Published : 03 Jun 2025, 02:09 PM
শুরুতে স্টাম্পিংয়ের সুযোগ হাতছাড়া। এরপর দ্রুত সামাল দিয়ে রান আউট। ম্যাচ গড়াল সুপার ওভারে। জয়ের উল্লাসে মেতে উঠল স্কটল্যান্ড। কিন্তু পরমুহূর্তেই বদলে গেল চিত্র। আম্পায়ারের একটি ইশারায় গল্পে এলো নাটকীয় মোড়। স্কটিশদের হতভম্ব করে জিতে গেল নেপাল। শত শত নেপাল সমর্থক মাঠে ঢুকে মেতে উঠলেন জয়োল্লাসে!
ক্রিকেটে নাটকীয়তার উত্তুঙ্গ স্পর্শ করা কত ম্যাচই তো হয়েছে যুগে যুগে। আইসিসি মেন’স ওয়ার্ল্ড কাপ ক্রিকেট লিগ ২-এর এই ম্যাচটি সেখানে যোগ করল নতুন এক মাত্রা।
ডান্ডিতে সোমবার জয়ের জন্য শেষ বলে নেপালের প্রয়োজন পড়ে এক রান। উইকেটের পতন হলে ম্যাচ ‘টাই’, খেলা গড়াতো সুপার ওভারে। স্ট্রাইকে তখন কারান কেসি, দুর্দান্ত খেলে দলকে এগিয়ে নিয়েছেন যিনি। বল হাতে মার্ক ওয়াট, শেষ ওভারটিতে যিনি দারুণ বোলিং করেছেন।
অভিজ্ঞ বাঁহাতি স্পিনার শেষ ডেলিভারিটি করলেন রাউন্ড দা উইকেটে। জোরের ওপর করা ডেলিভারি ডানহাতি ব্যাটসম্যান কারানের পায়ের পেছন দিয়ে গেল কিপারের কাছে। ফ্লিক করার চেষ্টায় ক্রিজ ছেড়ে গেলেন কারান। কিন্তু কিপার ম্যাথু ক্রস বল গ্লাভসে নিতে পারলেন না। স্টাম্পিংয়ের সুযোগ হাতছাড়া।
ততক্ষণে নন-স্ট্রাইক প্রান্তের ব্যাটসম্যান রিজান ধাকাল ছুটছেন রান নিতে। কারানও ছুটতে শুরু করেছেন। স্কটিশ কিপার ক্রস স্টাম্পিং করতে না পারলেও বল ছিল তার পাশেই। অভিজ্ঞ কিপার বল তুলে ভেঙে দিলেন স্টাম্পস। ব্যাটসম্যান রিজান ডাইভ দিয়েও সময়মতো ক্রিজ ছুঁতে পারলেন না।
ম্যাচ সুপারে ওভারে নিতে পেরে উল্লাসে মেতে উঠলেন স্কটিশরা। বোলার ওয়াট দু হাত উঁচিয়ে ধরলেন। কেউ কেউ লাফিয়ে উঠলেন খুশিতে।
কিন্তু আসল নাটক তখনও বাকি। স্কটিশদের উল্লাসের মাঝেই দুই হাত প্রসারিত করে আম্পায়ার জানালেন, ডেলিভারিটি ছিল ওয়াইড! লেগ স্টাম্পের বাইরে ছিল বল, আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত নিয়ে সংশয় নেই।
আম্পায়ারের সঙ্কেত দেখেই উদযাপন শুরু করলেন কারান। অন্য প্রান্তে রিজান তখনও জানেন না। পরে বুঝতে পেরে আনন্দে ছুটে এলেন তিনিও।
নিয়ম অনুযায়ী, আগে যেটি ঘটে, বিবেচনায় আগে নেওয়া হয় সেটিই। ওয়াইড হওয়া মাত্রই তাই ম্যাচ শেষ। রান আউট তখন আর প্রাসঙ্গিক নয়। নেপাল জিতে যায় এক উইকেটে।
ধারাভাষ্যকার শুরুতে রান আউট ধরে নিয়ে সুপার ওভার ঘোষণা করে দিয়েছিলেন। পরে বদলে যায় তার কণ্ঠের সুর, “নেপালের জয়… নেপালের জয়… নেপালে জয়… অবিস্মরণীয় এক পরিস্থিতিতে কোনো এক ভাবে তারা জিতে গেছে….!”
ডান্ডির ফোর্টহিলে এ দিন টস হেরে ব্যাটিং নামে স্কটল্যান্ড। ৭২ বল ৮০ রানের ইনিংস খেলেন তরুণ ওপেনার চার্লি টিয়ার। ফিনলে ম্যাকক্রিথ করেন ৫৫। এছাড়া অধিনায়ক রিচি বেরিংটনের ৪০ ও কিপার-ব্যাটসম্যান ম্যাথু ক্রসের ৩৯ রানের ইনিংস স্কটিশদের এনে দেয় ২৯৬ রানের পুঁজি।
এত বেশি রান তাড়ার নজির আগে ছিল না নেপালের। এ দিনও ভালো শুরুর পর পথ হারায় তারা। ৭২ রানের উদ্বোধনী জুটির পর আসিফ শেখ ফেরেন ২০ রানে। আরেক ওপেসার কুশাল ভুর্তেল ৪৪ বলে ৫৩ রানে আউট হন। থিতু হয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি ভিম শার্কি (৩৭) ও অধিনায়ক রোহিত পাউড়েল (৪০)।
এক পর্যায়ে নেপালের রান ছিল ৭ উইকেটে ১৯২।
🚨 What a match! What a thrilling finish! 🥶 🇳🇵
Nepal beat Scotland by just 1 wicket in a heart-stopping finish at ICC CWC League 2! 🥵
They chased down 297 — their highest successful ODI chase in history!😱 🔥 pic.twitter.com/XbcmEFurBf
— ICC Asia Cricket (@ICCAsiaCricket) June 2, 2025
এরপর অসাধারণ পাল্টা আক্রমণ চালান গুলশান ঝা ও কারান কেসি। অষ্টম উইকেটে ৪৪ বলে ৬০ রান যোগ করেন দুজন। গুলশান ফেরেন ৩০ বলে ৪২ রান করে। হাল না ছেড়ে দলকে জয়ের দিকে এড়িয়ে নেন কারান।
শেষ তিন ওভারে তাদের প্রয়োজন ছিল ৩৮ রানের। ৪৮তম ওভারে ওয়াটের বলে কারানের ছক্কাসহ রান আসে ১৩। পরের ওভারে অভিজ্ঞ পেসার শাফিয়ান শারিফকে এক ছক্কা দুটি চার মারেন কারান। ওভার থেকে আসে ১৮।
শেষ ওভার প্রয়োজন পড়ে কেবল ৭ রানের। কিন্তু কারানের প্রথম বলেই সান্দিপ লামিছানে আউট হয়ে যান। পরের বলটি হয় ওয়াইড। পরের বলে রান নিতে পারেননি রিজান। এরপর সিঙ্গেল নেন তিনি। স্ট্রাইক পেয়ে পরপর দুই বলে দুটি করে রান নেন কারান।
এরপর সেই শেষ বলের অবিশ্বাস্য নাটকীয়তা।
বল হাতে দুই উইকেট নেওয়ার পর ব্যাটিংয়ে ৪১ বলে ৬৫ রান করে ম্যান অব দা ম্যাচ কারান।
আম্পায়ার ওয়াইডের সিদ্ধান্ত দিতেই শত শত নেপাল সমর্থক মাঠে ঢুকে উল্লাস করতে থাকে। কারানকে ঘিরে লম্বা সময় চলতে থাকে তাদের জয়োৎসব।
এই জয়ের পরও ১৩ ম্যাচে মাত্র আট পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট তালিকায় আট দলের মধ্যে নেপাল আছে সাতে। ২০ ম্যাচে ২৮ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে যুক্তরাষ্ট্র, ২৬ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে নেদারল্যান্ডস।
এই লিগের শীর্ষ চার দল খেলবে ২০২৭ বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে।
স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকা ও জিম্বাবুয়ের পাশাপাশি ২০২৭ সালের ৩১ মার্চ তারিখে আইসিসি ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ের অন্য শীর্ষ আট দল সরাসরি খেলবে বিশ্বকাপে। র্যাঙ্কিংয়ে পরের দুটি দল খেলবে বাছাইয়ে। ১০ দলের বাছাইয়ে তাদের সঙ্গী হবে ওয়ার্ল্ড কাপ ক্রিকেট লিগ ২-এর শীর্ষ চার দল ও কোয়ালিফায়ার প্লে-অফ থেকে আসা চার দল।