Published : 27 May 2025, 05:52 PM
রৌদ্রোজ্জ্বল সকালে বাংলাদেশ ইমার্জিং দলের ড্রেসিং রুমে শঙ্কার কালো মেঘ জমালেন আন্দিলে মোগাকানে। প্রোটিয়া পেসারের বোলিং তোপে পঞ্চাশের আগে চার উইকেট হারিয়ে ফেলল স্বাগতিক দল। একটু পর আরেকটি উইকেটের পতনে আরও ঘনীভূত হলো আঁধার। তবে আলো হয়ে এলেন ইফতেখার হোসেন।
বিপর্যয়ের মধ্যে শক্ত হাতে প্রতিরোধ গড়লেন ইফতেখার। সঙ্গী পেয়ে গেলেন মইন খানকে। ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে দুজন মিলে গড়লেন বড়লেন জুটি।
ধৈর্য ও দায়িত্বশীলতার ছাপ রেখে তিন অঙ্কের স্বাদ পেলেন ইফতেখার। সম্ভাবনা জাগিয়েও অল্পের জন্য পেলেন না মইন।
মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় চার দিনের ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকা ইমার্জিং দলের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ ইমার্জিং দলের সংগ্রহ ৭ উইকেটে ২৪২ রান।
প্রায় সাড়ে ছয় ঘণ্টা ব্যাটিং করে ২৯১ বলে ১০৯ রানের ইনিংস খেলেন আগের ম্যাচে একাদশে জায়গা না পাওয়া ইফতেখার। ৯১ রানে আউট হন মইন।
দিনের ৮৯ ওভারের মধ্যে এই দুজনের জুটিই ছিল প্রায় ৫৭ ওভার! জুটিতে আসে ৩৪৫ বলে ১৭৯ রান।
অথচ স্বাগতিকদের দিনের শুরুটা ছিল পুরোপুরি হতাশায় ঘেরা। টস জিতে ব্যাটিং নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক শাহাদাত হোসেন। কিন্তু অধিনায়কের সিদ্ধান্তের যথার্থতা প্রমাণ করতে পারেননি শুরুর ব্যাটসম্যানরা।
চতুর্থ ওভারে আউট হন আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান আশিকুর রহমান শিবলি। ১৩ বল খেলেও রানের খাতা খুলতে পারেননি তিনি।
শুরুর ধাক্কা সামলে চৌধুরি মোহাম্মদ রিজওয়ানকে নিয়ে প্রতিরোধের চেষ্টা করেন ইফতেখার। প্রথম ঘণ্টায় আর উইকেট হারায়নি স্বাগতিকরা।
১৭তম ওভারে আক্রমণে এসে দ্বিতীয় বলেই রিজওয়ানকে ফেরান মোগাকানে। প্রথম স্লিপে দুর্দান্ত ক্যাচ নেন মুহাম্মাদ মানাক। ৩৩ রানে ভাঙে দ্বিতীয় উইকেট জুটি।
মোগাকানের পরের তিন ওভারে ড্রেসিং রুমের পথ ধরেন শাহাদাত হোসেন ও আরিফুল ইসলাম। হাফ ভলি বল সোজা ফিল্ডারের হাতে ক্যাচ দেন শাহাদাত। ভেতরে ঢোকা ডেলিভারিতে এলবিডব্লিউ হন আরিফুল।
দারুণ শুরু করা মোগাকানের বোলিং বিশ্লেষণ তখন দাঁড়ায় ৪-৩-১-৩!
মধ্যাহ্ন বিরতির পর দ্বিতীয় ওভারে অহেতুক বড় শটের চেষ্টায় শর্ট মিড উইকেটে ক্যাচ দেন প্রিতম। মাত্র ৫৮ রানে ৫ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
আউট হওয়া পাঁচ ব্যাটসম্যানের কেউই দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেননি।
ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে দলকে বিপদ থেকে উদ্ধার করেন ইফতেখার ও মইন। বাড়তি কিছুর চেষ্টা না করে পুরোপুরি টেস্ট মেজাজে এগোতে থাকেন ইফতেখার। কোবানি মোকোয়েনার বলে বাউন্ডারি মেরে ১৩৬ বলে ফিফটি করেন বাঁহাতি ওপেনার।
অন্য প্রান্তে মইন করেন ইতিবাচক শুরু। তৃতীয় বলে তিনি মারেন প্রথম বাউন্ডারি। তিন বল পর মারেন আরেকটি চার। বাজে বল পেলে প্রাপ্য সাজা দিতে থাকেন ঘরোয়া ক্রিকেটের অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার।
ভাগ্যের ছোঁয়াও পান মইন। ৩৩ রানে পয়েন্ট ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যান তিনি। দ্বিতীয় সেশনে উইকেট হারায়নি বাংলাদেশ। চা-বিরতির পর ফিরে ৮২ বলে ফিফটি করেন ২৯ বছর বয়সী অলরাউন্ডার, ততে চার ছিল ১১টি!
পঞ্চাশ ছুঁয়ে একই ছন্দে তিন অঙ্কের দিকে এগোতে থাকেন দুজন। নব্বই পেরিয়ে মানাকের লেগ স্পিনে ইফতেখারের ব্যাটের বাইরের কানায় লাগে বল। তবে কোনো স্লিপ না থাকায় বেঁচে যান ২২ বছর বয়সী ওপেনার।
পরে জর্জ-ফন হিয়ারডিনের বলে বাউন্ডারি মেরে সেঞ্চুরিতে পৌঁছান ইফতেখার।
কিন্তু মইন পারেননি সম্ভাবনার পূর্ণতা দিতে। দিনের শেষ দিকে ডিয়ান ফরেস্টারের বলে খোঁচা মেরে কট বিহাইন্ড হন তিনি। ১৫৯ বলের ইনিংসে মারেন ১৫টি চার।
সঙ্গীকে হারানোর পর ইফতেখারও টিকতে পারেননি। দিনের খেলা শেষ হওয়ার মাত্র ১০ বল বাকি থাকতে শেপো এনটুলির বলে স্লিপে ধরা পড়েন বাঁহাতি ওপেনার।
বাকি সময়ে আর বিপদ ঘটতে দেননি রকিবুল হাসান ও রিপন মন্ডল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর (প্রথম দিন শেষে):
বাংলাদেশ ইমার্জিং ১ম ইনিংস: ৮৯ ওভারে ২৪২/৭ (শিবলি ০, ইফতেখার ১০৯, রিজওয়ান ৭, শাহাদাত ১, আরিফুল ০, প্রিতম ২, মইন ৯১, রকিবুল ২*, রিপন ০*; ফরেস্টার ১৪-৫-২১-১, মোকোয়েনা ৯-০-৪৬-১, পিল্লে ৬-১-২৪-০, এনটুলি ৩১-৮-৬-৩২, মোগাকানে ১২-৫-২০-৩, ফন হিয়ার্ডিন ১২-২-৩৮-০, মানাক ৫-০-২৪-০)