Published : 11 Jun 2025, 08:21 PM
দেশে করোনভাইরাসের সংক্রমণ যখন নতুন করে বাড়তে শুরু করেছে, চট্টগ্রামের আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউ সেবা তখন বন্ধ।
১৮টি আইসিইউ বেড থাকলেও এ হাসপাতালের সবগুলো ভেন্টিলেটর নষ্ট। সে কারণে গত এপ্রিল মাসের শুরু থেকে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রটি কার্যত বন্ধ রয়েছে।
অথচ কোভিড আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রামে এ হাসপাতালকেই ‘ডেডিকেটেড’ করা হয়েছে।
অন্যদিকে ফৌজদারহাটে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসে (বিআইটিআইডি) পাঁচটি আইসিইউ শয্যা থাকলেও নেই ভেন্টিলেটর সুবিধা।
২০২০ সালে মহামারীর শুরু থেকে চট্টগ্রামে এ দুটি হাসপাতালেই রোগীদের সেবা দেওয়া হয়েছিল।
এদিকে সরকারি পর্যায়ে করোনাভাইরাস শনাক্তের কিটেরও স্বল্পতা রয়েছে। এখন যেসব কিট চট্টগ্রামে আছে, সেগুলোর বেশিরভাগই মেয়াদোত্তীর্ণ।
স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বশীলরা বলছেন, কিট ও আইসিইউ বেডের ভেন্টিলেটর সংকটের বিষয়টি ঢাকায় জানানো হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে সংকট মিটবে বলে তারা আশাবাদী।
২০২০ সালের মার্চের মাঝামাঝি যখন কোভিড-১৯ আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল নির্ধারণ করা হয়েছিল, তখন সেখানে কোনো আইসিইউ শয্যা বা ভেন্টিলেটর সুবিধা ছিল না।
পরে ওই মাসেই হাসপাতালটিতে ভেন্টিলেটরসহ ১০টি আইসিইউ শয্যা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ২০২০ সালের জুনে সেগুলো চালু হয়। এরপর ২০২১ সালের এপ্রিলে সেখানে আরো আটটি আইসিইউ বেড বরাদ্দ দেওয়া হলে শয্যা সংখ্যা বেড়ে ১৮টিতে দাঁড়ায়।
সেসময় চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে মোট ২২টি ভেন্টিলেটর থাকলেও সবগুলো এখন নষ্ট। এগুলোর সাহায্যে আইসিইউ বেডে ভর্তি থাকা রোগীদের সেবা দেওয়া হত। যেসব রোগীর ফুসফুস ঠিকভাবে কাজ করে না, তাদের ভেন্টিলেটরের সাহায্যে শ্বাস-প্রশ্বাস চালু রাখা হয়।
মঙ্গলবার চট্টগ্রামে ৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার তথ্য জানায় স্বাস্থ্য বিভাগ। বুধবার দুপুরে আরো একজন রোগী শনাক্তের তথ্য আসে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে করোনাভাইরাসের সম্ভাব্য সংক্রমণ মোকাবেলায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে জরুরি সভা করেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। সভায় তিনি চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালকে কোভিড আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য ‘ডেডিকেটেড’ ঘোষণা দেন।
বুধবারের সভায় মেয়র বলেন, “বরাবরের মত কোভিড ডেডিকেটেড হসপিটাল হিসেবে চট্টগ্রাম জেনারেল হসপিটালকে আমরা ঘোষণা করছি। এবং এর বাইরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও একটি কোভিড ডেডিকেটেড সেকশন রয়েছে। সেখানেও চিকিৎসা দেওয়া হবে।”
পাশাপাশি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (সিসিসি) পরিচালিত মেমন-২ হাসপাতালকে কোভিডের জন্য ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসেবে দ্রুত প্রস্তুত করতে এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কোভিড রোগীদের চিকিৎসার পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি।
জানতে চাইলে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জেনারেল হাসপাতালে আইসিইউ বেড আছে ১৮টি। কিন্তু প্রয়োজনীয় ইকুপমেন্ট না থাকায় সেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এখানে যত ভেন্টিলেটর ছিল সবগুলো নষ্ট।
“আইসিইউ চালু রাখার জন্য ভেন্টিলেটর খুব প্রয়োজনীয়। বিষয়টি ইতিপূর্বে ঢাকায় জানানো হয়েছে। সোমবারের মধ্যে কিছু প্রতিকার হবে বলে আশা করছি।”
২৫০ শয্যার চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা, অক্সিজেন সিলিন্ডার, হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলাসহ অন্যান্য সরঞ্জাম আছে জানিয়ে ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসেবে এখানে যাতে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীরা পর্যাপ্ত চিকিৎসা সেবা পায়, সেভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা হবে।”
চট্টগ্রামে সংক্রামক রোগের একমাত্র বিশেষায়িত হাসপাতাল বিআইটিআইডি। এ হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল ট্রপিক্যাল মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. মামুনুর রশিদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের পাঁচটি আইসিইউ বেড থাকলেও সেগুলো পূর্ণাঙ্গ না। কারণ কোনো ভেন্টিলেটর নেই। আইসিইউ সেবা দিতে হলে ভেন্টিলেটর জরুরি।
“তবে আমাদের নিজস্ব অক্সিজেন প্ল্যান্ট আছে। এছাড়া হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলাসহ আনুষাঙ্গিক সব যন্ত্রপাতি আছে। সেগুলো আবার প্রস্তুত করা হচ্ছে। গতবার কোভিড চিকিৎসার অভিজ্ঞতায় আমরা এবারও প্রস্তুতি নিচ্ছি। এখনো কোনো রোগী আমাদের হাসপাতালে আসেনি।”
এখানে শুরুতে ১০ শয্যার একটি ইউনিটে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “একটি সার্ভে টিম করা হয়েছে। তারা যন্ত্রপাতিগুলো রেডি করতে কাজ শুরু করেছে।”
বিআইটিআইডিতে বুধবার পর্যন্ত করোনাভাইরাস শনাক্তের কোনো কিট নেই জানিয়ে ডা. মো. মামুনুর রশিদ বলেন, “কিটের জন্য ঢাকায় জানানো হয়েছে। আশা করি দ্রুতই সরকারিভাবে কিট দেবে।”
শনাক্তকরণ কিটের বিষয়ে জানতে চাইলে সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “এখন আমাদের হাতে কিছু কিট থাকলেও সেগুলো বেশিরভাগ মেয়াদোত্তীর্ণ। ঢাকায় জানানো হয়েছে। শনিবারের মধ্যে নতুন কিট পাব।”
সরকারিভাবে কিট স্বল্পতা থাকলেও নগরীর বেসরকারি মা ও শিশু হাসপাতাল এবং কয়েকটি ডায়গনস্টিক সেন্টারে কিছু কিট আছে বলে জানান তিনি।
চট্টগ্রামে আরো একজন কোভিড রোগী শনাক্ত
চট্টগ্রামে আরো একজন কোভিড রোগী শনাক্ত
চট্টগ্রামে কোয়ারেন্টিনের জন্য হাসপাতাল নির্ধারণ
চট্টগ্রামে আইসিইউ-ভেন্টিলেটর ছাড়াই 'আইসোলেশন প্রস্তুতি'