Published : 07 Jun 2025, 11:51 AM
আম্পায়ার গ্রাহাম লয়েড আঙুল উঁচিয়ে ধরতেই গ্যালারি থেকে ভেসে এলো হাজার হাজার দর্শকের সম্মিলিত হাহাকার ও গোঙানি। হতাশ তখন জস বাটলারও। রিভিউ নিলেন অনুমিতভাবেই। কিন্তু সিদ্ধান্ত টিকেই গেল, ‘আম্পায়ার্স কল।’ হাত দিয়ে মুখ ঢাকলেন তিনি, পরমুহূর্তেই ঠোঁটে ফুটে উঠল আক্ষেপের মৃদু হাসি। এত কাছে গিয়েও সেঞ্চুরিটা হলো না!
ইংল্যান্ডের হয়ে আগের টি-টোয়েন্টি ম্যাচটি খেলেছিলেন বাটলার, তিনি ছিলেন অধিনায়ক। পালাবদলের পরিক্রমায় এখন তিনি আর অধিনায়ক নন। তবে ‘সাধারণ’ ক্রিকেটার হিসেবে তার পথচলা আবার শুরু হলো অসাধারণ ইনিংস খেলে। সেঞ্চুরি যদিও হলো না চার রানের জন্য। প্রায় তিন বছর পর দলে ফিরেই ম্যাচ জেতানো বোলিং উপহার দিলেন স্পিনিং অলরাউন্ডার লিয়াম ডসন। সব মিলিয়ে জয় দিয়ে সিরিজ শুরু করল ইংল্যান্ড।
তিন ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথমটিতে শুক্রবার ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২১ রানে হারায় ইংল্যান্ড।
চেস্টার-লি-স্ট্রিটে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা ইংল্যান্ড ২০ ওভারে তোলে ১৮৮ রান। অর্ধেকের বেশি রান তোলেন বাটলার একাই।
ছয়টি চার ও চারটি ছক্কায় ৫৯ বলে ৯৬ রানের ইনিংস উপহার দেন বাটলার।
রান তাড়ায় ক্যারিবিয়ানরা যেতে পারে ১৬৭ পর্যন্ত। তাদের কোনো ব্যাটসম্যান ছুঁতে পারেনি ৪০।
ক্যারিয়ারে আগের ১১ টি-টোয়েন্টিতে ডসনের উইকেট ছিল মোট ৬টি। এই ম্যাচে তার প্রাপ্তি ২০ রানে চার উইকেট।
প্রায় তিন বছর পর ইংল্যান্ডের হয়ে টি-টোয়েন্টি খেলতে নামলেন তিনি। ৩৫ বছর বয়সে ক্যারিয়ারের নতুন অধ্যায় শুরু হলো প্রথমবার ম্যান অব দা ম্যাচ হয়ে।
ফিল সল্ট ছুটিতে থাকায় ইংল্যান্ডের ইনিংস শুরু করেন জেমি স্মিথ। প্রথম ওভারে জেসন হোল্ডারের বলে তার তিন বাউন্ডারিতে শুরু হয় ম্যাচ।
পরের ওভারেই রোমারিও শেফার্ডের স্লোয়ারে বিদায়ে নেন আরেক ওপেনার বেন ডাকেট (১)। তাতে রানের গতি একটু কমে যায়। চার ওভারে রান ছিল ৩৩।
পঞ্চম ওভারে আন্দ্রে রাসেলকে দুটি ছক্কা মারেন স্মিথ, পরের ওভারে আলজারি জোসেফকে তিনটি ছক্কা ও একটি চার মারেন বাটলার।
এই দুই ওভারে ৪৫ রান নিয়ে পাওয়ার প্লেতে ৭৮ তোলে ইংল্যান্ড।
শেফার্ডের দ্বিতীয় শিকার হয়ে স্মিথ ফেরেন ২০ বলে ৩৮ রান করে। টি-টোয়েন্টি নেতৃত্বের অভিষেকে হ্যারি ব্রুক ফেরেন ৬ রানেই। তিন বছর পর টি-টোয়েন্টি খেলতে নেমে তিন রানেই থামেন টম ব্যান্টন।
দ্রুত উইকেট হারানোর বাটলারও একটু দমে যান। ২৫ বলে ফিফটি করা ব্যাটসম্যান এরপর একটু সাবধানী ব্যাটিংয়ের পথ বেছে নেন। দুইশ ছাড়ানোর পথে থাকা দল তাই শেষ পর্যন্ত অত রান করতে পারেনি।
বাটলার দ্বিতীয় সেঞ্চুরির আশা জাগিয়ে ১৯তম ওভারে এলবিডব্লিউ হয়ে যান জোসেফের বলে। জ্যাকব বেথেল ২৩ বল খেলেও ২৩ রানের বেশি করতে পারেননি।
উইকেট না পেলেও ওয়েস্ট ইন্ডিজের সেরা বোলার ছিলেন গুডাকেশ মোটি। চার ওভারে স্রেফ ২১ রান দেন এই বাঁহাতি স্পিনার, কোনো বাউন্ডারি হজম করেনি।
মোটির বোলিং থেকেই পরিষ্কার, উইকেট এ দিন স্পিনারদের পক্ষে কথা বলেছে কিছুটা, চেস্টার-লি-স্ট্রিটে যা সচরাচর দেখা যায় না।
সেই সুবিধা কাজে লাগান লিয়াম ডসন ও আদিল রাশিদ।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ যদিও প্রথম তিন ওভারে ২৭ রান তুলে ফেলে। নতুন বলে শুরু করা ডসন এরপর ব্রেক থ্রু দেন জনসন চার্লসকে (১৮) ফিরিয়ে। অভিষিক্ত পেসার ম্যাথু পটস নিজের প্রথম ওভারে ফেরান ক্যারিবিয়ানদের নতুন টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক শেই হোপকে (৩)।
এভিন লুইস অবশ্য বিপজ্জনক হয়ে উঠছিলেন। পটসকে টানা দুই বলে ছক্কা ও চারের পর বেথেলের এক ওভারে দুটি ছক্কা ও একটি চার মারে আউট হয়ে যান তিনি ওভারের শেষ বলে (২৩ বলে ৩৯)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের সম্ভাবনা তখনও ছিল। ১০ ওভারে রান ছিল তাদের ৯১।
কিন্তু ডসন দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে এক ওভারেই বিদায় করেন শেরফেন রাদারফোর্ড ও রোস্টন চেইসকে। পরের ওভারে রভম্যান পাওয়েলকেও ফিরিয়ে তিনি পূর্ণ করেন চার উইকেট। ক্যারিবিয়ানরা আর ফিরতে পারেনি ম্যাচে।
একটি ছক্কা মারলেও আন্দ্রে রাসেল ১৫ রান করতে পারেন ১৩ বল খেলে।
১০ নম্বরে জেসন হোল্ডার, এমন ব্যাটিং গভীরতা নিয়েও ক্যারিবিয়ানরা পারেনি লড়াই জমাতে।
সিরিজের পরের ম্যাচ রোববার, ব্রিস্টলে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ইংল্যান্ড: ২০ ওভারে ১৮৮/৬ (স্মিথ ৩৮, ডাকেট ১, বাটলার ৯৬, ব্রুক ৬, ব্যান্টন ৩, বেথেল ২৩*, জ্যাকস ৯*; হোল্ডার ৪-০-৩৮-০, শেফার্ড ৪-০-৩৩-২, জোসেফ ৪-০-৫১-১, রাসেল ২-০-২১-১, মোটি ৪-০-২১-০, চেইস ২-০-১৯-১)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ২০ ওভারে ১৬৭/৯ (লুইস ৩৯, চার্লস ১৮, হোপ ৩, চেইস ২৪, রাদারফোর্ড ২, পাওয়েল ১৩, রাসেল ১৫, মোটি ৩, শেফার্ড ১৬, হোল্ডার ১৬*; ডসন ৪-০-২০-৪, কার্স ৪-০-২৯-০, জ্যাকস ২-০-১৯-০, পটস ৪-০-৪৮-২, রাশিদ ৪-০-২২-১, বেথেল ২-০-২৭-১)।
ফল: ইংল্যান্ড ২১ রানে জয়ী।
সিরিজ: তিন ম্যাচ সিরিজে ইংল্যান্ড ১-০তে এগিয়ে।
ম্যান অব দা ম্যাচ: লিয়াম ডসন।