Published : 10 Jun 2025, 10:17 AM
আয়োজনের নাম ‘আ ডে উইথ দা লেজেন্ডস।’ তা কিংবদন্তিদের দেখা মিলল বটে! তারার আলোয় ঝলমল করল লন্ডনের অ্যাবি রোড স্টুডিওস। জমকালো আয়োজনে আইসিসি হল অব ফেম-এ অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়া হলো একসঙ্গে সাত তারকাকে।
একসঙ্গে সাতজন বলেই এবার আইসিসি এটিকে বলছে, ‘মেগা ইনডাকশন।’ এবার হল অব ফেম-এ জায়গা পেলেন মাহেন্দ্র সিং ধোনি, ম্যাথু হেইডেন, হাশিম আমলা, ড্যানিয়েল ভেটোরি, গ্রায়েম স্মিথ, সারাহ টেইলর ও সানা মির।
আইসিসি হল অব ফেম-এ জায়গা পাওয়া আগের তারকারা, জ্যেষ্ঠ নির্বাহী ও সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের ভোটে নির্বাচিত করা হয় এই সম্মানের পরবর্তী তারকাদের। এবারের সাতজনকে দিয়ে হল অব ফেম-এর সদস্য এখন মোট ১২২ ক্রিকেটার।
সবসময় অবশ্য এরকম বড় আয়োজন থাকে না হল অব ফেম ঘিরে। অনেক সময় ভার্চুয়াল বা ভিন্ন আয়োজনে এটা করা হয়। এবার আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের দুই দিন আগে বেশ ঘটা করেই হল অব ফেম-এ স্বাগত জানানো হলো এই সাত গ্রেটকে।
তাদেরকে নিয়ে নতুন করে বলার আছে সামান্যই। ধোনি তো ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা অধিনায়ক ও সীমিত ওভারের ক্রিকেটের সেরা ফিনিশারদের একজন। ইতিহাসের একমাত্র অধিনায়ক তিনি, সীমিত ওভারের ক্রিকেটে তিনটি আইসিসি ট্রফিই জয়ের স্বাদ পেয়েছেন যিনি।
২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তরুণ এক দল নিয়েও ভারতকে শিরোপা জয়ে নেতৃত্ব দেন তিনি। বলা হয়, ভারতের সেই জয়েই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের পালাবদলের সূচনা হয়ে যায়। চার বছর পর প্রত্যাশার সমুদ্র পাড়ি দিয়ে তার নেতৃত্ব দেশের মাঠে ওয়ানডে বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয় ভারত। ফাইনালে তার ছক্কায় দলের শিরোপা জয়ের মুহূর্তটি ক্রিকেটের চিরন্তন লোকগাঁথার অংশ হয়ে আছে। সেই ধারাবাহকিতায় ২০১৩ আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শিরোপা জয়েও নেতৃত্ব দেন তিনি।
তার সময়ে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ছিল না। তবে তার অধিনায়কত্বেই প্রথমবার আইসিসি টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে জায়গা করে নিয়েছিল ভারত।
কিপার হিসেবেও তিনি সর্বকালের সেরাদের একজন। ব্যাটিংয়ে তো সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ‘ফিনিশার’ ব্যাপারটিকে নতুন উচ্চতায় তুলে নিয়েছিলেন তিনি, এখনও যা স্বপ্নের এক মানদণ্ড।
৩৫০ ওয়ানডে খেলে ১০ হাজার ৭৭৩ রান করেছেন তিনি পঞ্চাশের বেশি গড়, ১০ সেঞ্চুরি ও ৭৩ ফিফটিতে। ৯০ টেস্ট খেলে পায় ৫ হাজার রান করেছেন ৬ সেঞ্চুরি ও ৩৩ ফিফটিতে। টি-টোয়েন্টি খেলেছেন ৯৮টি, ১২৬ স্ট্রাইক রেটে রান ১ হাজার ৬১৭। সমৃদ্ধ ক্যারিয়ারে রেকর্ড-অর্জনের অভাব নেই তার।
হাশিম আমলা একসময় ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার রান মেশিন। তবে যন্ত্রের মতো নয়, রান করেছেন তিনি নান্দনিকতার ছোঁয়ায় চোখে মায়াঞ্জন বুলিয়ে। টেস্ট ও ওয়ানডের এক নম্বর ব্যাটসম্যান ছিলেন তিনি, টি-টোয়েন্টি র্যাঙ্কিংয়েও ছিলেন সেরা দশে। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম টেস্ট ট্রিপল সেঞ্চুরিয়ানও তিনিই।
১২৪ টেস্ট খেলে ৪৬.৬৪ গড়ে ৯ হাজার ২৮২ রান তার, ১৮১ ওয়ানডে খেলে রান প্রায় পঞ্চাশ গড়ে ৮ হাজার ১১৩। টেস্টে তার সেঞ্চুরি ২৮টি, ওয়ানডেতে ২৭টি। ৪৪ টি-টোয়েন্টি খেলে ১ হাজার ২৭৭ রান করেছেন ৩৩.৬০ গড় ও ১৩২ স্ট্রাইক রেটে।
আমলার দীর্ঘদিনের সতীর্থ গ্রায়েম স্মিথকে ক্রিকেট বিশ্ব মনে রেখেছে দায়িত্বশীল ও ক্ষুরধার অধিনায়ক হিসেবে। মাত্র ২২ বছর বয়সে নেতৃত্ব পেয়ে নড়বড়ে অবস্থা থেকে দক্ষিণ আফ্রিকাকে শীর্ষে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। ১০৯ টেস্টে নেতৃত্ব দিয়ে ৫৩টিতে জয়ের স্বাদ পেয়েছেন সাবেক এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। দুটিই টেস্ট ইতিহাসের সর্বোচ্চ। অস্ট্রেলিয়ায় টেস্ট সিরিজ জয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি একাধিকবার, দলকে নিয়েছেন র্যাঙ্কিংয়ের চূড়ায়।
১১৭ টেস্ট খেলে ২৭ সেঞ্চুরিতে ৯ হাজার ২৬৫ রান করেছেন তিনি ৪৮.২৫ গড়ে। ১৯৭ ওয়ানডেতে ১০ সেঞ্চুরি ও ৪৭ ফিফটিতে রান প্রায় ৭ হাজার। অনেকেরই ধারণা, এত অল্প বয়সে নেতৃত্ব না পেলে হয়তো আরও সমৃদধ হতে পারত ব্যাটসম্যান হিসেবে তার ক্যারিয়ার।
ম্যাথু হেইডেনের টেস্ট ক্যারিয়ারের শুরুটা ছিল বিবর্ণ। ১৯৯৪ সালে অভিষেক টেস্টে বাজে পারফরম্যান্সের পর বাদ পড়ে যান। ১৯৯৬ সালের শেষ দিকে ফেরার পর এই দফায় একটি সেঞ্চুরি করলেও বাকি ১০ ইনিংসে ভালো না করায় আবার জায়গা হারান। ২০০০ সালে ফেরার পর শুরু হয় তার নতুন অধ্যায়। বিশেষ করে, ২০০১ সালের ভারত সফরে চমকপ্রদ পারফরম্যান্সের পর আর পেছন ফিরে তাকাননি। টেস্ট-ওয়ানডে দুটিতেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসের সেরা ওপেনারদের একজন হিসেবে।
১০৩ টেস্ট খেলে ৩০ সেঞ্চুরিতে ৮ হাজার ৬২৫ রান করেছেন তিনি ৫০.৭৩ গড়ে। ১৬১ ওয়ানডে খেলে ৪৩.৮০ গড়ে রান ৬ হাজার ১৩৩, সেঞ্চুরি ১০টি, ফিফটি ৩৬টি।
অস্ট্রেলিয়ার ২০০৩ ও ২০০৭ বিশ্বকাপ জয়ে ও আইসিসি টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ে লম্বা সময় রাজত্ব করায় তার ছিল বড় অবদান। ব্যাট হাতে উইকেটে তার উপস্থিতিই ছিল প্রতিপক্ষের জন্য ভীতি জাগানিয়া।
ড্যানিয়েল ভেটোরি টেস্ট ইতিহাসের সফলতম অলরাউন্ডারদের একজন। কোনো সংশয় ছাড়াই নিউ জিল্যান্ডের ইতিহাসের সেরা স্পিনার। টেস্টে ৪ হাজার রান ও ৩০০ উইকেটের ‘ডাবল’ অর্জন করা স্রেফ তিন ক্রিকেটারের একজন তিনি।
১১৩ টেস্ট খেলে তার উইকেট ৩৬২টি, রান সাড়ে চার হাজারের বেশি। ২৯৫ ওয়ানডে খেলে রান ২ হাজার ২৫৩, উইকেট ৩০৫টি। ৩৪ টি-টোয়েন্টি খেলে উইকেট ৩৮টি। দীর্ঘদিন সাফল্যের সঙ্গে দলকে নেতৃত্বও দিয়েছেন তিনি।
সারাহ টেইলর ছেলে-মেয়ে মিলিয়ে সর্বকালের সেরা কিপারদের একজন। ১৭ বছর বয়সে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেঞ্চুরি করার পর ব্যাট হাতেও দীর্ঘদিন ছিলেন ইংল্যান্ডের ভরসা। ২০০৯ সালে উইমেন’স ওয়ানডে বিশ্বকাপ ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের ‘ডাবল’ অর্জন করা দলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিলেন তিনি। ২০১৭ ওয়ানডে বিশ্বকাপ জয়েও বড় ভূমিকা রাখেন সেমি-ফাইনাল ও ফাইনালে মূল্যবান ইনিংস খেলে। তার ২৩২ ডিসমিসাল ছিল সেই সময়ে নারী ক্রিকেটের রেকর্ড।
পাকিস্তানের প্রথম নারী ক্রিকেটার হিসেবে হল অব ফেম-এ ঠাঁই করে নিয়েছেন সানা মির। ১২০ ওয়ানডে খেলে ৭২টিতে দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি, ১০৬ টি-টোয়েন্টিতে অধিনায়কত্ব করেছেন ৬৫টিতেই। তার নেতৃত্বে ২০১০ ও ২০১৪ এশিয়ান গেমসে সোনা জয় করে পাকিস্তান।
ওয়ানডেতে তার ১৫১ উইকেট এখনও পাকিস্তানের রেকর্ড। র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ বোলারও ছিলেন একসময়। টি-টোয়েন্টিতে উইকেট তার ৮৯টি। এছাড়া দুই সংস্করণ মিলিয়ে রানও করেছেন প্রায় আড়াই হাজার।