Published : 30 May 2025, 10:30 PM
বিদায়ী বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদের প্রটোকল ছিল বেশ চোখে পড়ার মতো ও চাকচিক্যময়। আগের সভাপতি নাজমুল হাসান তো প্রভাবশালী সংসদ সদস্য ছিলেন। প্রটোকল তারও ছিল। নতুন সভাপতিরও কি এমন কিছু থাকবে? প্রশ্ন শুনে আমিনুল ইসলাম বুলবুল মুচকি হাসিতে বললেন, “আমাকে একজন সাংবাদিক কালকে বলেছেন, আপনি সবচেয়ে গরিব সভাপতি, যতজন সভাপতি বিসিবির ছিল। এই মুহূর্তে আমার কাছে কিছু নেই, কিছু করিও না। খুব সাধারণ জীবন কাটানোর চেষ্টা করি।”
এটুকু বলে নতুন সভাপতি যোগ করলেন, “চেষ্টা করব আমার যে কাজ, সেই কাজটায় ফোকাস করতে, অন্য কিছু না করতে।” প্রশ্ন হচ্ছে, নিজের কাজ করার কতটুকু সময় তিনি পাবেন?
বিসিবি সভাপতি হওয়ার আগের দিন যখন তার নাম নিয়ে আলোচনা তুমুল, তখন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম ও অন্য আরও বেশ কয়েক সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকারে আমিনুল বলেছিলেন, বিসিবির আগামী নির্বাচন পর্যন্তই দায়িত্বে থাকতে চান তিনি। দীর্ঘমেয়াদি কাজ করার কোনো ইচ্ছে তার নেই। নির্বাচন হতে হবে আগামী অক্টোবরের মধ্যেই। আমিনুলের সামনে তাই তিন-চার মাসের বেশি সময় নেই।
সভাপতির দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম সংবাদ সম্মেলনে অবশ্য একটু বদলে গেল তার কথা। মেয়াদের প্রশ্নে শুরুতে বললেন, সুনির্দিষ্ট কিছু নেই।
“আজকে আমাকে নির্বাচন করা হয়েছে বিসিবি সভাপতি হিসেবে তিন মাসের জন্য নয়। আমি নির্বাচিত হয়েছি আজকে। আগে আমি চাকরি করতাম আইসিসিতে এবং তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ যে, সেই দায়িত্বে ব্যবস্থাপনার অনেক কিছু কাজ শিখেছি এবং তারা খুব উৎসাহী হয়ে বলেছে, ‘তোমার অবশ্যই দেশের জন্য করা উচিত।’ আইসিসির কাছে আমার দুই মাস বা তিন মাসের ব্যাপার নেই। আমার প্রয়োজন অনুযায়ী এখানে কাজ করব এবং অবশ্যই কোনো টাইমফ্রেম নেই এখানে।”
সভাপতির দায়িত্ব নেওয়ার আগে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেছিলেন, বিসিবির নির্বাচন শেষ হলে তিনি আইসিসির চাকরিতে ফিরে যাবেন। এতদিন এশিয়া অঞ্চলের ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার হিসেব কাজ করলেও পরে আরও ভালো কোনো দায়িত্ব তাকে দেওয়া হবে বলে তকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, এটিও বলেছিলেন।
এখন যখন বলছেন ‘টাইমফ্রেম’ নেই, তখন প্রশ্নও কিছু তো উঠে যায়। আমিনুল তখন ব্যাখ্যা করলেন মেয়াদ নিয়ে তার বক্তব্যের।
“টাইমফ্রেমটা এজন্য বলছি না যে, লম্বা সময়ের জন্য এখানে আসিনি, এটা আমি বলতে পারি। এজন্য বলছি সুনিদিূষ্ট সময় নেই। আমার অন্য এজেন্ডা আছে, আমি যেহেতু ক্রিকেট উন্নয়নে কাজ করি, সেটা চালিয়ে যাব। এটাও একটা শর্ট টার্ম অ্যাসাইনমেন্ট হিসেবে নিয়েছি। এর বেশি কিছু বলতে পারছি না।”
তারপরও কিছুটা ধোঁয়াশা রয়েই গেল সম্ভাব্য মেয়াদ নিয়ে। যে কোনো অবস্থায় তিনি কি এই তিন-চার মাসই থাকবেন নাকি নিজের কাজে সন্তুষ্ট হলে ও অন্য সবকিছু পক্ষে পেলে বিসিবি নির্বাচন করে লম্বা সময় থাকতে চাইবেন? তিনি এবার আরেকটু খোলাসা করলেন ভাবনা।
“প্রথমে আমি দেখব। আমি পেশাদার লোক। ক্রিকেট আমার পেশা। একসময় খেলতাম, এরপর ক্রিকেট উন্নয়নে কাজ করছি। এটা আমি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি। যদি আমি ভালো করি, এই কাজটিই হয়তো আইসিসিতে গিয়ে করতে পারি, বা এখানে যদি বাড়ানো হয়… জানি না এখানে কী হবে… তবে আপাতত আমার লক্ষ্য শর্ট টার্মে ভালো করে কাজ করা।”
আগের প্রায় সব বিসিবি সভাপতির মতো বড় ব্যবসায়ী, সংসদ সদস্য বা রাজনীতিবিদ নন আমিনুল। আইসিসির চাকরিই ছিল তার জীবিকা। বিসিবি সভাপতির দায়িত্বে কোনো সম্মানী বা পারিশ্রমিক নেই। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার আগে কিছু সংবাদমাধ্যমে এসেছিল, সম্মানী নিয়ে তিনি প্রধান নির্বাহী হতে চান বা সভাপতির দায়িত্বে সম্মানী চাইতে পারেন। তবে সেসব খবর উড়িয়ে দিলেন নতুন সভাপতি।
“আমার সঙ্গে মাননীয় উপদেষ্টার কিন্তু সভাপতি হওয়া নিয়েও কথা হয়নি। আমাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে কাজ করতে চাই কি না। আমি এক বাক্যে ‘হ্যাঁ’ বলেছি। আমি এখানে সভাপতি হওয়ার জন্য আসিনি। একটা পরিক্রমার মাধ্যমে সভাপতি হয়ে গিয়েছি।”
“আমি বাংলাদেশের ক্রিকেটকে সার্ভ করতে চাই। এখন যে জায়গায় আছি, সেখান থেকে সার্ভ করতে চাই। তবে এটা ঠিক, আমার সঙ্গে বাংলাদেশ ক্রিকেটের কখনও কারও কথা হয়নি প্রধান নির্বাহী হওয়া নিয়ে বা কোনো সংখ্যা (পারিশ্রমিক নিয়ে)।”