলে রক্ত দে, তবু আমাদের আবাসন দে’, ‘জ্বালো রে জ্বালো. আগুন জ্বালো’, ‘আর নয় হেলাফেলা, এবার হবে আসল খেলা’, ‘বৈষম্যের কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘জবিয়ান আসছে, রাজপথ কাঁপছে’, ‘শিক্ষকদের অপমান, সইবে নারে জবিয়ান', ‘আমার ভাই আহত কেন, ইন্টেরিম জবাব দে’সহ নানা স্লোগান।
শিক্ষার্থীদের তিন দাবির মধ্যে রয়েছে-
১. আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে আবাসন বৃত্তি কার্যকর করতে হবে;
২. জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট কাটছাঁট না করেই অনুমোদন করতে হবে;
৩. জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ পরবর্তী একনেক সভায় অনুমোদন করে অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়ন করতে হবে।
এসব দাবি নিয়ে বুধবার দুপুরে শিক্ষার্থী-শিক্ষকরা ক্যাম্পাস থেকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ও দপ্তর যমুনা অভিমুখে ‘লং মার্চ’ শুরু করে। মিছিলটি গুলিস্তান গোলাপ শাহ মাজার, জিরো পয়েন্ট, সচিবালয়, শিক্ষা ভবন, হাই কোর্ট ও মৎস্য ভবন মোড়ে পুলিশের বাধার মুখে পড়লেও তা উপেক্ষা করে কাকরাইল মসজিদের সামনে আসে।
একপর্যায়ে মিছিলটি প্রধান বিচারপতির বাসভবনের সামনে এলে সেখানে পুলিশ টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে, যাতে অর্ধ শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন।
পরে পুলিশের সঙ্গে বৈঠক করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সেই আলোচনা ফলপ্রসূ না হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা যমুনায় যান। তখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে ‘অসদাচরণের’ অভিযোগ ওঠে।
এ পরিস্থিতিতে রাত ৮টা থেকে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা কাকরাইল মসজিদ মোড় ও প্রধান বিচারপতির বাসভবনের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়ে আসছেন।