Published : 10 Jun 2025, 12:54 PM
একজন টেস্ট ইতিহাসের সফলতম ব্যাটসম্যান, আরেকজন সফলতম ফাস্ট বোলার। ইতিহাসে খোদাই হয়ে গেছে দুজনের নামই। তবে কীর্তিতে একইরকম হলেও জেমস অ্যান্ডারসন তো সাচিন টেন্ডুলকারের ভক্তও! ইংল্যান্ড-ভারত লড়াইয়ের মতো ক্রিকেট বিশ্বের এমন আকর্ষণীয় দ্বৈরথের নামকরণ নিজের নামে, সেটিও টেন্ডুলকারের সঙ্গে, এমন সম্মান পেয়ে দারুণ গর্বিত অ্যান্ডারসন।
এই লড়াইয়ের আগের নাম ছিল পাতৌদি ট্রফি। এই দুই দলেই খেলা ইফতিখার আলি খান পাতৌদি ও তার ছেলে ভারতীয় গ্রেট মানসুর আলি খান পাতৌদির নামে ছিল নামকরণ। এবারের সিজি থেকে সেটিই নাম বদলে হয়ে যাচ্ছে ‘অ্যান্ডারসন-টেন্ডুলকার ট্রফি।’
লর্ডসে অস্ট্রেলিয়া-দক্ষিণ আফ্রিকার টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের মাঝে কোনো এক সময় নতুন ট্রফি আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মোচন করবেন এই দুই কিংবদন্তি।
এর আগে লর্ডসে একটি অনুষ্ঠানের ফাঁকে ক্রিকেট ওয়েবসাইট ইএসপিএনক্রিকইনফোকে অ্যান্ডারসন বললেন, এমন সম্মান পেয়ে তিনি আপ্লুত।
“এটা বিশাল সম্মানের। এখনও পর্যন্ত ঠিক যেন বিশ্বাস হচ্ছে না আমার। সাচিন এমন একজন, বেড়ে ওঠার দিনগুলিতে যাকে আমি দারুণ সমীহ করতাম। যদিও তার বয়স নিয়ে খোঁচা দিতে চাই না! (হাসি)।”
“বেড়ে ওঠার দিনগুলিতে তাকে দেখতাম। খেলাটির সত্যিকারের কিংবদন্তি তিনি। তার সঙ্গে অনেক খেলেছিও। এ ট্রফি তাই আমার জন্য বিরাট সম্মানের এবং এর চেয়ে বেশি গর্বিত আর হতে পারতাম না।”
বয়সে টেন্ডুলকারের চেয়ে বছর দশের ছোট অ্যান্ডারসন। অর্জনেও তারা কাছাকাছি। ২০০ টেস্ট খেলা একমাত্র ক্রিকেটার টেন্ডুলকার, ১৮৮ ম্যাচ খেলে তার পরই আছে অ্যান্ডারসনের নাম। টেস্ট ইতিহাসের সর্বোচ্চ ৫১ সেঞ্চুরিতে ১৫ হাজার ৯২১ রানের রেকর্ড ভারতীয় গ্রেটের। পেস বোলার হয়েও অবিশ্বাস্য পথচলায় ৪২ বছর বয়স পর্যন্ত খেলে রেকর্ড ৭০৪ উইকেটে থেমেছেন ইংলিশ গ্রেট।
১৯৮ সালে ১৬ বছর বয়সে টেন্ডুলকারের অভিষেক থেকে শুরু করে গত বছর অ্যান্ডারসনের বিদায়, টানা প্রায় ৩৫ বছর টেস্ট ক্রিকেট রাঙিয়েছেন দুজনের কেউ না কেউ। দুজনের মুখোমুখিও হয়েছেন অনেকবার। টেস্টে ১৪ বারের দেখায় টেন্ডুলকারকে ৯ বার আউট করেছেন অ্যান্ডারসন।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছেড়ে দিলেও ল্যাঙ্কাশায়ারের হয়ে এখনও কাউন্টি ক্রিকেটে খেলছেন অ্যান্ডারসন। এটা নিয়ে মজাও করলেন চিরতরুণ পেস গ্রেট।
“সময় যেন পাখির ডানায় উড়ে যায়। এখন আমি ল্যাঙ্কাশায়ারে এমন ছেলেদের সঙ্গে খেলছি, যাদের জন্ম হয়েছে আমার ৫০ টেস্ট উইকেট হয়ে যাওয়ার পর! কিছুটা অদ্ভুত যে কীভাবে সব হচ্ছে…।”
অ্যান্ডারসন টেস্ট ক্যারিয়ারে সবচেয়ে সফল হয়েছে টেন্ডুলকারের ভারতের সঙ্গেই। ৩৯ টেস্টে ১৪৯ উইকেট তার ভারতের সঙ্গে, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে উইকেট সমান টেস্টে ১১৭টি।
২০০৫-৬ মৌসুমে মুম্বাইয়ে স্মরণীয় জয়ে তার বড় ভূমিকা ছিল, উল্লেখযোগ্য অবদান ছিল ২০১১ ও ২০১২-১৩ মৌসুমে পরপর দুটি সিরিজ জয়। তবে ভারতের বিপক্ষে কঠিন সময়ও তিনি পেয়েছেন, বিশেষ করে ভারত সফরে। ভারতের বিপক্ষে পাঁচবার সিরিজ হারের স্বাদও পেয়েছেন, চারটিই ভারত সফরে গিয়ে। ভারতের মাঠে ১৭ টেস্ট তার উইকেট স্রেফ ৪৪টি, একবারও পাননি ইনিংসে পাঁচ উইকেট।
সেই লড়াইয়ের স্মৃতি মনে পড়ল অ্যান্ডারসনের।
“দারুণ কিছু স্মৃতি তো আছেই। ভারতের বিপক্ষে খেলতে সবসময়ই পছন্দ করেছি। আমি তো বলব, অ্যাশেজের পর ইংল্যান্ড সবসময় সবচেয়ে বেশি তাকিয়ে থাকে ভারতের বিপক্ষে লড়াইয়ের জন্যই।”
“ভারতে অবশ্যই কিছু কঠিন সময় কেটেছে আমার। সেখানে সফর করা কখনোই সহজ নয়। তবে সেখানে আমরা জিতেছি, যা ছিল বিশেষ কিছু এবং ইংল্যান্ডেও দারুণ কিছু লড়াই হয়েছে আমাদের। সবসময়ই অসাধারণ সব ক্রিকেটার ছিল তাদের।”
এবার অ্যান্ডারসন-টেন্ডুলকার ট্রফির লড়াই শুরু ২০ জুন।