Published : 25 May 2025, 11:33 AM
দেশের বাইরের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলোয় বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের উপস্থিতি বেশ কমই বলা যায়। লাহোর কালান্দার্স এবার সেখানে ব্যতিক্রম। পাকিস্তান সুপার লিগের (পিএসএল) এই দলে এখন একসঙ্গে আছেন বাংলাদেশের তিন ক্রিকেটার। টুর্নামেন্ট এখন পৌঁছে গেছে শেষ ধাপে। আর একটি ম্যাচ জিততে পারলেই শিরোপার হাসিতে আসর শেষ করতে পারবেন সাকিব আল হাসান, মেহেদী হাসান মিরাজ ও রিশাদ হোসেন।
পিএসএলের ফাইনালে রোববার বাংলাদেশের তিন ক্রিকেটারের কালান্দার্স মুখোমুখি হবে কোয়েটা গ্ল্যাডিয়েটর্সের। লাহোরে ম্যাচটি শুরু বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে আটটায়।
বাংলাদেশের তিন ক্রিকেটারের অবশ্য একসঙ্গে মাঠে নামা হয়নি এখনও। তিনজনের মধ্যে দুজনই বদলি ক্রিকেটার। ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের জের ধরে আসর স্থগিত হয়ে যাওয়ার পর পুনরায় শুরু হলে বদলি হিসেবে প্রথমে যোগ দেন সাকিব, পরে মিরাজ। নিলামেই দল পাওয়া রিশাদ শুধু ছিলেন শুরু থেকে।
তবে আসর স্থগিত হওয়ার পর তিনিও ফিরে আসেন দেশে। পরে বাংলাদেশ দলের হয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে সিরিজ খেলে আবার প্লে-অফের আগে তিনি যোগ দেন কালান্দার্সে।
প্লে-অফের আগে যোগ দেন মিরাজও। তবে এলিমিনেটর ও দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ম্যাচে একাদশে জায়গা পাননি তিনি। এখনও পর্যন্ত বিদেশের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে অভিষেকের অপেক্ষায় আছেন ২৭ বছর বয়সী অলরাউন্ডার।
সাকিব যোগ দেওয়ার পর খেলার সুযোগ পেয়েছেন দলের তিনটি ম্যাচেই। প্রায় ছয় মাস পর ক্রিকেটে ফিরে অবশ্য নিজের ছায়া হয়ে আছেন অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার। দুই ম্যাচে ব্যাট করে আউট হয়েছেন শূন্য রানে। দুটিতেই যদিও শেষ দিকে নেমে উইকেট হারিয়েছেন শট খেলার চেষ্টায়। বল হাতেও ঠিক চেনা চেহারায় নেই তিনি। বোলিং অ্যাকশন শোধরানোর পর স্বীকৃত ক্রিকেটে প্রথম খেলতে নেমে ২ ওভারে ১৮ রান দিয়ে ছিলেন উইকেটশূন্য। পরের ম্যাচে এক ওভারে চার রান দিয়ে জেমস ভিন্সের উইকেট নেওয়ার পর আর বোলিং পাননি। সবশেষ ম্যাচে তিন ওভারে ২৭ রান দিয়ে আবার উইকেটশূন্য।
৪৪৭ ম্যাচের অভিজ্ঞ ক্রিকেটারকে ফাইনালে সেরা চেহারায় চাইবে দল। ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টিতে সাকিবের ১৬তম ফাইনাল হবে এটি।
শিরোপা জয়ের স্বাদ পেয়েছেন তিনি সাতটিতে। এর চারটি দেশের বাইরে, দুবার আইপিএলে, দুবার ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে।
দেশের বাইরের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে প্রথম খেলতে গিয়েই বাজিমাত করেছেন রিশাদ। প্রথম তিন ম্যাচেই আট উইকেট নিয়ে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারির স্বীকৃতি ‘ফাজাল মেহমুদ ক্যাপ’ ছিল তার মাথায়। পরের দুই ম্যাচে তিনি নিতে পরেন এক উইকেট। কিছু ম্যাচ বাইরে বসে থাকতে হয় দলীয় সমন্বয়ের কারণে। পরে তো দেশে ফিরেই আসেন।
দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ম্যাচে আবার মাঠে নেমে তিন উইকেট নিয়ে ভূমিকা রাখেন দলকে ফাইনালে তুলতে। সব মিলিয়ে ৬ ম্যাচেই ১২ উইকেট নিয়েছেন ২২ বছর বয়সী লেগ স্পিনার। ফাইনালেও তার কবজির মোচড়ের ওপর দলের সম্ভাবনা নির্ভর করবে অনেকটা।
ফাইনালে কালান্দার্সের কাজটা অবশ্য সহজ হবে না। তাদের প্রতিপক্ষ কোয়েটা গ্ল্যাডিয়েটর্স দুর্দান্ত ফর্মে আছে। প্রাথমিক পর্বে তারা শীর্ষে ছিল, প্রথম কোয়ালিফায়ারেও ইসলামাবাদ ইউনাইটেডকে পাত্তা না দিয়ে জায়গা করে নেয় ফাইনালে। সবশেষ সাত ম্যাচ টানা জিতেছে তারা। সাউদ শাকিলের দারুণ নেতৃত্বের পাশাপাশি ব্যাটিং লাইন আপে আছে রাইলি রুশো, ফিন অ্যালেনের মতো আগ্রাসী ব্যাটসম্যানরা।
কোয়ালিফায়ার ম্যাচে দুই শ্রীলঙ্কান আভিশকা ফার্নান্দো ও দিনেশ চান্দিমাল কার্যকর ভূমিকা রাখেন, অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে ম্যাচের সেরা হন ফাহিম আশরাফ। তরুণ হাসান নাওয়াজ খেলতে পারেন ম্যাচ জেতানো ইনিংস। বল হাতে ফর্মে আছেন মোহাম্মাদ আমির, আবরার আহমেদরা।
শাহিন শাহ আফ্রিদির নেতৃত্বে কালান্দার্সের শক্তিও অবশ্য কম নয়। ফাখার জামান জ্বলে উঠলে একাই হয়ে উঠতে পারেন ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারক। বদলি হিসেবে যোগ দিয়ে দারুণ খেলছেন কুসাল পেরেরা। আব্দুল্লাহ শাফিক, মোহাম্মাদ নাঈমরাও রাখেন পারেন অবদান। বোলিংয়ে আফ্রিদির সঙ্গে আছেন অভিজ্ঞ হারিস রউফ ও বিপজ্জনক জামান খান। শেষ দিকে সুযোগ পাওয়া সালমান মির্জাও দারুণ বোলিং করছেন।
কালান্দার্সের এটি চতুর্থ ফাইনাল। ২০২০ আসরে ফাইনাল হারার পর শিরোপা জয় করে তারা টানা ২০২২ ও ২০২৩ আসরে। গ্ল্যাডিয়েটর্সও ফাইনাল খেলবে এই নিয়ে চারবার। তবে সবশেষটি ছিল ২০১৯ আসরে, যেবার তারা চ্যাম্পিয়ন হয়। ২০১৬ ও ২০১৭ আসরে তারা ছিল রানার্স আপ।