Published : 09 Jun 2025, 05:10 PM
ভারতসহ পার্শ্ববর্তী কয়েকটি দেশে করোনাভাইরাসের নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় এবং অন্যান্য দেশে ভাইরাসের এই ধরনটি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় নতুন সতর্কতা জারি করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ভারত এবং ভাইরাস ছড়ানো অন্যান্য দেশে ভ্রমণ থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি ঝুঁকি মোকাবেলায় সব স্থল ও বিমানবন্দরে হেলথ স্ক্রিনিং ও নজরদারি বাড়াতে বলা হয়েছে সেখানে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. হালিমুর রশিদের স্বাক্ষরে এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়।
সেখানে বলা হয়, পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাসের নতুন সাব ভ্যারিয়েন্ট, বিশেষ করে ওমিক্রন LF.7, XFG, JN.1 এবং NB.1.8.1 এর সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
“আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের মাধ্যমে বাংলাদেশে এর সম্ভাব্য সংক্রমণ প্রতিরোধে ভারত ও অন্যান্য সংক্রামক দেশ এবং বাংলাদেশ থেকে ভারত এবং অন্যান্য সংক্রামক দেশে ভ্রমণকারী নাগরিকদের জন্য দেশের সকল স্থল, নৌ, বিমানবন্দরের আইএইচআর ডেস্কে নজরদারি জোরদার করতে হবে। পাশাপাশি ঝুঁকি মোকাবেলায় কিছু কার্যক্রম নিতে হবে।”
>> দেশের স্থল/নৌ/ বিমান বন্দরগুলোর আইএইচআর (IHR-2005) স্বাস্থ্য ডেস্কগুলোতে সতর্ক থাকা, হেলথ স্ক্রিনিং এবং সার্ভেইলেনস জোরদার করতে হবে।
>> দেশের প্রবেশপথগুলোতে (পয়েন্টস অব এন্ট্রি) থার্মাল স্কান্যার/ ডিজিটাল হ্যান্ড হেল্ড থার্মোমিটারের মাধ্যমে নন টাচ টেকনিকে তাপমাত্রা নির্ণয় করতে হবে।
>> চিকিৎসা কাজে স্বাস্থ্যকর্মীদের ব্যবহারের জন্য পর্যাপ্ত মাস্ক, গ্লাভস এবং রোগপ্রতিরোধী পোশাক মজুদ রাখতে হবে।
>> ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে জনসচতেচনতা বৃদ্ধির জন্য রোগপ্রতিরোধ নির্দেশনার প্রচার করতে হবে।
>> জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ভারত ও অন্যান্য আক্রান্ত দেশে ভ্রমণ থেকে বিরত থাকতে হবে।
সবার জন্য সাধারণ পরামর্শ
>> বারবার প্রয়োজনমত সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে (অন্তত ২০ সেকেন্ড)।
>> নাক-মুখ ঢাকার জন্য মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।
>> আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে কমপক্ষে ৩ ফুট দূরে থাকতে হবে।
>> অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ করা যাবে না।
>> হাঁচি-কাশির সময় বাহু/ টিস্যু/ কাপড় দিয়ে নাক মুখ ঢেকে রাখতে হবে।
সন্দেহজনক রোগীদের ক্ষেত্রে করণীয়
>> অসুস্থ হলে ঘরে থাকা, মারাত্মক অসুস্থ হলে নিকটস্থ হাসপাতালে যোগাযোগ করতে হবে।
>> রোগীর নাক-মুখ ঢাকার জন্য মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।
>> প্রয়োজন হলে আইইডিসিআরের হটলাইন নম্বরে ০১৪০১-১৯৬২৯৩ যোগাযোগ করা।
পাঁচ বছর আগে ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর প্রথম চীনে ছড়ানো করোনাভাইরাস দুই মাস পর ছড়িয়েছিল বাংলাদেশেও। এরপর নানা উদ্বেগ আর আতঙ্কের মধ্যে মাস্ক পরাসহ ধাপে ধাপে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হয় টানা তিন বছর।
সেসময় লকডাউনে জনশূন্য হয় নগর, শহর। অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজের কার্যক্রম চলে অনলাইনে। চাকরি হারিয়ে বেকার হয়ে পড়ে মানুষ।
সীমান্ত সংযোগ ও বিমানবন্দরে চলে কঠোর কড়াকড়ি, স্থগিত রাখা হয় আকাশ যোগাযোগ। বিশ্বব্যাপী সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে, ডলারের দাম বাড়ে, বেড়ে যায় নিত্যপণ্যের দামও।
সেইসঙ্গে হাসপাতালগুলো ভরে যায় কোভিড রোগীতে, ঘটে প্রাণহানি। বছর তিনেক এ অবস্থা চলার পর কোভিডের সংক্রমণ কমতে থাকলে ধীরে ধীরে সব স্বাভাবিক হতে শুরু করে।
সম্প্রতি সেই ভাইরাসের নতুন ধরন ‘এনবি.১.৮.১’ এর সংক্রমণ বাড়ার খবর মিলছে। ভারতের কেরালা, গুজরাট, পশ্চিমবঙ্গ ও দিল্লিকে এখন ‘সংক্রমণের হটস্পট’ ধরা হচ্ছে। দেশটিতে রোববার পর্যন্ত কোভিড রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ১৩৩ জনে। এক দিনেই মৃত্যু হয়েছে ছয়জনের।
এ অবস্থার মধ্যে বাংলাদেশেও কোভিড আক্রান্ত হয়ে বৃহস্পতিবার ঢাকায় একজনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বাংলাদেশে দেড় বছরের মধ্যে কোভিডে মৃত্যুর প্রথম ঘটনা সেটি।
সংক্রমণ যাতে না বাড়ে সেজন্য জনসমাগম স্থানে মাস্ক পরতে জনসাধারণের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
২০২০ সালে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পর দেশে ১ কোটি ৫৭ লাখ ২৬ হাজার ২২৪টি নমুনা পরীক্ষা করে ২০ লাখ ৫১ হাজার ৭৩৯ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৫০০ জনের।
২০২৪ সালে এই রোগে কেউ মারা যাননি। ২০২৩ সালে ৩৭ জন, ২০২২ সালে ১৩৬৮ জন রোগী মারা যান।
কোভিডে সবচেয়ে বেশি ২০ হাজার ৫১৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল ২০২১ সালে। আর মহামারীর প্রথম বছর ২০২০ সালে ৭৫৫৯ জনের প্রাণ কেড়েছিল করোনাভাইরাস।