Published : 16 Jun 2025, 11:55 PM
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগে পড়ালেখা শেষে একই বিভাগে কার্টোগ্রাফার বা মানচিত্রকার হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন এমরান হোসেন। ১১ বছর পর সম্প্রতি তাকে বদলি করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক বিষয়ক দপ্তরে। মানচিত্র তৈরি, ডিজাইন বা সম্পাদনা নয়; এখন তাকে সামলাতে হচ্ছে প্রশাসনিক কাজ।
একদিকে এমরানের পদের সঙ্গে বর্তমান কাজের যেমন যোগসূত্র নেই; অন্যদিকে এক সহকারী রেজিস্ট্রার তার স্থলাভিষিক্ত হওয়ায় এই বদলির যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
উপাচার্যের নির্দেশে এ বদলির আদেশ হলেও তিনি কিছু জানেন না বলে দাবি করেছেন। তবে প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, সহকারী রেজিস্ট্রার বা জ্যেষ্ঠ প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের বদলি কেবল উপাচার্য করেন। উপ-উপাচার্যরাও এর সঙ্গে সম্পৃক্ত নন।
জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মুনসী শামস উদ্দিন আহম্মদ বলেন, আন্তর্জাতিক বিষয়ক দপ্তরে কার্টোগ্রাফি সংক্রান্ত কোনো কাজ নেই।
তাহলে এমরানকে কেন এ দপ্তরে আনা হয়েছে, এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “এমরানের কম্পিউটার লিটারেসি খুব ভালো। আর তিনি এ দপ্তরে আসতে চেয়েছেন এবং তার বিষয়ে অনেকে বলেছে। তাই কর্তৃপক্ষ তাকে এ অফিসে এনেছেন।”
যোগাযোগ করা হলে মানচিত্রকার এমরান হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি কার্টোগ্রাফার হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিয়েছি। এখনো সে পদে আছি।
“তবে চার বছর আগে ভূগোল বিভাগের সিঅ্যান্ডডি (কোঅর্ডিনেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কমিটি) আমাকে অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ কাজে দিয়েছে। তখন থেকে এখন পর্যন্ত আমি সেই কাজই করছি। আমাকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এনেছে। আপনি তাদের সাথে কথা বলুন।”
২০১৪ সালে কার্টোগ্রাফার হিসেবে চাকরি শুরু করা এমরান ২০১৮ সালে পদোন্নতি পেয়ে হন সিনিয়র কার্টোগ্রাফার। এরপর গত ১২ মে যে অফিস আদেশে তাকে বদলি করা হয়, তাতে কারণ হিসেবে ‘প্রশাসনিক কাজের স্বার্থ’র কথা বলা হয়েছে।
একইদিন পৃথক আদেশে সহকারী রেজিস্ট্রার মাহমুদা সুলতানা হেলেনকে বদলি করা হয় ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগে। দুই আদেশেই পদ ও বেতন স্কেল অপরিবর্তিত থাকার কথা বলা হয়েছে।
হেলেনের ভাষ্য, কার্টোগ্রাফি সম্পর্কে তার কোনো অভিজ্ঞতা না থাকলেও তাকে বদলি করা হয়েছে ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় এবং ইমরানকে প্রমোশন দিতে’।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি ১৫ বছর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকশন অফিসার হিসেবে যোগ দিয়েছিলাম। তখন থেকে আমি প্রশাসনিক কাজ করছি। কিন্তু আমাকে গত মাসে এখানে ট্রান্সফার করে যে দায়িত্বে দিয়েছে, তা সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না।”
ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগে এখন কী কাজ করতে হয়, এমন প্রশ্নের উত্তরে হেলেন বলেন, “আমাকে এখন অ্যাকাউন্টসের কাজ করতে হয়। রেজাল্ট নিয়ে কাজ করতে হয়, যা আমি আগে কখনো করিনি।”
আক্ষেপের সুরে তিনি বলেন, “আমি গত ১১ বছর সহকারী রেজিস্ট্রার হিসেবে ছিলাম। এবার আমার পদোন্নতি হওয়ার কথা। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে আমাকে এখানে ট্রান্সফার করেছে।
“ইমরান জামায়াত করে। তাই তাকে পদোন্নতি দিতে রেজিস্ট্রার দপ্তরে এনেছে, যেখানে আমি পদোন্নতির তালিকায় তৃতীয় ছিলাম। ডেপুটি রেজিস্ট্রার সেলিনা আক্তার ডলি ও সুরাইয়া আক্তার কবিতা চক্রান্ত করে আমাকে এখানে ট্রান্সফার করিয়েছে।”
হেলেনের অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করলে এমরান বলেন, “আমি কখনো পলিটিক্সের সাথে সম্পৃক্ত ছিলাম না। আমার পরিবারের কেউ কখনো ছিল না।”
আর হেলেন যে দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলেছেন, তাদের একজন ডেপুটি রেজিস্ট্রার সেলিনা আক্তার ডলি বলেন, “আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না।”
আরেক কর্মকর্তা সুরাইয়া আক্তার কবিতার বক্তব্য জানতে দপ্তরে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। ফোনে চারবার কল করা হলেও তার সাড়া মেলেনি।
হেলেনের বদলির বিষয়ে জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মুনসী শামস উদ্দিন আহম্মদ বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চেয়েছে, তাই তাকে সেখানে বদলি করেছে। তিনি অনেক অভিযোগ করতে পারেন।”
এমরান ও হেলেনের বদলির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খান বলেন, “আমি এ বিষয়ে জানি না। তবে আমার পিএস নিশাত বলতে পারবেন।”
উপাচার্যের একান্ত সচিব আব্দুর রহমান নিশাত বলেন, “এমরান কম্পিউটার ও ইংরেজি কাজে খুব পারদর্শী। তাই তাকে এখানে আনা হয়েছে।”
হেলেনের বদলির কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি জানি না এ বিষয়ে।”
এদিকে ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগে পদের ঘাটতি পূরণ হলেও বর্তমানে কোনো কার্টোগ্রাফার নেই বলে জানিয়েছেন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক শহীদুল ইসলাম।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগে একটা মাত্র কার্টোগ্রাফার পদ রয়েছে। তবে এখন আধুনিক যুগে কার্টোগ্রাফি সংক্রান্ত কোনো কাজ এমরান সাহেব করতেন না। তিনি প্রশাসনিক কাজ করতেন।
“আমাদের এখন মানচিত্র আঁকার আর কোনো কাজ নেই। এখন জিআইএস দিয়ে মানচিত্র বানানো হয়; যার জন্য আমাদের এক্সপার্টরা রয়েছেন।”
তাহলে কি বিভাগে এই পদের আর প্রয়োজন নেই? এমন প্রশ্নের উত্তরে অধ্যাপক শহীদুল বলেন, “এখন আমি কাউকে নিয়োগ দিতে চাইলে একই পদে নিয়োগ দিতে হবে, তিনি থাক বা না থাক। কারণ এখন ইউজিসি থেকে কোনো পদ কনভার্ট করা যায় না “
এ পদের প্রয়োজনীয়তা না থাকলে আর রাখা হবে কি না, এ প্রশ্নের উত্তরে উপাচার্য নিয়াজ আহমদ খান বলেন, “অনেক সময় পদের কাজ না থাকলেও অন্য ক্ষেত্রে এ পদের প্রয়োজনীয়তা থাকে। তার পরও আমি কথা বলে দেখব। পদের যদি প্রয়োজনীয়তা না থাকে, তাহলে আমি ইউজিসি থেকে কনভার্ট করে নেব।”