Published : 04 Jun 2025, 01:27 PM
ম্যাচ শেষের দুই ওভার আগে গ্যালারি থেকে নেমে মাঠের পাশে চলে এসেছিলেন এবি ডি ভিলিয়ার্স। সীমানায় ফিল্ডিংয়ে থাকা ভিরাট কোহলির সঙ্গে তার কথা হচ্ছিল চোখে চোখে, শরীরী ভাষায়। ম্যাচ শেষের আগেই দুজনের চোখেমুখে উচ্ছ্বাসের ছাপ ছিল। ম্যাচ শেষে তো এক কথায় বলা যায়, আবেগের বিস্ফোরণ!
ডি ভিলিয়ার্সের সঙ্গে কোহলির ঘনিষ্ঠতা ও বন্ধুত্বের কথা গোটা ক্রিকেট বিশ্বের জানা। তবে এই দিনটিতে দক্ষিণ আফ্রিকান গ্রেটের মাঠে থাকা শুধু কোহলির জন্যই নয়। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু ফ্র্যাঞ্চাইজিও তো তার জীবনের বড় অংশ!
তার আইপিএল অধ্যায় শেষ হয়েছে ২০২১ আসর দিয়ে। কিন্তু এখনও অনেকে বেঙ্গালুরুর ডি ভিলিয়ার্সই বলে থাকেন। এই দলের হয়ে মৌসুমের পর মৌসুম অবিশ্বাস্য সব ইনিংস তিনি উপহার দিয়েছেন, সেই পরিক্রমায় টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটকেই নিয়ে গেছেন নতুন উচ্চতায়। ১৮ বছরের অপেক্ষা শেষ হওয়ার দিনটিতে তিনি ছিলেন প্রিয় দলের সঙ্গে, প্রিয় বন্ধুর পাশে।
ম্যাচ শেষ হতেই এমনভাবে সবার সঙ্গে উদযাপন করলেন ডি ভিলিয়ার্স, যেন তিনিও ছিলেন এই টুর্নামেন্টে, যেন এই দলেরই একজন!
সেই উদযাপনে শামিল ছিলেন আরেকজনও। গ্যালারিতে সরব উপস্থিতি ছিল ক্রিস গেইলের। তার জন্য অবশ্য ম্যাচে হারানোর কিছু ছিল না। বেঙ্গালুরুর তিনি কিংবদন্তি, সাত মৌসুমে এই দলের হয়ে ব্যাটকে মুগুর বানিয়ে ছাতু করেছেন বোলারদের। তার ১৭৫ রানের ইনিংস এখনও বিশ্বরেকর্ড, ৩০ বলের সেঞ্চুরি এখনও আইপিএল রেকর্ড।
তবে আইপিএল ক্যারিয়ারের শেষ চার মৌসুম খেলেছেন পাঞ্জাব কিংসের হয়ে। গেইলের গায়ে তাই ছিল বেঙ্গালুরুর জার্সি, কিন্তু মাথায় পাঞ্জাবের পাগড়ি! ম্যাচ শেষে পাগড়ি ভুলে তিনি উল্লাসে মেতে উঠলেন জার্সির টানে।
এক পর্যায়ে কোহলি ও গোটা দলের সঙ্গে উদযাপনের মঞ্চে দেখা গেল জার্সি গায়ে ডি ভিলিয়ার্স ও গেইলকে।
ফাইনালের পর কোহলির সঙ্গে কথোপকথনে সঞ্চালক ম্যাথু হেইডেন জিজ্ঞেস করলেন ডি ভিলিয়ার্সের কথা। ট্রফি ছাড়া ক্যারিয়ার শেষ হয়েছে তার। কিন্তু এই ট্রফির ভাগিদার তাকেও করে নিলেন কোহলি।
“এই ফ্র্যাঞ্চাইজির জন্য সে (ডি ভিলিয়ার্স) যা করেছে, তা সবটুকুই অসাধারণ। ওকে আমি বলেছি… ম্যাচের আগেও বলেছিলাম, ‘এই জয় যতটা আমাদের, ততটাই তোমার। আমি চাই রাতে ম্যাচ শেষে তুমি আমাদের সঙ্গে উদযাপন করবে।’ বেঙ্গালুরর হয়ে ও যা করেছে, এতটাই স্পেশাল তা… চার বছর আগে অবসরে গিয়েছে, তারপরও এই ফ্রাঞ্চাইজির হয়ে সবচেয়ে বেশি ম্যান অব দা ম্যাচের রেকর্ড ওর। এটিই বলে দিচ্ছে, এই লিগে, এই দলে ওর প্রভার কতটা।”
“ব্যক্তিগতভাবে আমার ওপরও, আমাদের বন্ধুত্বের ওপর এবং বেঙ্গালোর শহরের কাছেও সে কতটা, তা আসলে ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। এই মঞ্চে উঠে আমাদের সবার সঙ্গে ট্রফি উঁচিয়ে ধরা ওর প্রাপ্য।”
বেঙ্গালুরুর হয়ে ১৫৭ ম্যাচ খেলে ২৩ বার ম্যান অব দা ম্যাচ হয়েছে ডি ভিলিয়ার্স, ২৮২ ম্যাচে ২২ বার কোহলি। মাত্র ৯১ ম্যাচেই ১৮ বার সেরা হয়ে এরপর আছেন গেইল। এর পরের নামটি অনেক অনেক পেছনে। ৪৬ ম্যাচে ৭ বার সেরা হয়েছেন জ্যাক ক্যালিস।
পরে ডি ভিলিয়ার্সের পাশে দাঁড়িয়ে কোহলি ফুটিয়ে তুলছিলেন ফাইনালের শেষ সময়ের আবেগটুকু।
“ওহ ম্যান, তুমি জানো… আরও বেশি স্পেশাল ছিল শেষ দুই ওভারে তোমাকে বাউন্ডারি লাইনের পাশে পাওয়া। আমি বলেছিলাম, ‘ছুটে পারাতে হবে, এত বেশি নিতে পারছি না…।’ হফ (হেইজেলউড) যখন দ্বিতীয় বলটি করল, ছক্কা হলো না, চার বলে তখন পাঁচ ছক্কা লাগে ওদের, আমি তখন স্রেফ শেষ হয়ে গিয়েছিলাম। জানি না, শেষ তিন বলে কীভাবে কান্না আটকে রেখেছি। তবে তোমার (ডি ভিলিয়ার্স) বোঝার কথা, কেমন লাগছিল আমার। তারও (গেইলের দিকে তাকিয়ে) বোঝার কথা, কেমন লাগছিল…।”
চওড়া হাসিতে কোহলিকে আলিঙ্গনে জড়ালেন গেইল। কোহলির ১৮ নম্বর জার্সির সঙ্গে মিলিয়ে দিলেন তিনি দলের ১৮ বারের চেষ্টায় প্রথম শিরোপাকে।
’১৮ বছর…!!! কী সৌভাগ্যের সংখ্যা। তুমি জানো? তোমার জন্য এত ভালো লাগছে আমার, এত খুশি লাগছে, তোমার জন্য আমি আছি। এই ফ্র্যাঞ্চাইজির জন্যও খুশি।”
কোহলি আবার বললেন, এই সাফল্যের সবটুকু অংশীদার ডি ভিলিয়ার্স ও গেইলও।
“আমার জন্য এটা আরও বেশি স্পেশাল এই দুজনের সঙ্গে ভাগাভাগি করা, কারণ নিজের সেরা সময়ে ওদের সঙ্গে খেলেছি। এজন্যই জানি, ট্রফি জয়ের কত মরিয়া চেষ্টা আমরা করেছি। বার দুয়েক আমরা এত কাছে ছিলাম (২০১১ ও ২০১৬) এবং এত ভালো দল ছিলাম! বিস্ফোরক দল ছিল। কিন্তু শেষ ধাপ পেরোতে পারিনি। আমরা সবাই তাতে বেদনায় পুড়েছি। কারণ ক্যারিয়ারের সুবর্ন সময় এই ফ্র্যাঞ্চাইজিকে দিয়েছি। অন্তরের অন্তস্থল থেকে এটা আমরা জিততে চাইছিলাম বেঙ্গালুরুর জন্য। সত্যিই বলছি, এই সাফল্য আরও ১০ গুন বেশি স্পেশাল হয়ে উঠেছে এই দুজন আমাদের পাশে থাকায়।”
“সত্যিই বলছি, এই ট্রফি যতটা আমার, ততটাই তাদের দুজনের। কারণ আমাদের যে বন্ধন, দেখতেই পাচ্ছেন… তারা যখন বেঙ্গালোরে যায়, শুধু আমাকে নয়, পরিস্কার দেখা যায়, লোকে এই দুজনকেও কতটা ভালোবাসে। তারা স্রেফ পাগল হয়ে ওঠে, কারণ তারা জানে যতদিন এখানে খেলেছে, তারা দলের জন্য হৃদয়-আত্মা উজাড় করে খেলেছে। আমার যতটা প্রাপ্য, এই ট্রফি তাদেরও ততটুকুই প্রাপ্য। আমি জানি, সবাই এখন আবেগপ্রবণ এবং সবাই নিজেদের সবটুকু দিয়েছে। এই ট্রফি সমানভাবে তাদেরও।”