Published : 11 Jun 2025, 06:11 PM
দেশে নতুন করে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় জটিল রোগে আক্রান্ত, গর্ভবতী নারী এবং কোভিড রোগীদের সংস্পর্শে আসার সম্ভাবনা আছে–এমন ব্যক্তিদের টিকা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে মহাপরিচালক ডা. মো. আবু জাফর সাংবাদিকদের বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাতে এখন ১৭ লাখ ১৬ হাজার ৯০০ ডোজ টিকা আছে। এই টিকাই আপাতত দেওয়া হবে।
“এখনও যারা টিকা নেননি তাদের মধ্যে ডিফারেন্ট কনট্যাক্ট পার্সনের সঙ্গে কাজ করে, গর্ভবতী নারী এবং যারা ইমিউনো কম্প্রোমাইজড, তাদের টিকা নেতে হবে। পুরোনো যারা এরইমধ্যে টিকা নিয়েছেন, তাদের মধ্যে যারা ষাটোর্ধ্ব, স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি আছে, কোমর্বিডিটি আছে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাদেরও ছয় মাস পর আরেকটা ডোজ দেওয়া উচিত।”
যাদের টিকা নেওয়া আছে তারা কেন্দ্রে গেলে টিকা নিতে পারবেন কিনা এমন প্রশ্নে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, “কোভিডের টিকাদান এখনও চালু আছে। নির্ধারিত কেন্দ্রে গেলে টিকা দেওয়া যাবে।”
সরকারের হাতে মজুদ টিকার কার্যকারিতা আছে কিনা এমন প্রশ্নে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক হালিমুর রশিদ ইউএস-সিডিসির গাইডলাইনের বরাত দিয়ে বলেন, সেখানে ২০২৪-২০২৫ সালের যে টিকা এসেছে, সেগুলো দেওয়ার পরামর্শ এসেছে। কারণ ওই টিকা ওমিক্রনের জন্য সুনির্দিষ্ট করা আছে। তবে বাংলাদেশে যে টিকা আছে সেগুলোও নিরাপত্তা দেবে।
“আমাদের টিকা আরো পুরোনো। ডব্লিউএইচের গাইডলাইন অনুযায়ী কোনো দেশে যদি লেটেস্ট টিকা না থাকে আগের টিকা দিলেও রোগের সিভিয়ারিটি কমাবে। তারা পরামর্শ দিয়েছে, আগের যে টিকা আছে সেগুলো দেওয়ার জন্য। টিকার জন্য নতুন করে যোগাযোগ এখনও শুরু হয়নি। আমরা শিগগিরই তা করব।”
সব হাসপাতালে করোনাভাইরাসের পরীক্ষা করা যাচ্ছে কি না–এমন প্রশ্নে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, সাধারণ মানুষের এই পরীক্ষা করানোর কোনো প্রয়োজন নাই। যাদের লক্ষণ ও উপসর্গ নিয়ে আসেন তাদের পরীক্ষা করা যেতে পারে।
“হাসপাতালে যদি আসে, আমরা যদি মনে করি তার পরীক্ষা করানো দরকার, তাহলে করা হবে। সব জায়গায় এই পরীক্ষা করার সুবিধা থাকবে। আমরা কাল বিভিন্ন হাসপাতালে আরটিপিসিআর পৌঁছে দেব। আমাদের কাছে ডিস্ট্রিবিউশন লিস্ট আছে, কোন হাসপাতাল কত লাগবে। আমরা কিট সংগ্রহের প্রক্রিয়া চলছে, ঈদের জন্য কিছুটা দেরি হয়েছে।”
তিনি বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কোভিড পরীক্ষার ২৮ হাজার দ্রুত শনাক্তকরণ কিট পেয়েছে। বুধবার আরও ১০ হাজার আরটিপিসিআর কিট আসবে। এসব কিট দুয়েকদিনের মধ্যে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে পৌঁছানো হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমুহ) ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সংক্রমণ বাড়তে থাকায় দেশের জেলা পর্যায়ের সব সরকারি হাসপাতালে শয্যা প্রস্তুত করে রাখছেন তারা।
এরইমধ্যে ডিএনসিসি কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতাল, মুগদা জেনারেল হাসপাতাল, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কোভিড আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় শয্যা প্রস্তুত করা হয়েছে। বাকি হাসপাতালে শয্যা তৈরির কাজ চলছে বলে জানান তিনি।
ডা. মঈনুল আহসান বলেন, “আমরা কাজ করে যাচ্ছি, আশা করি আগামী শনিবারের মধ্যে দেশের সব জেলা পর্যায়ের হাসপাতালে রোগী থাকুক বা না থাকুক আমরা বেড রেডি করে ফেলব। আমরা একটা বিষয় নিশ্চিত করতে চাই, কোনো রোগী আমাদের সরকারি পর্যায়ের হাসপাতালে এলে কখনোই বিনা চিকিৎসায় ফেরত দেওয়া হবে না। আমরা রোগীদের এটুকু আশ্বস্ত করতে চাই।”
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) ডা. মো. রিজওয়ানুর রহমান, সংক্রামক রোগ শাখার লাইন ডিরেক্টর ডা. মো. হালিমুর রশীদ এবং সহকারী পরিচালক (সমন্বয়) ডা. মোহাম্মদ নুরুল হকসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশে এ বছর ২২৫ জন কোভিড রোগী শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে ৫৭ জনই জুন মাসের প্রথম ১১ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন। আর বুধবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১০ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ বছর করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে একজনের।
বাংলাদেশে ২০২০ সালে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পর দেশে ১ কোটি ৫৭ লাখ ২৬ হাজার ৩৭৯টি নমুনা পরীক্ষা করে ২০ লাখ ৫১ হাজার ৭৬০ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে মৃত্যু হয় ২৯ হাজার ৫০০ জনের।
কোভিড মহামারী শুরুর পর প্রথম বছর ২০২০ সালে ৭৫৫৯ জনের প্রাণ কেড়েছিল করোনাভাইরাস। এরপর সবচেয়ে বেশি ২০ হাজার ৫১৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল ২০২১ সালে। এরপর ২০২২ সালে ১৩৬৮ জন এবং ২০২৩ সালে ৩৭ জন এবং ২০২৪ সালে ২২ জন রোগী মারা যায় কোভিড আক্রান্ত হয়ে।
ভারতসহ পার্শ্ববর্তী কয়েকটি দেশে করোনাভাইরাসের নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় এবং অন্যান্য দেশে ভাইরাসের এই ধরনটি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় নতুন সতর্কতা জারি করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ভারত এবং ভাইরাস ছড়ানো অন্যান্য দেশে ভ্রমণ থেকে বিরত থাকতে বলেছে। পাশাপাশি ঝুঁকি মোকাবেলায় সব স্থল ও বিমানবন্দরে হেলথ স্ক্রিনিং ও নজরদারি বাড়াতে হলা হয়েছে সেখানে।