Published : 17 Jun 2025, 10:10 AM
কোনো ম্যাচ ‘টাই’ হওয়া মানেই রোমাঞ্চকর কিছু। এরপর যদি সুপার ওভারেও দুই দফায় ম্যাচ ‘টাই’ হয়ে লড়াই গড়ায় তৃতীয় সুপার ওভারে! ছেলেদের পেশাদার ক্রিকেটে কোনো পর্যায়ে কোনো সংস্করণে আগে কখনও যা দেখা যায়নি, তেমন কিছুই হলো এবার গ্লাসগোতে। ক্রিকেটীয় রোমাঞ্চ ও উত্তেজনার কত রূপই তো দেখা গেছে যুগে যুগে। কিন্তু নেদারল্যান্ডস-নেপাল ম্যাচের এই নাটকীয়তায় ছাড়িয়ে গেল যেন সবকিছুকেই।
স্কটল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচটিতে সোমবার মূল ম্যাচ ‘টাই’ হওয়ার পর খেলা গড়ায় সুপার ওভারে। সেটিই হয় ‘টাই।’ নিয়ম অনুযায়ী, ম্যাচে জয়-পরাজয় নির্ধারিত না হওয়া পর্যন্ত ‘সুপার ওভার’ হতেই থাকবে। অবিশ্বাস্যভাবে দ্বিতীয় সুপার ওভারেও দুই দল শেষ করে সমতায়।
শেষ পর্যন্ত তৃতীয় সুপার ওভারে ফয়সালা হয় ফলাফলের। ম্যাচ জিতে নেয় নেদারল্যান্ডস।
৫০ ওভারের ক্রিকেট হোক বা ২০ ওভারের, ছেলেদের পেশাদার ক্রিকেটে এই প্রথমবার ম্যাচ গড়াল তৃতীয় সুপার ওভারে।
মূল ম্যাচে নেদারল্যান্ডস ২০ ওভারে তোলে ১৫২ রান। তেজা নিদারামানু ৩৫ রান করেন ৩৭ বল খেলে। বিক্রামজিৎ সিং করেন ২৯ বলে ৩০। শেষ দিকে সাকিব জুলফিকার অপরাজিত থাকেন ১২ বলে ২৫ রান করে, ওপেনিংয়ে ১১ বলে করেন মাক্স ও’ডাউড।
নেপালের তারকা লেগ স্পিনার সান্দিপ লামিছানে ৩ উইকেট শিকার করেন ১৮ রান দিয়ে।
রান তাড়ায় নেপালের ওপেনার কুশাল ভুর্তেল ২৩ বলে করেন ৩৪ রান। চারে নেমে অধিনায়ক রোহিত পাউড়েল খেলেন ৩৫ বলে ৪৮ রানের ইনিংস।
তবে কিরান থাগুনা ১৫ রান করতে খেলে ফেলেন ২৫ বল। রুপেশ সিংয়ের ১৪ বলে ১৯ দলকে এগিয়ে নেয় একটু। এরপরও শেষ দুই ওভারে ৩১ রান প্রয়োজন পড়ে তাদের।
১৯তম ওভারে নেপাল তোলে ১৫ রান। শেষ ওভারে প্রয়োজন পড়ে ১৬ রানের। কাইল ক্লেইনের ওভারের প্রথম বলে দুই রান নেন লামিছানে, দ্বিতীয় বলে সিঙ্গল। তৃতীয় বলে চার মেরে নেপালের আশা জাগিয়ে তোলেন নান্দান ইয়াদাভ।
পরের দুই বলে দুটি করে রান নেন নান্দান। শেষ বলে নেপালের জয়ের জন্য প্রয়োজন পড়ে পাঁচ রান। নান্দানের ব্যাট থেকে আসে আরেকটি চার। ম্যাচ ‘টাই।’
কে জানত, ‘টাই’ উপাখ্যানের কেবলই শুরু!
প্রথম সুপার ওভারে ড্যানিয়েল ডোরামের বলে দুটি ছক্কা ও একটি চার মারেন কুশাল ভুর্তেল। নেপাল তোলে ১৯ রান। নেদারল্যান্ডসও হাল ছাড়ে না। কারান কেসির প্রথম বলে ছক্কা মারেন মাক্স ও’ডাউড। তবে পরের তিন বল থেকে আসে স্রেফ তিন রান। পঞ্চম বল বাউন্ডারিতে পাঠান ও’ডাউড। ‘টাই’ করতে শেষ বলে প্রয়োজন ছয় রানের। ও'ডাউড ঠিক ছক্কাই মেরে দেন!
দ্বিতীয় সুপার ওভারে নেদারল্যান্ডস শুরু করে দারুণভাবে। লালিত রাজবানশির প্রথম বলে ছক্কা মারেন স্কট এডওয়ার্ডস, তৃতীয় বল ছক্কায় ওড়ান ও'ডাউড। তবে এরপর রাজবানশি ঘুরে দাঁড়ান। ডাচরা শেষ পর্যন্ত আটকে যায় ১৭ রানে।
নেপালও শুরু করে ছক্কায়। কাইল ক্লেইনের প্রথম বল উড়িয়ে দেন রোহিত পাউড়েল। তৃতীয় বলে বাউন্ডারি আদায় করেন দিপেন্দ্রা সিং আইরি। তবে চতুর্থ ও পঞ্চম ডেলিভারিতে কোনো রান দেননি ক্লেইন। আবারও ম্যাচ 'টাই' করার জন্য প্রয়োজন পড়ে ছক্কার। অবিশ্বাসের চূড়ান্ত সীমা ছাড়িয়ে ছক্কা মেরে দেন আইরি।
তৃতীয় সুপার ওভারে দেখা যায় উল্টো নাটক। অবিশ্বাস্যভাবে সুপার ওভারে কোনো রানই করতে পারেনি নেপাল। অফ স্পিনার জেবি লায়ন-ক্যাশের চার বলেই দুই উইকেট হারিয়ে ফেলে তারা। এরপর আর নাটকীয় কিছু হয়নি। লামিছানের প্রথম বলেই ছক্কা মেরে নেদারল্যান্ডসকে জিতিয়ে দেন মাইকেল লেভিট।
শেষ সুপার ওভারের নায়ক লায়ন-ক্যাশে জেতেন ম্যাচ-সেরার পুরস্কার।